মুগ্ধতা ছড়িয়ে রিমনের আগমনী বার্তা

করোনাভাইরাসের ছোবলে পুরোপুরি ষষ্ঠ রাউন্ডও শেষ হতে পারেনি। স্থগিত হয়ে আছে প্রিমিয়ার লিগ। এই অল্প সময়ের মধ্যে দ্যুতি ছড়িয়েছেন তরুণদের অনেকে। ইঙ্গিত দিয়েছেন পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে আসার। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর পাঠকদের জন্য আজ থাকছে বসুন্ধরা কিংসের ১৬ বছর বয়সী রিমন হোসেনের গল্প।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 April 2020, 09:32 AM
Updated : 1 April 2020, 09:53 AM

রিমনের পায়ের কারুকাজ, উইং ধরে এক ছুটে প্রতিপক্ষের বিপদসীমায় ঢুকে পড়ার দৃশ্যগুলো এরই মধ্যে দ্যোতনা জাগিয়েছে ফুটবলপ্রেমীদের মনে।

এই তরুণ তুর্কির শারীরীক গঠন, গতি, জয়ের দুর্নিবার মানসিকতায় মুগ্ধ কিংসের কোচ অস্কার ব্রুসনও। দেশি-বিদেশি মিলিয়ে একঝাক তারকার ভিড়ে আক্রমণভাগে জায়গা করে নেওয়া রিমনের মধ্যে আগামী দিনের তারকার ছায়াও দেখছেন এই স্প্যানিশ কোচ।

“নিঃসন্দেহে রিমন এ দেশের উদীয়মান খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম একজন। মাত্র ১৬ বছর বয়সী ছেলে কিন্তু একজন পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে তার উন্নতির ওপর আমার পুরো আস্থা আছে। সামনের দিনগুলোতে সে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হবে বলে আমি আশাবাদী।”

“বয়সে তরুণ হলেও সে পরিণত। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে নিজেকে ধরে রাখতে পারে। তার শারীরীক গঠন প্রকৃতি প্রদত্ত- শক্তিশালী এবং গতিসম্পন্ন। প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব এবং জয়ী হবার মানসিকতার সঙ্গে শক্তি ও গতির দারুণ সমন্বয় আছে তার মধ্যে।”

লিগের দলগুলোর মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী কিংসের আক্রমণভাগ। স্থানীয়দের মধ্যে মতিন মিয়া, তৌহিদুল আলম সবুজ, মাহবুবুর রহমান সুফিল আছেন। বিদেশিদের মধ্যে আছে আরও বড় বড় নাম-কোস্টারিকার হয়ে বিশ্বকাপ খেলা দেনিয়েল কলিনদ্রেস সোলেরা, আর্জেন্টিনার তারকা ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসির জাতীয় দলের সাবেক সতীর্থ এরনান বার্কোস, কিরগিজস্তানের বখতিয়ার দুইশবেকভ। এই সব তারকার ভীড়েও কিংসের আক্রমণভাগে প্রবল উপস্থিতি রিমনের!

বিস্ময়কর শোনাচ্ছে বটে। কিন্তু সত্যি। যশোরের শামস-উল-হুদা একাডেমিতে বেড়ে ওঠা নওগাঁর ছেলেটি নিজেকে চেনাচ্ছে সেই পাইওনিয়ার লিগ থেকে। কিংসের হয়ে ২০১৫-১৬ মৌসুমে পাইওনিয়ারে ১৩ গোল করা, ২০১৮ সালে আরামবাগ ফুটবল একাডেমির জার্সিতে তৃতীয় বিভাগে শুধুমাত্র সুপার লিগ খেলে ৮ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার মুকুট পরে আলোচনায় আসা তার। ওই বছরই শেষ দিকে দিলকুশার হয়ে দ্বিতীয় বিভাগে ৬ গোল করেন রিমন। গত বছর সিনিয়র ডিভিশন লিগে ফ্রেন্ডস সোশালের হয়ে গোল করেন ৯টি।

লিগে কিংসের খেলা ছয় ম্যাচের মধ্যে রিমন খেলেছেন পাঁচটিতে। গোলের দেখা পাননি এখনও। মূলত উইং দিয়ে আক্রমণ শানানোর কাজটিই তাকে দিয়ে করাচ্ছেন ব্রুসন।  এই তরুণ শিষ্যের গোল না পাওয়া নিয়ে মোটেও ভাবছেন না কোচ।

“রিমন দলে একজন সহজাত স্ট্রাইকার হিসেবে যোগ দিয়েছিল। কিন্তু উইং ধরে খেলায় সে আরও বেশি স্বচ্ছন্দ। এই পজিশনে সে তার গতির সদ্ব্যবহার করতে পারে। ‘ক্লিনিক্যাল ফিনিশিংয়ের’ দক্ষতা আরও বাড়ানোর জন্য তাকে আক্রমণভাগের অনান্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে অনুশীলন করাচ্ছি প্রতিদিন।”

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ঘরবন্দী থাকলেও অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন রিমন। কৃষক বাবা-গৃহিণী মায়ের একমাত্র ছেলে তিনি। পরিবারের স্বপ্নও তাকে ঘিরে। প্রত্যয়ী কণ্ঠে রিমনও জানালেন ফুটবলের আঙিনায় থিতু হতে চান। সম্ভাবনার প্রদীপটা নিভে যেতে দিতে চান না কোনোভাবেই।

“আসলে আমিও ভাবিনি কিংসে এসে খেলার সুযোগ পাব। কোচ আমাকে খুব পছন্দ করেন। আমিও চেষ্টা করছি আস্থার প্রতিদান দিতে। প্রতিদিন পরিশ্রম করছি আরও ভালো পারফরম করার জন্য। করোনাভাইরাসের কারণে বাসাতে থাকলেও প্রতিদিন কোচের নির্দেশনা অনুযায়ী ফিটনেস ধরে রাখতে চালিয়ে যাচ্ছি অনুশীলন। এতটুকু বলতে পারি-হারিয়ে যাওয়ার জন্য আসিনি।”