অজেয় পথচলায় লিভারপুলের ৩৬৫ দিন

শেফিল্ড ইউনাইটেডকে হারিয়ে ইতিহাসের বিশেষ এক পাতায় জায়গা করে নিয়েছে লিভারপুল। যেখানে আছে কেবল নিজেদের শীর্ষ লিগে এক বছর অপরাজিত থাকার অসাধারণ কৃতিত্ব দেখানো দলগুলো।

আব্দুল মোমিনআব্দুল মোমিনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2020, 02:37 PM
Updated : 3 Jan 2020, 02:40 PM

অ্যানফিল্ডে বৃহস্পতিবার রাতে মোহামেদ সালাহ ও সাদিও মানের গোলে ২-০ ব্যবধানে জিতে নিজেদের ইতিহাসে অনন্য এই কীর্তি গড়ে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। লিগে সবশেষ লিভারপুল হেরেছিল গত বছর ৩ জানুয়ারি, ম্যানচেস্টার সিটির মাঠে ২-১ গোলে।

ওই ম্যাচের পর থেকে যেন ভিন্ন এক দলে পরিণত হয়েছে ক্লপের শিষ্যরা। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের শীর্ষ প্রতিযোগিতায়; ভয়ডরহীন, অদম্য শক্তির এক দল। এই ৩৬৫ দিনে লিগে মোট ৩৭টি ম্যাচ খেলেছে তারা; জিতেছে এর ৩২টিতেই, ড্র বাকি পাঁচটি। পেয়েছে মোট ১০১ পয়েন্ট। ম্যাচ প্রতি পয়েন্ট ২.৭৩। ২০১৭-১৮ মৌসুমে শিরোপা জয়ের পথে ম্যাচ প্রতি ২.৬৩ পয়েন্ট নিয়ে ম্যানচেস্টার সিটি তুলেছিল রেকর্ড ১০০ পয়েন্ট।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের আগে এই কৃতিত্ব দেখিয়েছিল আর্সেনাল ও চেলসি। সবার আগে ২০০৩-০৪ মৌসুমের সব ম্যাচসহ লিগে মোট টানা ৪৯ ম্যাচ অপরাজিত ছিল ‘গানার্স’ নামে পরিচিত আর্সেনাল। আর ২০০৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০০৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিযোগিতাটিতে অজেয় ছিল ‘ব্লুজ’ নামে পরিচিত চেলসি। 

এই সময়ে ঘরোয়া ফুটবলে লিভারপুল হেরেছে কেবল দুটি ম্যাচে; গত বছর জানুয়ারিতে এফএ কাপে উলভারহ্যাম্পটন ওয়ানডারার্সের বিপক্ষে এবং গত মাসে লিগ কাপে তরুণ দল নিয়ে হেরেছিল অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে। আর টাইব্রেকারের ফল বিবেচনায় নিলে যোগ হবে কমিউনিটি শিল্ডের ফাইনালও; গত অগাস্টে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে পেনাল্টি শুটআউটে ৫-৪ ব্যবধানে হেরেছিল লিভারপুল।

এই সময়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তারা হেরেছে দুটি ম্যাচে। গত আসরের সেমি-ফাইনালের প্রথম লেগে বার্সেলোনার মাঠে হারের পর ফিরতি পর্বে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেছিল দলটি। পরে জিতে নিয়েছিল শিরোপাও। পরে এই মৌসুমের শুরুতে গ্রুপ পর্বে নাপোলির বিপক্ষে হেরেছে।

বছরজুড়ে এমন দারুণ ফুটবল খেলেও ঘরোয়া ফুটবলে কোনো শিরোপাই জিততে পারেনি লিভারপুল। তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এসেছে দারুণ সাফল্য। প্রথম ইংলিশ ক্লাব হিসেবে জিতে নিয়েছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, উয়েফা সুপার কাপ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ।

ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় দল হিসেবে ক্লাব বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের পর লিভারপুল খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস। ছবি: রয়টার্স

গত মৌসুমে লিগে শেষ ৯ ম্যাচের সবকটিতে জিতেছিল লিভারপুল। তারপরও শিরোপা লড়াইয়ে সিটির চেয়ে পিছিয়ে পড়েছিল তারা। সেবার লিগে ৯৭ পয়েন্ট পেয়েছিল অ্যানফিল্ডের দলটি, প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ। আর রানার্সআপ দলের অর্জনের বিচারে যা রেকর্ড।

