কেউ শোনালেন পদকের প্রত্যয়, কেউ দিলেন প্রতিশ্রুতি

একটু অন্যরকম আয়োজন। যেখানে ক্রীড়া সাংবাদিক, সংগঠক, এসএ গেমসের গত আসরগুলোর স্বর্ণজয়ী, ক্রিকেট দলের নির্বাচক থেকে শুরু করে উপস্থিত ছিলেন অনেকে। গল্পে-আলাপচারিতায়, আলোচনা-সমালোচনায় উঠে এলো ক্রীড়াঙ্গনের বাস্তবতা, সম্ভাবনাসহ অনেক বিষয়। মূলত দক্ষিণ এশিয়ান গেমস (এসএ গেমস) সামনে রেখে হওয়া এই সেমিনারে বিভিন্ন ফেভারেশনের কর্মকর্তারা দিলেন পদক এনে দেওয়ার ঘোষণা। কেউ কেউ দিলেন প্রতিশ্রুতি।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2019, 02:58 PM
Updated : 19 Nov 2019, 09:16 PM

আগামী ১ ডিসেম্বর নেপালের কাঠমাণ্ডু ও পোখারায় শুরু হবে এসএ গেমসের ত্রয়োদশতম আসর। ২৭টি ডিসিপ্লিনের মধ্যে ২৫টিতে অংশ নিবে বাংলাদেশ। এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ) আয়োজন করে ১৩তম এসএ গেমস: বাংলাদেশের প্রত্যাশা ও বাস্তবতা শীর্ষক সেমিনার।

বর্তমানে দারুণ ছন্দে থাকা জাতীয় ফুটবল দল নিয়ে সমর্থকদের প্রত্যাশা অনেক। দলের ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রূপু দিলেন নেপালে দুর্দান্ত ফুটবল খেলার প্রতিশ্রুতি।

“গত এশিয়ান গেমসে কাতারকে হারানোর পর থেকে ফুটবল দলকে ঘিরে প্রত্যাশা বেড়েছে। এসএ গেমস অংশগ্রহণ করতে যাওয়া স্কোয়াডে থাকছেন জাতীয় দলের ১৬ জন। এসএ গেমসে আমাদের মূল প্রতিপক্ষ ভারত। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে জাতীয় দল তাদের বিপক্ষে ৮৯ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থেকে ড্র করেছে। ওই ম্যাচও বাংলাদেশকে ঘিরে প্রত্যাশা বৃদ্ধি করেছে।”

“প্রত্যাশার বিপরীতে আমাদের প্রস্তুতি ভাল। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ দল যেভাবে নৈপূণ্য প্রদর্শন করেছে, তাতে আমরা কাঙ্ক্ষিত সাফল্যর জন্য প্রস্তুত। আশা করছি, অনূর্ধ্ব-২৩ দলও জাতীয় দলের মতো দুর্দান্ত ফুটবল খেলবে।”

গত এসএ গেমসে চারটি স্বর্ণের একটি এসেছিল শুটিং থেকে; শাকিল আহমেদের হাত ধরে। সাবেক শুটার সাইফুল আলম রিংকি সাফল্যের জন্য আরও উন্নত সুযোগ-সুবিধার দাবি তুলে ধরলেন।

“১৯৯৩ সালে এসএ গেমসের আগে এক বছরেরও অধিক সময় ধরে অনুশীলন হয়েছে। ২০১০ সালেও লম্বা সময় ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে আমাদের অ্যাথলেটরা। দুই আসরে তার সুফলও পেয়েছে দেশ। তাই আমাদের সূদুর প্রসারী চিন্তা করে উন্নত অনুশীলন কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। তাহলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যেতে পারে।”

টেনিস ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোরশেদ প্রতিশ্রুতি দিলেন নেপালে ভালো খেলার, “এ অঞ্চলে ভারত পরাশক্তি। এবার যেভাবে ফিক্সচার করা হয়েছে, তাতে অংশগ্রহণকারী অন্য দেশগুলোর পদক পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা দলগত ইভেন্ট নিয়ে আশাবাদী। আশা করছি, এ ইভেন্টে দল ভাল নৈপুন্য দেখাবে।”

খো খো ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বাবুলের প্রত্যাশা নেপালে পদক পাবে অ্যাথলেটরা, “২০১৬ সালে ছেলে ও মেয়েদের বিভাগে রূপা পেয়েছি আমরা। এবার সে পদক ধরে রাখার চেষ্টা করবো। কারণ ভারত অনেক শক্তিশালী। তাদের টপকে স্বর্ণজয় করা কঠিন।”

মাবিয়া আক্তার সীমান্ত গত এসএ গেমসে ভারোত্তোলনে স্বর্ণ জিতেছিলেন। ভারোত্তোলন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ এবারও স্বর্ণ জয়ের আশাবাদ শোনালেন।

