২ রুপার দিনে প্রিয়ার জন্য আক্ষেপ

সোনাজয়ী মারজান আক্তার প্রিয়া যদি প্রতিপক্ষের আঘাতে চোট না পেতেন, যদি তাকে পাওয়া যেত ফাইনালে! কারাতের কুমিতে মেয়েদের দলগত ইভেন্টে রুপা জেতার পর প্রিয়াকে না পাওয়ার আক্ষেপেই বেশি পুড়ল বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের (এসএ গেমস) চতুর্থ দিনে সোনা না জয়ের অপূর্ণতাও থেকে গেলো।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়ের কাঠমান্ডু থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2019, 02:09 PM
Updated : 4 Dec 2019, 02:33 PM

কাঠমান্ডু-পোখারার আসরে গত দুই দিনে চারটি সোনা জিতে বাংলাদেশ। বুধবারও কারাতে থেকে পাওয়ার আশা ছিল। কিন্তু সাতদাবাতো ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস কমপ্লেক্সে থেকে এলো দুঃসংবাদ। সেমি-ফাইনালে শ্রীলঙ্কার প্রতিযোগীর আঘাতে চোয়ালে, ঘাড়ে চোট পেয়ে প্রিয়া হাসপাতালে জরুরী বিভাগে। ডাক্তারের চিকিৎসার ফাঁকে যখনই চেতনা ফিরে পেয়েছেন, খেলার আকুতি জানিয়েছেন অনূর্ধ্ব-৫৫ কেজিতে সোনা জেতা এই অ্যাথলেট। পরে চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছেন বটে, কিন্তু ম্যাটে ফেরা হয়নি।

প্রিয়াকে ছাড়াই ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। মাউনজেরা বর্নাকে সঙ্গে নিয়ে আগের দিন সোনা জেতা হুমায়রা আক্তার অন্তরা শ্রীলঙ্কাকে ২-১ ব্যবধানে হারান। ফাইনালে খেলেন নাইমা খাতুন। কিন্তু পাকিস্তানের কাছে হারতে হয় ২-১ পয়েন্টে।

এই ইভেন্ট থেকে ছেলেদের দলগত, অনূর্ধ্ব-৫০ কেজি কুমিতে সবুজ মিয়া ও ৬৮ (প্লাস) ওজন শ্রেণিতে আবিদা সুলতানা ব্রোঞ্জ পেয়েছেন। ৩টি করে সোনা, রুপা ও ১২টি ব্রোঞ্জ নিয়ে আসর শেষ করলেও ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ক্য শৈ হ্লার কথায় ফুটে উঠল আক্ষেপ, “প্রিয়ার চোটের কারণে আমরা একটা স্বর্ণপদক হারালাম।”

রুপা এলো খো খো থেকে

কৃতিপুরে ছেলেদের ফাইনালে ভারতের কাছে ইনিংস ও ১৭-০৯ পয়েন্টে হেরে রৌপ্যপদক পেয়েছে বাংলাদেশ। মেয়েদের ব্রোঞ্জ নির্ধারণী ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ইনিংস ও ২ পয়েন্টে হারায় দল।

উশু থেকে এক রুপা ৫ ব্রোঞ্জ

ছেলেদের অনূর্ধ্ব-৫৬ কেজি সানদায় শ্রীলঙ্কার প্রতিযোগীকে হারিয়ে সজীব হোসেন ফাইনালে উঠেছেন। আগামী বৃহস্পতিবার ফাইনাল খেলবেন তিনি।

মেয়েদের অনূর্ধ্ব-৫৬ কেজি সানদা ইভেন্টে সাদিয়া আক্তার, অনূর্ধ্ব-৭০ কেজিতে সানদায় বাসনা খন্দকার, অনূর্ধ্ব-৬০ কেজিতে সানদায় রিতা বিশ্বাস পূজা ব্রোঞ্জ পেয়েছেন। অনূর্ধ্ব-৬০ কেজিতে মিলন হোসেন ও অনূর্ধ্ব-৬৫ কেজিতে রাকিব খন্দকার, অনূর্ধ্ব-৮০ কেজিতে রুবেল খান ও অনূর্ধ্ব-৭৫ কেজিতে সেলিম আহমেদ ব্রোঞ্জ পেয়েছেন।

