প্রত্যাশা জহির-মাহফুজকে ঘিরে

মাস পাঁচেকের অনুশীলন ক্যাম্প। অ্যাথলেটিক্স নিয়ে প্রত্যাশার দৌড়টা তাই যতটা গতি পাওয়ার কথা ছিল, ঠিক ততটা পাচ্ছে না। তারপরও হতাশার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার তাড়না আছে। আছে এবারের দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে (এসএ গেমস) সোনার পদক পাওয়ার আশাও।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2019, 01:00 PM
Updated : 19 Nov 2019, 08:19 PM

নেপালের কাঠমাণ্ডু-পোখারায় আগামী ১ ডিসেম্বর শুরু হবে এসএ গেমসের ত্রয়োদশ আসর। ২৭টি ডিসিপ্লিনের মধ্যে ২৫টিতে অংশ নিবে বাংলাদেশ। অ্যাথলেটিক্স দল যাচ্ছে ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে ২২ জন নিয়ে।

চাওয়া-পাওয়ার হিসেব গতবার মেলেনি একটুও। সোনা নেই; রুপাও নেই। মাত্র দুটি ব্রোঞ্জ জয় যেন তুলে ধরেছিল অ্যাথলেটিক্সের জীর্ণতা। যুগ পেরিয়ে সোনা না পাওয়ার সময়টাকে করেছিল আরও দীর্ঘায়িত। কলম্বোতে ২০০৬ সালে মাহফুজুর রহমান মিঠুর হাত ধরে এসএ গেমসের অ্যাথলেটিক্স থেকে সবশেষ সোনার পদক (১১০ মিটার হার্ডলসে) পেয়েছিল বাংলাদেশ। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সবশেষ ১৯৯৩ সালে ঢাকায় বিমল চন্দ্র তরফদার হেসেছিলেন সোনার হাসি।

গতবার দুটি ব্রোঞ্জ এসেছিল ১০০ মিটার ও ৪০০ মিটার রিলে থেকে। প্রস্তুতির কমতি থাকলেও এবার প্রত্যাশা আছে ব্যক্তিগত ইভেন্ট নিয়ে। ৪০০ মিটারে জহির রায়হান ও হাই জাম্পে মাহফুজুর রহমানের দিকে খুব করে তাকিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।

৪০০ মিটারে গতবার ৪৬ দশমিক ২৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে সেরা হয়েছিলেন ভারতের রাজীব আরোকিয়া। গত জাতীয় অ্যাথলেটিক্সে এ ইভেন্টে ৪৬ দশমিক ৮৭ সেকেন্ড টাইমিং করা জহির তাই বেশ আশাবাদী সেরা হওয়ার প্রশ্নে।

“আল্লাহর রহমতে প্রস্তুতি ভালো। সর্বোচ্চ দেওয়ার চেষ্টা করব। ভারত ও শ্রীলঙ্কার অ্যাথলেটরা আমাদের চেয়ে এগিয়ে। দেখা যাক কি হয়? ৪৬ দশমিক ৮৭ সেকেন্ড আমার সেরা টাইমিং। এটাকে স্ট্যান্ডার্ড বলব না। তবে অনেক সময় অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে।”

হুট করে কিছু ‘ঘটে যাওয়া’তে বিশ্বাস নেই কোচ আব্দুল্লাহ হেল কাফির। মনের বল দিয়ে আর যাই হোক, অ্যাথলেটিক্স হয় না-এই তার মত। তবে প্রস্তুতির কমতি নিয়ে হতাশা থাকলেও জহির, মাহফুজদের নিয়ে প্রত্যাশা আছে কাফির।

“জুলাইয়ের ১৭ তারিখ থেকে প্রস্তুতি শুরু করেছি। প্রস্তুতি খুব ভালো সেটা বলতে পারছি না। আবার খারাপও না। যতটুকু সময় পেয়েছি, কাজে লাগিয়েছি। আশা করছি, গতবারের চেয়ে এবার ভালো হবে। পদক প্রাপ্তির সংখ্যাও বাড়বে।”

