মেয়েদের বাস্কেটবলে মারধরের অভিযোগ কোচের বিরুদ্ধে

কোচের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনে দক্ষিণ এশিয়ান গেমস (এসএ গেমস) থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন জাতীয় নারী বাস্কেটবল দলের খেলোয়াড় তাসফিয়া চৌধুরী।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2019, 04:17 PM
Updated : 24 Nov 2019, 04:17 PM

অনুশীলনে মেয়েদের গায়ে হাত তোলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কোচ সবুজ মিয়া। তার দাবি, ভয় দেখাতে তিনি মারার ভান করেছেন।

আর ফেডারেশনগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ অলিম্পিক ফেডারেশনের (বিওএ) সহ-সভাপতি শেখ বশির আহমেদ মামুন জানিয়েছেন, অভিযোগের সত্যতা পেলে তারা ব্যবস্থা নেবেন।

নেপালের কাঠমান্ডু-পোখারায় আগামী ১ ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে এসএ গেমসের ত্রয়োদশ আসর। ২৭টি ডিসিপ্লিনের মধ্যে ২৫টিতে অংশ নেবে বাংলাদেশ। বাস্কেটবলে ছেলে-মেয়ে উভয় বিভাগেই বাংলাদেশ অংশ নেবে।

অনুশীলনের সময় এক খেলোয়াড়ের দিকে ধেয়ে যাচ্ছেন কোচ সবুজ মিয়া এবং ওই খেলোয়াড়কে চড় মারছেন- এমন একটি ভিডিও ফেইসবুকে শেয়ার করেছেন  তাসফিয়ার বাবা কাউসার চৌধুরী। বিষয়টি নিয়ে বিওএকে চিঠিও দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এসএ গেমসে খেলার জন্য ও সেমিস্টার বাদ দিয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে ট্রেনিং করছে। শুরুতে খুব খুশি ছিল। কয়েক সপ্তাহ আগে বলল, ওদের বিকেএসপিতে নিয়ে যাবে। আমিও বললাম যাও। বাসা থেকে যাওয়া আসা করে অনেক কিছু হয় না। ওখানে গেলে অনেক কিছু শিখবে।

“বিকেএসপি থেকে একদিন মেয়ে আমাকে ফোন করে বলল, নতুন যে কোচ, সে খুব অ্যাবিউসিভ। সে সবাইকে থাপ্পড় মারছে। উল্টা-পাল্টা কথা বলছে।”

কাউসার চৌধুরী বলেন, শুরুতে তারা মেয়েকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। পরে মেয়ে যখন ওই ভিডিও দেখালো, তখন তিনি এবং তার স্ত্রী দুজনেই ‘ভীষণ আপসেট’ হন।

“এই শুক্রবার রাতে মেয়ে এসে বলল সে আর খেলবে না । আমি আজকে সকালে মেইল করে অলিম্পিক কমিটিকে জানিয়েছি। সেখানে ভিডিও অ্যাড করে দিয়েছি।”

তাসফিয়া বললেন, অনুশীলনে ভুল হলেই কোচ মারধর করতেন খেলোয়াড়দের। অনেক দিন ধরেই এটা চলছে।

“আমরা বিকেএসপি যাওয়ার আগে থেকে অনুশীলনে একটু ভুল হলে কোচ থাপ্পড় মারত। অনুশীলনে কখনোই সবকিছু নিখুঁত হয় না।… উনি শুরুতে জেলার মেয়েদের গায়ে হাত তুলতেন, ঢাকার মেয়েদের গায়ে নয়। বলতে গেলে জেলার মেয়েদের প্রতিদিন মারতেন।

“জেলার মেয়েদের সঙ্গে এ নিয়ে আমিও কথা বলেছি। ওরা গ্রাম থেকে আসে। ওরা জানেও না ওদের কী অধিকার, ওরা জাতীয় দলের খেলোয়াড়।… ক্যাম্প থেকে যে আর্থিক সুবিধাগুলো ওরা পায়, ধরে নেয় এটা ওদের জন্য অনেক। তাই ওরা ভয়ে কিছু বলে না। সর্বশেষ কলকাতায় আমার গায়েও হাত তুলেছিল।”

অভিযোগ অস্বীকার করে বাস্কেটবল দলের কোচ সবুজ বলেন, অনুশীলনে বারবার ভুল করার কারণে তিনি খেলোয়াড়ের দিকে ‘তেড়ে গিয়েছিলেন’ শুধু, মারেননি।

“আপনারা ভিডিওটা দেখেন। এটা বিকেএসপির ঘটনা; প্রায় মাসখানেক আগের ঘটনা। আমি কিন্তু মেয়েটার গায়ে হাত তুলিনি; মারিনি। হাতটা শো করেছি। আপনারা একটু দেখেন ভালো করে। একটু ভয়-ভীতি তো দেখাতে হয় মাঝেমধ্যে। ও বারবার লিফট মিস করছিল, তাই….।”

সবুজ বলেন, ওই ভিডিওতে যার দিকে তাকে ‘তেড়ে যেতে’ দেখা গেছে, সে দিনাজপুরের মেয়ে।

“ওর হাইট খুবই ভালো। সে খুবই ভালো খেলোয়াড়। কলকাতা ট্যুরেও সে ভালো করেছে। আপনারা ভিডিও দেখলেও বুঝতে পারবেন আমি মেরেছি কিনা। একটু রাগারাগি তো করতেই হয়। দিনাজপুরের একটা মেয়ে এসে বাস্কেটবল খেলছে, তাকে তো প্রয়োজনে একটু প্রেসার দিতে হবে, তাই না? কিন্তু আমি মারি নাই।”

কোনো পরিস্থিতিতেই খেলোয়াড়ের গায়ে হাত তোলার বিষয়টি বিওএ অনুমোদন করে না বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন সংস্থার সহ-সভাপতি মামুন। তিনি জানালেন, দুই পক্ষকে নিয়ে তিনি সোমবার বসবেন।

“অলিম্পিক কখনোই এটা অ্যালাও করে না। আপনারা জানেন কদিন আগে একই ধরনের ঘটনা তায়কোয়ান্দো ও সাঁতারে ঘটেছে। আমরা কঠোর অবস্থান নিয়েছিলাম। পরে যদিও কোচ ও খেলোয়াড়রা সমঝোতায় পৌঁছেছিল, কিন্তু তাদেরকে আমরা বিদেশ ভ্রমণ থেকে বিরত রেখেছিলাম।”

বাস্কেটবল দলের কোচের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি শুনেছেন জানিয়ে শেখ বশির আহমেদ মামুন বলেন, “কাল দুই পক্ষের সঙ্গে বসব। বুঝে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব। এসব ব্যাপারে আমাদের নীতি ‘জিরো টলারেন্স’। এগুলোর জন্যই আমরা এবার এসএ গেমসে মেয়েদের দলের সঙ্গে একজন নারী অফিসিয়াল দিচ্ছি।”