আনন্দে ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন মাবিয়া

স্ন্যাচে তিন কেজি কম তুলে পিছিয়ে পড়েছিলেন। পেয়ে বসেছিল কিছুটা স্নায়ুর চাপ। ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ঠিকই মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ঘুরে দাঁড়ালেন। শ্রীলঙ্কার প্রতিযোগীর চেয়ে তুললেন পাঁচ কেজি বেশি। লিখলেন আরেকটি সোনার পদক জয়ের গল্প। কিন্তু আনন্দ প্রকাশে ভাষাহীন এই ভারোত্তোক।

ক্রীড়া প্রতিবেদককাঠমান্ডু থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2019, 10:14 AM
Updated : 7 Dec 2019, 10:15 AM

মেয়েদের ভারোত্তোলনে ৭৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্ন্যাচে ৮০ কেজি ও ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১০৫ কেজি, মোট ১৮৫ কেজি ওজন তুলে সেরা হন মাবিয়া।

শ্রীলঙ্কার বিসি প্রিয়ান্থি রুপা ও নেপালের তারা দেবী ব্রোঞ্জ পেয়েছেন। স্ন্যাচে ৮৩ কেজি ও ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১০১ কেজিসহ প্রিয়ান্থি মোট তোলেন ১৮৪ কেজি। স্ন্যাচে ৭৫ কেজি ও ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ৯৭ কেজিসহ মোট ১৭২ কেজি তোলেন তারা দেবী।

শিলং-গুয়াহাটিতে ২০১৬ এসএ গেমসের ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্ন্যাচ ও ক্লিন অ্যান্ড জার্ক মিলিয়ে ১৪৯ কেজি তুলে সোনা জিতেছিলেন মাবিয়া। সেবার আনন্দে কেঁদেছিলেন বিজয়ীর মঞ্চে দাঁড়িয়ে। এবার তিনি আনন্দ প্রকাশের ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না।

“এই আনন্দ ব্যাখ্যা করার মতো নয়। আমাদের এই গোল্ড মেডেলটা অনেক জরুরি ছিল। ফেডারেশন ও কোচরা এজন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আমি বলব, এই পদকটা আমি ফেডারেশন, কোচ, বাংলাদেশ আনসার সবাইকে উৎস্বর্গ করব। উনারা না থাকলে আমি হয়তো আজ এটা পেতাম না।”

“অনুভূতি আমি স্টেজেই প্রকাশ করেছি। কারণ, আমি একটু নার্ভাস ছিলাম…ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১০৫ কেজি আমার কনফার্ম লিড ছিল। কোচের আত্মবিশ্বাসের প্রতিদান দিতে পেরেছি। আসলে হাজারবার বললেও আমি এ অনূভূতি বোঝাতে পারব না।”

“গতবারের তুলনায় এবার প্রতিযোগিতা অনেক ছিল। আপনারাও দেখেছেন শ্রীলঙ্কার প্রতিযোগী আমার কাছ থেকে বের হয়ে গিয়েছিল (স্ন্যাচে বেশি তুলেছিল)। পরে আমি লিড নিয়ে বের হয়েছি। এবার আসলে টেনশনটা বেশি কাজ করেছে। কেননা, গতবার আমি একেবারে নতুন মুখ ছিলাম। আমার ওপর তেমন কোনো দায়িত্ব ছিল না, এবার দায়িত্ব বেশি ছিল। সব কিছু মিলিয়ে আমি বলব যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি হয়েছে এবার।”

স্ন্যাচে পিছিয়ে পড়লেও আত্মবিশ্বাস না হারানোর কথা জানালেন মাবিয়া। দাবি তুললেন সম্ভাবনাময় ডিসিপ্লিনগুলোতে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোরও।

“আসলে স্ন্যাচের চেয়ে ক্লিন অ্যান্ড জার্কে আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বেশি। এমনকি এ নিয়ে আমার চেয়ে আমার কোচের আত্মবিশ্বাসও সবচেয়ে বেশি ছিল। যখন স্ন্যাচে শ্রীলঙ্কার প্রতিযোগী তিন কেজি বেশি নিয়ে বের হয়ে গেছে; তখন কোচ আমাকে বলেছেন ক্লিন অ্যান্ড জার্কে আমি তোমাকে লিড এনে দিব। কোচও আমাকে ওইভাবে অনুশীলন করিয়ে এসেছেন। লিডও এলো।”

“এখন পরের ধাপ যদি বলেন, বাংলাদেশের স্পোর্টস অথরিটি যারা আছেন, তাদেরকে আমি অনুরোধ করব আমাদের যে ইভেন্টগুলো সম্ভাবনাময় থাকে এ ধরনের গেমসে, তাদেরকে যেন একটু ভালো সুবিধা দেওয়া হয়।”

“গেমসের আগে চার/পাঁচ মাস ক্যাম্প যথেষ্ট নয়। এত অল্প অনুশীলনে যদি আমরা গোল্ড মেডেল পাই, যদি গেমসের দুই বছর আগে আমরা ক্যাম্প করি, তাহলে যে কোনো ইভেন্টে আমরা গোল্ড মেডেল পাব। আমাদের সামনে কোনো প্রতিযোগী থাকবে না।”

২০১৬ সালে খেলেছেন ৬৩ কেজিতে। এবার অংশ নিলেন ৭৬ কেজিতে। মাবিয়া জানালেন মাঝের সময়টাতে সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার কথা।

“২০১৬ সালে খেলেছি ৬৩ কেজিতে। প্রায় চার বছর আগে। এই চার বছরে আমার শরীর বদলেছে। আমি ধাপে ধাপে ওজনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। এই ওজন শ্রেণিতে কিছু গেমসও খেলেছি। শরীরের বৃদ্ধি স্বাভাবিক ব্যাপার।”