করোনাভাইরাস: খেলোয়াড়দের পুষ্টি আর নিরাপত্তায় গুরুত্ব শেখ জামাল কোচের

ছয় বিদেশি খেলোয়াড় রয়েছেন ধানমণ্ডির ফ্ল্যাটে। বাকিরা পাড়ি জমিয়েছেন বাড়িতে। সব শিষ্যকে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক দিয়েছেন কড়া বার্তা। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পাওয়া ছুটিতে গা এলিয়ে দিলে চলবে না। পুষ্টির দিকে নজর দিতে হবে, নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তায় মেনে চলতে হবে সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া নির্দেশনা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 March 2020, 10:32 AM
Updated : 26 March 2020, 10:50 AM

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও বন্ধ রয়েছে খেলাধুলা। শুরুর দিকে নিরাপত্তা নির্দেশনা মেনে ক্যাম্প চালিয়ে গেলেও পরে বন্ধ করে দেয় শেখ জামাল কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে খেলোয়াড়দের মতো কোচ মানিকেরও সময় কাটছে ঘরবন্দী হয়ে।

“আর সবার মতো আমার সময়ও কাটছে বাসাতেই। এর বাইরে তো আর কোনো উপায় নাই। বৌ-বাচ্চাদের সময় দিচ্ছি। ম্যাচের ভিডিও দেখছি। ঘরের মধ্যেই বাচ্চাদের সঙ্গে খেলাধুলা করে সময় কাটছে। অন্যসময় তো তাদের এত সময় দিতে পারি না। এখন পারছি। বাচ্চারা এ কারণে বেশ খুশি।”

সলোমন কিং, এবু কানেথ, এমিল সাম্বু, সেইনে বোজাং, ইউসুকে কাতো ও ডেভিড ব্রুস-এই ছয় বিদেশি খেলোয়াড়কে ধানমণ্ডির ফ্ল্যাটে রেখেছে শেখ জামাল। দেশিরা ফিরেছেন বাড়িতে। কোচ মানিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন সবার জন্যই নির্দেশনা দেওয়া আছে তার।

“ধানমণ্ডির একটা ফ্ল্যাটে ছয় বিদেশি খেলোয়াড় আছে। তাদের বলেছি ঘরের ভেতরে থেকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক অনুশীলন করতে। ফিটনেস লেভেল হয়ত সেই পর্যায়ে ধরে রাখতে পারবে না। কেননা ইনডোরের অনুশীলন পর্যাপ্ত নয়। যখন নতুন করে শুরু হবে তখন আমাদেরও প্রি-সিজনের মতোই শুরু করতে হবে।”

“বর্তমান বাস্তবতায় কারোরই কিছু করার নাই। বিদেশি খেলোয়াড়দের মতো স্থানীয়দেরও ঘরেই থাকতে হবে। আগে ছুটি পেলে দাওয়াত খেয়ে বেড়াত, এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। এখন তাদের নিউট্রিশন নিয়ে ভাবা উচিত। কেননা, ক্লাবে থাকলে তারা যে নিউট্রিশন পেত, গ্রামে বা ঘরে থাকলে সেটা হয়ত তারা পাবে না।”

“প্রথমে ভেবেছিলাম এতটা সংক্রামক হবে না, কিন্তু এখন দেখছি পরিস্থিতি অন্যরকম। এখন সবার দৃষ্টিই করোনাভাইরাসের দিকে। এখন জীবন বাঁচানোটাই গুরুত্বপূর্ণ। খেলাধুলা নিয়ে পরে ভাবা যাবে। এখন নিজে ভাইরাসমুক্ত থাকতে হবে, অন্যকে বিপদমুক্ত রাখতে হবে-এটাই তো সবার ভাবনা। নিজেকে নিয়ে, পরিবারকে নিয়ে শঙ্কামুক্ত থাকা গুরুত্বপূর্ণ থাকা। এ ব্যাপারে ছেলেদের কড়া নির্দেশনা দিয়েছি।”

ছুটি পাওয়ায় খেলোয়াড়দের পুষ্টির বিষয়টি এখন খেলোয়াড়দেরই ভাবতে হবে বলে মনে করেন ৫২ বছর বয়সী এই কোচ।

“করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আগেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। ক্যাম্প চালু থাকার সময় গেটের মুখেই স্যানিটাইজিং ব্যবস্থা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, বাইরের লোকদের ঢুকতে না দেওয়া-এগুলো করেছিলাম। কিন্তু খেলোয়াড়রা এখন সাধারণ পরিবেশে ফিরে গেছে, আমাদেরকেও সাধারণভাবে ভাবতে হবে। তবে পুষ্টি ও নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে হবে খেলোয়াড়দেরই।”

আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটি পেয়ে গ্রামে ফিরতে মানুষের বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশনে, লঞ্চে ভিড় দেখে আতঙ্কিত মানিক। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিতে দলটির নেতাকর্মীদের রাস্তায় নেমে আসা নিয়েও কথা বললেন জাতীয় দলের এই সাবেক কোচ।

“আমাদের জনবহুল দেশ। সরকারিভাবে যে ছুটি দেওয়া হলো, তখন বাড়ি যাওয়ার জন্য বাস-রেল স্টেশনে, লঞ্চে যে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেল কিংবা গতকাল বেগম জিয়ার মুক্তির দিনে নেতা-কর্মীরা যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে…আমাদের যে সচেতনতাবোধের ঘাটতি আছে, সেটা তো দেখা গেল।”

“আমরা আবেগপ্রবণ জাতি। নিজেরা কেয়ারলেস থাকার ভাবনা থেকে এগুলো করে ফেলি। আমি মনে করি সরকারের পক্ষ থেকে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো অনুসরণ করা উচিত। নিজের নিরাপত্তা আগে। পরিবারের মধ্যে ইনডিভিজুয়্যাল থাকা উচিত; বাড়িতে আছি বলে পরিবারের সবার সঙ্গেই যে মিশতে হবে, তা নয়। কেননা এই ভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ঘরের মধ্যে থেকে দুরত্ব বজায় রাখা উচিত। আশা করি সবাই এটা মেনে চলবেন।”