গতবারের শেষের জয়ধারা ধরে রেখে চলতি আসরের প্রথম আট ম্যাচে জিতে লিভারপুল। নবম রাউন্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মাঠে ১-১ গোলে ড্র করে বসায় ম্যানচেস্টার সিটির টানা ১৮ জয়ের রেকর্ডে ভাগ বসাতে পারেনি।

তিন দশকের খরা কাটিয়ে লিগ শিরোপা জয়ের স্বপ্নে এগিয়ে চলা লিভারপুল এখন ১৩ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে আছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা লেস্টার সিটির চেয়ে আবার এক ম্যাচ কমও খেলেছে তারা। এমন দৃঢ় অবস্থানের পরও দলটির কোচ, খেলোয়াড় ও সমর্থকরা নিশ্চয়ই এবার অনেক বেশি সতর্ক। গতবার ৭ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে নতুন বছর শুরু করেও যে শেষ পর্যন্ত শিরোপা স্বপ্ন ভেঙেছিল দলটির।

লিভারপুলের এমন দুরন্ত ছুটে চলার মূল কারিগর তাদের আক্রমণত্রী; রবের্তো ফিরমিনো, মোহামেদ সালাহ ও সাদিও মানে। এই তিনের বাইরে আর কেউই ছয় গোলের বেশি করতে পারেনি।

শেষ ২৯ লিগ ম্যাচের প্রতিটিতে জালের দেখা পাওয়া দলটি গত বছর লিগে ৮৯টি গোল করে। সেনেগালের ফরোয়ার্ড মানে ২৫, মিশরের স্ট্রাইকার সালাহ ১৯ ও ব্রাজিলের ফিরমিনো ১০ গোল করেন।

এই তিন জন ছাড়া আর কেউই সংখ্যাটাকে দুই অঙ্কে নিতে পারেননি। ভার্জিল ফল ডাইক ৬ ও দিভোক ওরিগি ৫ গোল করেন। আরও ১১ জন খেলোয়াড় পান জালের দেখা, তিনটি আত্মঘাতী গোল।

সতীর্থদের দিয়ে গোল করানোয় সবার ওপরে আছেন দুই ইংলিশ ডিফেন্ডার; ট্রেন্ট অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ড (১৭) ও অ্যান্ড্রু রবার্টসন (১৩)।

রেকর্ডের হাতছানি

মৌসুমের শুরু থেকে যে ছন্দে এগিয়ে চলেছে সেই ধারা ধরে রাখতে পারলেই সহজেই ইউরোপের লিগগুলোয় সর্বোচ্চ পয়েন্টের রেকর্ড গড়বে লিভারপুল। প্রথম ২০ ম্যাচে যে গড়ে তারা পয়েন্ট পেয়েছে সেভাবে এগিয়ে গেলে ১১০ পয়েন্ট নিয়ে এবারের লিগ শেষ করবে দলটি।

ইউরোপের কোনো লিগে এক আসরে সর্বোচ্চ পয়েন্টের রেকর্ড সেল্টিকের। স্কটল্যান্ডের শীর্ষ প্রতিযোগিতা স্কটিশ প্রিমিয়ারশিপের ২০১৬-১৭ মৌসুমে ১০৬ পয়েন্ট পেয়েছিল দলটি। তালিকার দুই ও তিনে আছে ব্যারি এফসি। ওয়েলসের শীর্ষ লিগের ১৯৯৬-৯৭ আসরে ১০৫ ও পরের মৌসুমে ১০৪ পয়েন্ট পেয়েছিল দলটি।

উয়েফার ২০১৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, এর বাইরে ইউরোপের লিগে শত পয়েন্টের মাইলফলক ছুঁতে পেরেছে সেল্টিক (২০০১-০২ মৌসুমে ১০৩), ইউভেন্তুস (২০১৩-১৪ মৌসুমে সেরি আয় ১০২), রিয়াল মাদ্রিদ (২০১১-১২ মৌসুমে লা লিগায় ১০০) ও বার্সেলোনা (২০১২-১৩ লা লিগায় ১০০)। 

২০১৭-১৮ আসরের প্রিমিয়ার লিগেও ওই কীর্তি গড়ে শিরোপা উল্লাস করে ম্যানচেস্টার সিটি। 

আগামী ১১ জানুয়ারি লিগে নিজেদের পরের ম্যাচে জোসে মরিনিয়োর দল টটেনহ্যাম হটস্পারের মুখোমুখি হবে লিভারপুল। এর পরের সপ্তাহে তারা ঘরের মাঠে খেলবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে। একমাত্র এই দলের বিপক্ষেই এবার এখন পর্যন্ত পয়েন্ট হারিয়েছে ২০ ম্যাচে ৫৮ পয়েন্ট পাওয়া লিভারপুল।