কি আর করব? গ্যাসের সিলিন্ডার দিয়ে অনুশীলন করছি-কথাটি শুনতেই চোখ কপালে ওঠার জোগাড়! কিন্তু সানোয়ারের কী-ই বা করার আছে। করোনাভাইরাসের কারণে লিগ স্থগিত হওয়ায় হঠাৎ করে মিলেছে ছুটি। তাড়াহুড়ো করে যশোরে ফেরার পর যে জিমনেশিয়ামে ঘাম ঝরানো চলছিল, সেটাও বন্ধ দিনকয়েক আগে থেকে। নিরুপায় সানোয়ার তাই বারবেল-ডামবেলের কাজ সারছেন গ্যাসহীন সিলিন্ডার দিয়ে।
এই ঘাম, শ্রমের লক্ষ্য একটাই-ফুটবলের আঙিনায় নিজের সম্ভাবনাকে পূর্ণতা দেওয়া। প্রিয় খেলোয়াড় রিয়াল মাদ্রিদের লুকা মদ্রিচের মতো মাঝমাঠটা মুঠোয় রাখা কিংবা জাহিদ হাসান, জামাল ভূইয়ার সমকক্ষ হয়ে ওঠা। যার পরিচর্যায় বর্তমানে বেড়ে উঠছেন, সেই রহমতগঞ্জের কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানীরও দৃঢ় বিশ্বাস, আগামী দিনের নির্ভরযোগ্য মিডফিল্ডার হয়ে ওঠার সামর্থ্য আছে সানোয়ারের।
দক্ষ হয়ে ওঠতে চাই ভালো ফিটনেস। আর সেই ফিটনেস নিশ্চিত করার দুর্নিবার প্রচেষ্টার কারণে গ্যাসের সিলিন্ডার তাই হয়ে গেছে সানোয়ারের অনুশীলনের অনুসঙ্গ। অবশ্য পরিকল্পনার দিক থেকেও যশোর থেকে উঠে আসা এই মিডফিল্ডার বেশ পরিণত। তা না হলে লিগ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের তাবু ছেড়ে কেনো নোঙর ফেলবেন রহমতগঞ্জে?
“ভবিষ্যৎ নিয়ে সিনিয়রদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, তারা পরামর্শ দিলেন এই মুহূর্তে মাঠে নিয়মিত খেলার সুযোগ পাওয়াটাই আসল। ইমন বাবু ভাইও বললেন-এখন তোমার খেলার বয়স, যেখানে বেশি খেলার সুযোগ পাবে, সেখানে যাওয়াই ভালো। কিংসও তখন রাখবে কিনা-পরিষ্কার কিছু বলছিল না; আমিও দেখলাম রহমতগঞ্জে গেলে বেশি খেলার সুযোগ পাওয়া যাবে, চলেও এলাম।”
চাওয়াটা পূরণ মোটামুটি পূরণ হয়েছে। লিগে রহমতগঞ্জের খেলা ছয় ম্যাচের মধ্যে সানোয়ার খেলেছেন তিনটিতে। গোলও করেছেন একটি। কিংসের হয়ে গত লিগে মাত্র এক ম্যাচ খেলার তুলনায় যা ঢের বেশি। গতবার কিংসের জার্সিতে ওই ম্যাচে খেলেছিলেন মাত্র ১৫ মিনিট। রহমতগঞ্জের হয়ে এরই মধ্যে খেলে ফেলেছেন ২৫৭ মিনিট।
কিন্তু গত লিগের পর কিংসের সঙ্গে বনিবনা হয়নি। রহমতগঞ্জ হয়েছে নতু্ন ঠিকানা। সাত ভাই-বোনের বড় সংসারে বেড়ে ওঠা সানোয়ার তাতে ভেঙে পড়ছেন না মোটেও। বড় বোন নিলুফা ইসলাম শান্তা আনসারে, বড় ভাই সরোয়ার হোসেন খেলছেন ভিক্টোরিয়া এফসিতে। তিনি পেরিয়েছেন লিগের চৌকাঠ। দ্রুতই কড়া নাড়তে চান জাতীয় দলের দুয়ারে।
“স্বপ্ন তো আছেই জাতীয় দলের হয়ে খেলার; দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার। ছোটবেলা থেকে পরিবারের সবাই আমাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ফুটবল দিয়েই আমি পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করতে চাই।”