যুক্তরাষ্ট্রের ঘুষের অভিযোগ উড়িয়ে দিল কাতার

২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক হতে ঘুষ দিয়েছিল কাতার, যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের আনা এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে দেশটি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 April 2020, 09:13 AM
Updated : 8 April 2020, 09:25 AM

একই অভিযোগ আছে ২০১৮ বিশ্বকাপের আয়োজক রাশিয়ার বিরুদ্ধেও। তবে তারা পাত্তাই দিচ্ছে না আয়োজক নির্বাচনের ভোটে দুর্নীতির অভিযোগকে।

২০১০ সালের ভোটে ২০১৮ বিশ্বকাপের স্বাগতিক স্বত্ব পায় রাশিয়া এবং ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক নির্বাচিত হয় কাতার। তবে এর কিছুদিন পর থেকেই ওই ভোটভুটি নিয়ে সন্দেহ ও দুর্নীতির গুঞ্জন শুরু হয়। গত সোমবার প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনে যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট।

প্রসিকিউটরদের মতে, রাশিয়া ও কাতারের প্রতিনিধিরা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তাদের পক্ষে ভোট আদায়ের জন্য ফিফা নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছিল। কাতার বিশ্বকাপের আয়োজক কমিটি (এসসি) এই অভিযোগ জোরালোভাবে উড়িয়ে দিয়েছে।

“বছরের পর বছর ধরে ভুয়া দাবি তোলা হলেও কাতার অনৈতিকভাবে ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজনের স্বত্ব পেয়েছে বা ফিফার কঠোর বিডিংয়ের নিয়ম ভাঙার ফন্দি করেছে, এমন কোনো প্রমাণ কখনও হাজির করা হয়নি।”

২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক নির্ধারণে সকল নিয়ম দৃঢ়ভাবে মানা হয়েছে জানিয়ে কাতারের সুপ্রিম কমিটি ফর ডেলিভারি অ্যান্ড লেগাসি (এসসি) জানিয়েছে, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং এসব কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে।

এক বিবৃতিতে ফিফা জানিয়েছে, সব ‘অপরাধমূলক অন্যায়ের অভিযোগ’ তদন্তের পক্ষে তারা। 

“এই অভিযোগপত্রে যে ফুটবল কর্মকর্তাদের কথা বলা হয়েছে, ফিফা এথিকস কমিটি আগেই তাদের আজীবন নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন মেয়াদে নিষিদ্ধ করেছে।”

এর আগে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে আসা অভিযোগ নিয়ে ফিফা দৃঢ়ভাবে জানিয়েছিল, এই দুই বিশ্বকাপের আয়োজক নির্বাচনে কোনোরকম দুর্নীতি হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই অভিযোগ কাতার বিশ্বকাপকে ঘিরে প্রশ্নগুলিকে আরও উচ্চকিত করছে। ২০২২ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে হওয়ার কথা রয়েছে আগামী বিশ্বকাপ।

২০১৮ বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার দৌড়ে রাশিয়ার সঙ্গে ছিল ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম-নেদারল্যান্ডস ও পর্তুগাল-স্পেন। কাতার ছাড়াও ২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজন করতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।  

২০১৮ সালে সফল আয়োজনটাই মনে রাখতে বলছে রাশিয়া। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানালেন, যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ নিয়ে ভাবছেই না তারা।

“সম্পূর্ণ আইনগতভাবেই বিশ্বকাপ আয়োজনের স্বত্ব পেয়েছিল রাশিয়া। এখানে কোনো ঘুষ দেওয়া-নেওয়ার সুযোগ নেই। আমি এটা প্রত্যাখ্যান করছি। রাশিয়া ইতিহাসের সেরা বিশ্বকাপ আয়োজন করেছে, আমরা এর জন্য গর্বিত।”

ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস এর অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৮ বিশ্বকাপের স্বত্ব নির্বাচনে রাশিয়ার পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য ওই সময়ের ফিফা সহ-সভাপতি জ্যাক ওয়ার্নারকে বিভিন্ন শেল কোম্পানির মাধ্যমে ৫০ লাখ ডলার ঘুষ দেওয়া হয়েছিল।

দীর্ঘদিন ধরে চলা যুক্তরাষ্ট্রের তদন্তে ওয়ার্নারের বিরুদ্ধে নানা সময়ে আরও অনেকগুলো অভিযোগ উঠেছে। নিজের জন্মভূমি ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে দুর্নীতির অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তিনি। এর আগে ২০১০ বিশ্বকাপ দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজনের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্যও ওয়ার্নারকে এক কোটি ডলার ঘুষ দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল।

শুরু থেকেই অবশ্য তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন ৭৭ বছর বয়সী এই ফুটবল কর্মকর্তা। ওইসময় উত্তর ও মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের ফুটবল সংস্থা কনকাকাফের প্রেসিডেন্ট ছিলেন ওয়ার্নার।

ফিফা-২০১০ নির্বাহী কমিটির দক্ষিণ আমেরিকার তিন সদস্যের বিরুদ্ধেও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে। ব্রাজিলের রিকার্দো তেইসেইরা, প্যারাগুয়ের নিকোলাস লেওস ও এই ষড়যন্ত্রে সাহায্যকারী (নাম অজানা) ২০২২ বিশ্বকাপের স্বাগতিক নির্বাচনে কাতারকে ভোট দেওয়ার বিনিময়ে নাকি ঘুষ নিয়েছিলেন।   

যুক্তরাষ্ট্রের দুর্নীতি মামলায় লড়াই করতে থাকা লেওস গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুযারি মারা যান। আর তেইসেইরা ২০০৬ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে বিভিন্ন ফুটবল প্রতিযোগিতার মার্কেটিং ও মিডিয়া স্বত্ব পাইয়ে দেওয়ার জন্য ঘুষ নেওয়ার দায়ে আজীবন নিষিদ্ধ হয়েছেন।

২০১৪ সালে ওই সময়ের সভাপতি জেপ ব্লাটারের সময়ে ফিফা রাশিয়া ও কাতারকে বিশ্বকাপের আয়োজক করা নিয়ে সব রকমের দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছিল।

২০১৫ সালের ২৭ মে জুরিখে দুর্নীতির অভিযোগে ফিফার সাত কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হন। তার দুদিন পর ব্লাটার পঞ্চমবারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হলেও কদিন পরেই ফিফাকে ঘিরে ঘুষ কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু হওয়ায় পদত্যাগের ঘোষণা দেন ৭৯ বছর বয়সী ব্লাটার। পরে সেসবে জড়িত থাকার অভিযোগে নিষিদ্ধ হন ১৬ বছরের বেশি সংস্থাটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করা এই কর্মকর্তা।