মাবিয়ার কাঁধেই সোনার পদকের ভার

জিমনেশিয়ামের অবস্থা তথৈবচ। নেই কোনো আধুনিক সুবিধা। ঘরটা এতটাই ছোট যে, চার জন ভারোত্তোলকের একসঙ্গে অনুশীলন করা কঠিন। এর মধ্যেও টিকে আছে স্বপ্নটুকু। দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে এবারও সোনার পদক চান মাবিয়া আক্তার সীমান্ত। বাকিদের প্রত্যাশাও ভালো কিছু উপহার দেওয়ার।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2019, 02:31 PM
Updated : 20 Nov 2019, 03:05 PM

নেপালের কাঠমাণ্ডু-পোখারায় আগামী ১ ডিসেম্বর শুরু হবে এসএ গেমসের ত্রয়োদশ আসর। ২৭টি ডিসিপ্লিনের মধ্যে ২৫টিতে অংশ নিবে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ার খেলাধুলার সর্বোচ্চ এই আসরে গতবার ভারোত্তোলন থেকে এসেছিল ১টি সোনা, ২টি রুপা ও ৩টি ব্রোঞ্জ।

গত জুলাই থেকে আইভি রহমান সুইমিং পুল লাগোয়া জিমনেশিয়ামে চলছে মাবিয়া-মোস্তাইন-সুমনদের অনুশীলন। ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার দিকে তাকালে যথেষ্ট সময় নয় মোটেও। প্রতিদিন ছয়শ টাকার কিছু বেশি মেলে খাবারের জন্য, একজন ভারোত্তোলকের পুষ্টির জন্য সেটাও খুব বেশি নয়। কিন্তু পদক এনে দেওয়ার ভারটুকু সবসময় থাকে তাদের কাঁধে। এবারও আছে।

৭ জন করে ছেলে ও মেয়ে নিয়ে এবারের ভালোত্তোলনের দল। গতবারের পদকজয়ীদের মধ্যে মাবিয়া, মোস্তাইন বিল্লা, ফুলপতি চাকমা, রোকেয়া সুলতানা সাথী, মোল্লা সাবিরা আছেন এবারের দলে। নেপালে সাতটি ওজন শ্রেণিতে কে কে লড়বেন, তাও নির্ধারিত হয়েছে।

ছবি: মোহাম্মদ জুবায়ের

গতবার ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্ন্যাচ ও ক্লিন অ্যান্ড জার্ক মিলিয়ে ১৪৯ কেজি তুলে সোনা জেতা মাবিয়া এবার লড়বেন ৭১ কেজি ওজন শ্রেণিতে। ৫৮ কেজিতে রুপা জেতা ফুলপতি ৫৫ কেজিতে, ৬৯ কেজিতে রুপা রোকেয়া সুলতানা সাথী ৭৬ কেজিতে লড়বেন। ৪৮ কেজিতে ব্রোঞ্জ জেতা সাবিরার ওজন শ্রেণি এবার ৪৯ কেজি। ছেলেদের ৬২ কেজিতে ব্রোঞ্জ পাওয়া মোস্তাইনের ইভেন্ট ৬১ কেজি।

শিলং-গুয়াহাটির আসরে সেরার বেদীতে উঠে আনন্দাশ্রু ঝরেছিল মাবিয়ার চোখ দিয়ে। যে দৃশ্য ছুঁয়ে গিয়েছিল দেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের। এবারও তাকে ঘিরে প্রত্যাশার পারদ চড়ছে। মাবিয়াও প্রস্তুত সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে হাসতে। হাসাতেও।

 “আলহামদুলিল্লাহ, প্রস্তুতি ভালো। এখন শেষ সময়ের প্রস্তুতি চলছে। সোনার পদকের প্রত্যাশা আপনারা করতেই পারেন। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণের জন্য যেটা আমাকে দেওয়া উচিত ছিল, সেটা গত চার বছরে দেওয়া হয়নি। তবে এসএ গেমসের কিছুদিন আগে আমাদের ক্যাম্প করা হয়েছে। তারপরও লক্ষ্য বিগত রেকর্ডকে ছাপিয়ে যাওয়া।”

ছবি: মোহাম্মদ জুবায়ের

“ভারত ও শ্রীলঙ্কা এতটা উন্নতি করেছে যে, সোনা জিতব বলা কঠিন হয়ে যায়। আমাদের একটা মানসম্পন্ন জিমনেশিয়ামও নেই। স্টোর রুমের মতো একটা জায়গায় আমরা অনুশীলন করি। তারপরও দেশের মানুষ আমাদের কাছে সোনার পদক চায়, আমরাও চেষ্টা করব তা পূরণের।”

গতবারের ব্রোঞ্জজয়ী বিল্লা বড় স্বপ্ন দেখছেন না। শ্রীলঙ্কার প্রতিযোগী ২৬৫ কেজি তুলে গতবার তার ইভেন্টে সোনা জিতেছিলেন। রুপাজয়ী নেপালের প্রতিযোগী তুলেছিলেন ২৪২ কেজি। ২২৫ কেজি তোলা বিল্লা তাই প্রতিপক্ষের সঙ্গে নিজেদের ব্যবধান, বাস্তবতা তুলে ধরলেন অকপটে।

“ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও নেপালের ভারোত্তোলকরা অনেক দিন ধরে অনুশীলন করছে। দেখলাম অনেক ভালো করছে। ভারতের তরুণরাও ভালো করছে। ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১৫০-৬০ কেজি তুলছে। আমি ১২৮-১৩০ কেজি তুলতে পারি। স্ন্যাচে পারি ১০৩-১০৪ কেজি। দীর্ঘ সময় অনুশীলন করতে পারলে বলতে পারতাম পদক পাব।”

ছবি: মোহাম্মদ জুবায়ের

“ভারোত্তোলন অল্প বয়সে শুরু করতে হয়। চীন যেমন ছোট থেকে শুরু করে, ২৫/৩০ বছরের মধ্যে অলিম্পিক খেলে অবসরে চলে যায়। ভারত লিগ খেলছে। সরকার অতিরিক্ত বাজেট দিচ্ছে আলাদা ফুডের জন্য। আমি মনে করি, গোল্ড এনে দেওয়া আমাদের কারো পক্ষে সম্ভব নয়। ভারত-পাকিস্তান যদি এই ইভেন্টে না নামে তাহলে আমরা পাব। এতে যদি কেউ কষ্ট পায় আমার কিছু করার নেই।”

জাতীয় ভারোত্তোলনের গত দুই প্রতিযোগিতায় সোনা জেতা সুমন চন্দ্র রায়ও সুর মেলালেন বিল্লার সঙ্গে। দাবি তুললেন দীর্ঘমেয়াদী অনুশীলনের।

“ভারত, পাকিস্তান আমাদের চেয়ে ভালো। তবে ভাগ্যে থাকলে গোল্ড আমাদেরও হয়ে যেতে পারে। দেখা যাক। ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১৬০ কেজি ও স্ন্যাচে ১২০ কেজি উঠিয়েছি। এটা দিয়েই গোল্ড হতে পারে। দেখা গেল ভারত, পাকিস্তানের অ্যাথলেটদের কোনো দুর্ঘটনা হয়ে যেতে পারে…তখন আমরা পেতে পারি। কেননা, ওরা ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১৭০ কেজি এবং স্ন্যাচে ১৩০ কেজি তোলে।”