উড়তে গিয়ে ভড়কে গিয়েছিলেন রোমান

তিন সোনা জিতে তির-ধনুকের মিশন শেষ। মনে জাগল পোখারার আকাশে ওড়ার শখ। কর্মকর্তাদের না জানিয়ে দলবল নিয়ে চুপিসারে বেরিয়ে পড়লেন রোমান সানা। কিন্তু প্যারাগ্লাইডিংয়ের রোমাঞ্চ উবে গেল আকাশে উড়তেই। মাথা ঘুরতে লাগল বনবন করে। ধরাতলে নেমে আরেক বিপত্তি। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলেন না। পড়েও গেলেন। দেশসেরা তিরন্দাজকে বেকায়দায় পেয়ে সতীর্থরা মেতে উঠলেন হাসি-ঠাট্টায়।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2020, 05:10 AM
Updated : 9 May 2020, 05:12 AM

করোনাভাইরাস প্রকোপের এই ঘরবন্দি সময়ে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে (এসএ গেমস) সোনা জয়ী অ্যাথলেটরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শোনাচ্ছেন তাদের নানা মজার অভিজ্ঞতা। নেপালের কাঠমান্ডু-পোখারার গত এসএ গেমসে আর্চারিতে দলীয় ও ব্যক্তিগত মিলিয়ে তিন ইভেন্টে সোনা জয়ী রোমান শোনালেন প্যারাগ্লাইডিংয়ে গিয়ে মুখোমুখি হওয়া ব্রিবতকর অভিজ্ঞতার গল্প।

নেপালের আসরে প্রথমবারের মতো আর্চারি অন্তর্ভুক্ত হয়। এ ইভেন্টে ভারতের আর্চাররা অংশ না নেওয়ায় রোমানদের পথটা মসৃণ হয়ে যায় আরও। রিকার্ভ ও কম্পাউন্ড মিলিয়ে ১০ ইভেন্টের সবগুলোর সোনা জিতে বাজিমাত করে বাংলাদেশ। সোহেল রানা, ইতি খাতুন ও রোমান পান হ্যাটট্রিকের স্বাদ।

আর্চারির দুর্দান্ত সাফল্যে এসএ গেমসে দেশে ও দেশের বাইরের সেরা অর্জনের গল্প নতুন করে লিখে নেয় বাংলাদেশ। ১৯টি সোনা জিতে ছাপিয়ে যায় ২০১০ সালে নিজেদের মাঠে পাওয়া ১৮টি সোনার সাফল্য। মাদ্রাজে ১৯৯৫ সালের আসরে ৭টি সোনা জয় ছিল দেশের বাইরের এসএ গেমসে বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ অর্জন।

প্রতিযোগিতাটির আগের ১২ আসরে কখনও কোনো ইভেন্টে শতভাগ সাফল্য পায়নি বাংলাদেশ। গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে হওয়া ত্রয়োদশ আসরে আর্চারিতে সে গল্পও লেখা হয় রোমান-ইতি-সোহেলদের হাত ধরে।

কিন্তু তির-ধনুক হাতে প্রবল প্রতাপ দেখিয়ে রোমান বিব্রত হন আকাশে ওড়ার সাহসিকতার পরীক্ষায়। এখনও যা মনে পড়লে হাসি পায় তার।

“সবগুলো ইভেন্টের সোনা জিতে আমরা তো উড়ছিলাম। হুট করে মনে হলো এই ফাঁকে প্যারাগ্লাইডিং করে আসি। যখন আমরা প্যারাগ্লাইডিংয়ে যাই, তখন দলের বাইরে কেউ জানত না। যখন একটু একটু করে উপরে উঠতে লাগলাম, বেশ ভালো লাগছিল। পাহাড়, মেঘ অসাধারণ দৃশ্য। এই ভালোলাগা আসলে বলে বোঝাতে পারব না।”

“কিন্তু ঝামেলা শুরু হয়ে গেলো বেশ খানিকটা উপরে ওঠার পর যখন চক্কর দিতে বললাম। লোকটা কয়েকটা উল্টা পাল্টা চক্কর দিল। আমার অবস্থা হয়ে গেল খারাপ। বনবন করে মাথা ঘোরাতে লাগল। আমার তো মনে হচ্ছিল বিশ্রী একটা কাণ্ড হয়েই যাবে আজ।”

রোমানের জন্য আরও বাজে অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছিল নেমে আসার পর।

“মাটিতে নামার সময় সবাই জাম্প করে বেশ ভালোভাবে নামল। কিন্তু আমি নেমে আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। মাথার ভিতর এমন চক্কর দিচ্ছে….শেষ পর্যন্ত ধপ করে পড়ে গেলাম। দলের সবাই আমাকে সাহসী হিসেবে জানে। তাই আমার বেগতিক অবস্থা দেখে সবাই হো হো করে হাসা শুরু করে দিল। আমি যত বিব্রত হই, ওরা তত মজা করে। বলে, ‘গোল্ডেন বয়ের তাহলে এই সাহস!”

হোটেলে ফিরেও সতীর্থরা পিছু ছাড়েনি। গত বছর নেদারল্যান্ডসে ওয়ার্ল্ড আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জেতা রোমান হাসতে হাসতে জানালেন, প্যারাগ্লাইডিংয়ের ওই ঘটনা শুনে তাকে নিয়ে রসিকতা করেছিলেন জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডেরিখও।

“সারাদিন আমাকে সবাই মিলে খেপাতে থাকল। আমার অবস্থা এমন যে, ওদের কাছ থেকে পালাতে পারলেই বাঁচি। প্যারাগ্লাইডিংয়ের ওই ঘটনা শুনে কোচ মার্টিন চলে এলো রুমে। শুরুতে সে বিশ্বাস করেনি আমি এতটা ভড়কে গিয়েছিলাম। কিন্তু রুমে এসে আমার অবস্থা দেখে কোচও আমাকে ‘ব্রেভম্যান’ বলে হাসি-ঠাট্টা শুরু করে দিল।”

“ওই দিন বিকালে সবাই পাহাড়ী রাস্তায় সাইক্লিংয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শরীরটা খারাপ থাকায় আমি আর যেতে পারিনি। শুয়ে ছিলাম। এখনও প্যারাগ্লাইডিংয়ের ওই ঘটনা আমার পিছু ছাড়েনি। সুযোগ পেলে এখনও সবাই ওই প্রসঙ্গ টেনে আমাকে সাহসী বলে খেপায়।”