“আমার ভারোত্তোলনে কোন সমস্যা নেই। গত দুটি আসরে আমরা স্বর্ণপদক এনে দিয়েছি। এবারও সে চেষ্টা থাকবে। স্বর্ণপদক নিয়ে নিশ্চয়তা দিচ্ছি না, তবে এবার ৮ হতে ১০টা পদক পাব বলে আশা করছি।”

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন দিলেন সর্বোচ্চ সাফল্যের প্রতিশ্রুতি, “বর্তমানে ইমার্জিং কাপে আমাদের যে দলটি খেলছে, এসএ গেমসে আমরা অনেকটা সেই দলই পাঠাব। তবে এমন একটা দল আমরা গঠন করব, যেটা সর্বোচ্চ সাফল্য এনে দিতে পারবে। দেশের সম্মান নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।”

গত আসরে দুটি স্বর্ণ জেতা সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শীলার দাবি জানালেন, অবসরের পর যেন অ্যাথলেটদের চাকরির ব্যবস্থা করা হয়। একই চাওয়া ২০১০ এসএ গেমসে স্বর্ণপদক জেতা কারাতে খেলোয়াড় হাসান খান সানের।

বিএসপিএ সভাপতি মোস্তফা মামুনের সঞ্চালনায় ও প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার বদিউজ্জামান মিলনের মূল প্রবন্ধ পাঠের মধ্যে দিয়ে শুরু হওয়া সেমিনারে ডেইলি স্টারের সিনিয়র রিপোর্টার আনিসুর রহমান গুরুত্ব দিলেন ‘ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত’ করার ওপর। কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি সনৎ বাবলা মত দেন ‘শ্যুটিং ও আর্চারির মত ইভেন্টে বেশি গুরুত্ব’ দেওয়ার দিকে। যমুনা টিভির স্পোর্টস এডিটর রানা হাসান দেখছেন ‘বস্তুনিষ্ঠ পরিকল্পনার’ ঘাটতি।

বিশেষ প্রতিনিধি মাসুদ আলম জানালেন, এসএ গেমসের ক্যাম্পে ‘অর্থের অপব্যবহার ও খেলোয়াড়দের মানহীন খাবার’ দেওয়ার কথা। চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের ক্রীড়া সম্পাদক দিলু খন্দকার ফেডারেশনগুলোকে পরামর্শ দিলেন ‘সরকারি অনুদানের’ দিকে তাকিয়ে না থাকতে।

আলোচনা-সমালোচনার পর কর্মকর্তারাও দিলেন ক্রীড়াঙ্গনের সার্বিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। বিওএ সহ-সভাপতি শেখ বশির আহমেদ মামুন বলেন, “আমরা ক্রীড়াঙ্গনের উন্নতি চাই। সরকার, অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন, ফেডারেশন, মিডিয়া ও খেলোয়াড়দের মেলবন্ধন ঘটাতে পারলে ক্রীড়াঙ্গন এগিয়ে যেতে পারবে।”

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মাসুদ করিম বলেন, “আমাদের কেউ কেউ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখেন। অথচ এমন স্বপ্ন দেখা উচিত, যা আমাদেরকে ঘুমাতে দেবে না। ক্রীড়ায় একক কারণে সাফল্য আসে না। এটি সামগ্রিক দায়িত্ব। ক্রীড়ায় সফলতা নিশ্চিত করতে হলে প্রথমে সেই প্রকল্পের দুর্বলতা চিহ্নিত করতে হবে।”

বিওএ’র যুগ্ম মহাসচিব এবং এসএ গেমসগামী বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টের শেফ দ্য মিশন আসাদুজ্জামান কোহিনুর জানালেন যেকোনো দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বার্তা, “কোনো ফেডারেশনের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের সুস্পষ্ট তথ্য পেলে এবং আমাদেরকে তা জানালে, আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।”

বিওএ’র কোষাধ্যক্ষ এবং সেমিনারের পৃষ্ঠপোষক ব্লেজারবিডি’র কর্ণধার কাজী রাজিবউদ্দিন আহমেদ চপল আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকও। উন্মুক্ত আলোচনায় তিনি দিলেন সাফল্যের প্রতিশ্রুতি, “খেলাধুলায় সামাজিক সহায়তা সবচেয়ে জরুরি। একজন ফেডারেশন কর্মকর্তা হিসেবে আমিও স্বর্ণ ও রৌপ্যের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছি।”

মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ফিরোজা করিম নেলী জানালেন নারী ক্রীড়াবিদদের মূল আবাসন মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের সব কিছু মানসম্মত নয়। প্রতিশ্রুতি দিলেন মানোন্নয়নের।