লং জাম্পে সবুজের ব্রোঞ্জ

এই ডিসিপ্লিন থেকে এখনও বড় কোনো প্রাপ্তির উচ্ছ্বাসে ভাসতে পারেনি বাংলাদেশ। দশরথ স্টেডিয়ামে ছেলেদের লং জাম্পে ৭ দশমিক ৬০ মিটার অতিক্রম করে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন আল আমিন। ভারতের লোকেশ সাথিয়ানা (৭.৮৭ মিটার) সোনা ও তার স্বদেশী স্বামীনাথান রাভ (৭.৭৭) রুপা জিতেছেন।

কলম্বোর ২০০৬ সালের এসএ গেমসের চতুর্থ হওয়া আল আমিন ২০১০ সালে ৭ দশমিক ১৮ মিটার পেরিয়ে পেয়েছিলেন ব্রোঞ্জ। ২০১৬ সালে ৭ দশমিক ৪০ মিটার পেরিয়েও হন চতুর্থ। দশরথের ট্র্যাকে নিজের সেরাটা পেরুতে না পারলেও ব্রোঞ্জ জিতে খুশি এই অ্যাথলেট।

“২০০৯ সালে জাতীয় অ্যাথলেটিক্সে ৭ দশমিক ৬১ মিটার পেরুনোই আমার সেরা। অল্প একটুর জন্য সেরাটা পেরুতে পারলাম না। আসলে ল্যান্ডিংয়ে একটু সমস্যা হয়েছিল। পিঠ পড়ে যাওয়াতে অল্পের জন্য রুপা জিততে পারিনি। তবে যদি আমার দেশের প্রেক্ষাপট, অনুশীলনের বিষয়গুলো চিন্তা করি তাহলে আল্লাহর কাছে লাখ-কোটি শুকরিয়া যে ব্রোঞ্জ পেয়েছি।”

“কেননা, যাদের পেছনে ফেলেছি তারাও অনেকে ট্রেনিং করে করে দেশের বাইরে; অনেক বড় বড় কোচের কাছে। আমার এরকম কোনো সুযোগ হয়নি। যদি এখনও একজন ভালো কোচের অধীনে কোচিং করি, আমার বিশ্বাস ৮ মিটার জাম্প করব। কারণ যখন জাম্প করি, এটা আমি অনুভব করি।”

হতাশ করেছেন শিরিন আক্তার ও মোহম্মদ সাইফুল ইসলাম। মেয়েদের ২০০ মিটারে শিরিন ২৫ দশমিক ৫৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে আট প্রতিযোগীর মধ্যে সপ্তম হয়েছেন। এ ইভেন্টে ভারতের অর্চনা সুশান্ত (২৩.৬৬) সোনা ও পাকিস্তানের নাজমা পারভীন (২৩.৬৯) রুপা জিতেছেন। ছেলেদের ২০০ মিটারে ২১ দশমিক ৭০ সেকেন্ড সময় নিয়ে সাইফুল আট প্রতিযোগীর মধ্যে সপ্তম হন। এ ইভেন্টে পাকিস্তানের উজাইর রেহমান (২১.১৫) সোনা ও শ্রীলঙ্কার ভিনোজ সুরাঞ্জয়া (২১.১৯) রৌপ্যপদক পেয়েছেন। মেয়েদের লং জাম্পে বাংলাদেশের রিংকি খাতুন ৫.৭০ মিটার অতিক্রম করে পঞ্চম হন।

চতুর্থ দিনে ক্রিকেটের ছেলে-মেয়ে উভয় বিভাগে জিতেছে বাংলাদেশ। কাবাডির ছেলেরাও পেয়েছে জয়। ২টি রুপা ও ১৪টি ব্রোঞ্জ যোগ হয়েছে পদক তালিকায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রিয়ার ছিটকে যাওয়ার বিষাদটুকু ঠিকই সঙ্গী বাংলাদেশের।