পুলিশের পোস্টের দেয়াল পোড় খাওয়া সাইফুল

করোনাভাইরাসের ছোবলে পুরোপুরি ষষ্ঠ রাউন্ডও শেষ হতে পারেনি। স্থগিত হয়ে আছে প্রিমিয়ার লিগ। এই অল্প সময়ের মধ্যে দ্যুতি ছড়িয়েছেন কয়েকজন তরুণ। ইঙ্গিত দিয়েছেন পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসার। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর পাঠকদের জন্য আজ থাকছে বাংলাদেশ পুলিশ এফসির ২২ বছর বয়সী গোলরক্ষক সাইফুল ইসলাম সাইফের গল্প।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2020, 05:09 AM
Updated : 4 April 2020, 07:10 AM

মেধাবী, আবেগী আর স্টাইলিশ সাইফ দেখেছেন জীবন কঠিন সব বাঁক। বাবা-মাকে হারানো এই তরুণেরে ক্যারিয়ার থেকে দেড় বছর হারিয়ে গেছে পারিবারিক সমস্যার ঘোরপাকে। কিন্তু হারিয়ে যাননি সাইফ। সম্ভাবনার আলো জ্বেলে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। প্রিমিয়ার লিগের নবাগত দল বাংলাদেশ পুলিশ এফসির গোলপোস্ট সামলাচ্ছেন বিশ্বস্ত দেয়াল হয়ে।

লিগ পাঁচ ম্যাচে পুলিশ গোল খেয়েছে ৭টি; ১৩ দলের তালিকায় যা তৃতীয় সর্বনিম্ন। এর মধ্যে চারটিতে পোস্ট আগলেছেন সাইফ। লিগ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসকে ১-১ ড্রয়ে রুখে দেওয়া ম্যাচের অন্যতম নায়কও শ্রীমঙ্গল থেকে উঠে আসা এই গোলরক্ষক। ওই ম্যাচে কিংসের তারকা ফরোয়ার্ড দেনিয়েল কলিন্দ্রেস সোলেরা, বখতিয়ার দুইশবেকভদের একাধিক চেষ্টা ঠেকিয়ে দিয়েছেন দারুণ দক্ষতায়।

লিগ শুরুর বিপক্ষে আবাহনীর বিপক্ষে  হার ঠেকাতে পারেননি। তবে বেশ কয়েকটি সেভ করে ব্যবধান বড় হতে দেননি সাইফ। অথচ তিনি ছিলেন না প্রথম পছন্দের গোলরক্ষক! অভিজ্ঞ আরিফুজ্জামান হিমেলের অসুস্থতায় পাওয়া সুযোগ দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে প্রধান কোচ নিকোলা ভিতোরোভিচের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন।

পুলিশের গোলকিপিং কোচ শাহ আলম টুটুল লম্বা সময় ধরে দেখছেন সাইফকে। ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি গড়ন, পেটানো শরীর, গতি, শুটিং এবং পরিশ্রমী মানসিকতা-আদর্শ গোলরক্ষকের জন্য দরকারি প্রায় সবই পেয়েছেন এই শিষ্যের মধ্যে। সাইফকে পরিপূর্ণ ফুটবলার হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য তার।

“ওর ইন অ্যান্ড আউট সাইড শুটিং, পাঞ্চিং, ম্যাচ রিডিং ভালো। লং সেট পিসগুলো নিতে পারে। সেট পিস ফেরাতেও দক্ষ। পরিশ্রমী। ওকে এমনভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, যেন ডি-বক্সের বাইরে থেকে, এমনকি প্রয়োজনে মাঝমাঠ থেকেও ফ্রি-কিক নিতে পারে।”

“উচ্চতা মোটামুটি ভালো। ফিটনেস লেভেল শতভাগ নয়। শরীরের ওপরের অংশটা ভারী। এখন এগুলো ঠিক করতে পারি; যদি ওর বুদ্ধিমত্তা আরেকটু পরিপক্ক হয়, তাহলে আমার বিশ্বাস ওকে আটকানো যাবে না।”

তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট সাইফের পথচলাও বলছে আটকে থাকার পাত্র নন তিনি। ২০১০ সালে পাইওনিয়ার লিগে মুগদা সমাজ কল্যাণ সংসদে, ২০১৪তে খিলগাঁওর হয়ে তৃতীয় বিভাগে খেলার পরের বছর মোহামেডান স্পোর্টিংয়ের জার্সিতে জেতেন অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপ। নিজেও পরেন প্রতিযোগিতার সেরা গোলরক্ষকের মুকুট।

২০১৫ সালে মোহামেডানের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে অভিষেক। ওই বছরই জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ডাক পান। অবশ্য সুযোগ মেলেনি খেলার। বড় ধাক্কাটা এলো ২০১৬-তে। লিগে দুই ম্যাচ খেলার পর পারিবারিক ঝামেলায় দেড় বছরের জন্য ফুটবল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন। ফিরলেন ২০১৮ সালে টিঅ্যান্ডটির হয়ে। এরপর নোফেল স্পোর্টিং হয়ে নোঙর ফেলা পুলিশ এফসিতে।

সুযোগ ছিল শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব বা চট্টগ্রাম আবাহনীর মতো বড় দলের জার্সি গায়ে তোলার। কিন্তু হিসেবী সাইফ বেছে নেন পুলিশ এফসিকে।

“ওই দলগুলোতে যোগ দিলে খেলার সুযোগ পেতাম না।  তাদের অনেক অভিজ্ঞ গোলকিপার আছে। দেখলাম পুলিশ এফসি নতুন দল। এখানে অনেক বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাব। চলে এলাম। এখন লিগে ভালো করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিশ্বাস আছে একদিন না একদিন আমি জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পাবই।”