“গোল্ডের বিষয়ে….হাই জাম্পে-মাহফুজ পেতে পারে। বাকি কিছু কিছু ইভেন্টে লড়াই হবে। দ্বিতীয়/তৃতীয় হওয়ার সুযোগ থাকবে। জহির একটা পদক পাবে বলে আশা করছি। জহিরের কাছ থেকে রুপা/ব্রোঞ্জ আশা করছি। যদি এর চেয়ে ভালো ফল হয়েই যায়, সেটা প্লাস পয়েন্ট। ছেলে ও মেয়েদের রিলেতে আশা করি ভালো হবে।”

“যাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা হবে, তারা দীর্ঘমেয়াদী অনুশীলন করে। তো তাদের সঙ্গে লড়াই করতে হলে আমাদেরও সমপরিমাণ সুবিধা দিতে হবে। খেলাধুলায় মানিসক শক্তি কাজে লাগে, কিন্তু সেটা যখন ব্যবধান ১৯/২০ হয়। ১০/২০ ব্যবধান মানসিক শক্তি দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। অ্যাথলেটিক্সে তো নয়ই।”

গতবার ২ দশমিক ১৭ মিটার পেরিয়ে হাই জাম্পে সেরা হয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার মাঞ্জুলা কুমারা। চতুর্থ হন মাহফুজ (২ মিটার)। তৃতীয় ভারতের অজয় কুমার (২ দশমিক ০৮ মিটার)। জাতীয় অ্যাথলেটিক্সে অবশ্য ২ দশমিক ১৫ মিটার অতিক্রম করে রেকর্ড গড়ার কীর্তি আছে মাহফুজের। কদিন আগে ভারতের জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সে আমন্ত্রণ পেয়ে ২ দশমিক ১০ মিটার লাফিয়ে সেরা হয়েছিলেন এই অ্যাথলেট।

১০০ মিটার স্প্রিন্ট নিয়ে সে অর্থে বড় স্বপ্ন নেই। না থাকার কারণও বুঝে নেওয়া যায় গত আসরে জয়ীদের টাইমিংয়ে দৃষ্টি দিলে। গতবার ছেলেদের সেরা টাইমিং ছিল ১০ দশমিক ২৮ সেকেন্ড। মেয়েদের ১১ দশমিক ৭১ সেকেন্ড। ‍দুই বিজয়ীই শ্রীলঙ্কার। বাংলাদেশের মেজবাহ আহমেদ চতুর্থ হয়েছিলেন ১০ দশমিক ৮২ সেকেন্ড সময় নিয়ে। মেয়েদের বিভাগে সোহাগী আক্তার (১২ দশমিক ৩৭) ও শিরিন আক্তার (১২ দশমিক ৪৩) যথাক্রমে হয়েছিলেন পঞ্চম ও ষষ্ঠ।

এবার অবশ্য ১০০ মিটারে হাসান মিয়ার দিকে দৃষ্টি থাকবে। কিন্তু দেশের এই দ্রুততম মানব গত সামার অ্যাথলেটিক্সে সেরা হওয়ার টাইমিং খুব একটা আশা দেখায় না-১০ দশমিক ৬১ সেকেন্ড। শিরিনের বেলায়ও তাই-ই; ১২ দশমিক ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে সেরা হয়েছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে অনুশীলনের ফাঁকে চাওয়া-পাওয়ার অঙ্ক কষার পাশাপাশি কোচ ও অ্যাথলেটদেরকে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নেপালের উচ্চতা, ঠাণ্ডাও বেশ দুর্ভাবনায় ফেলে দিয়েছে। জহির যেমন বললেন, “উচ্চতা নিয়ে একটু চিন্তায় আছি।”

কোচ কাফিরও একই কথা, “নেপালের উচ্চতাও একটা সমস্যা। শ্বাস নেওয়ার সমস্যা হবে। তিন-চার সপ্তাহ আগে যেতে পারলে আমাদের মানিয়ে নিতে সুবিধা হতো। কিন্তু এখন তো আর সেই সুযোগ নেই। তাই ওটা নিয়ে ভেবেও লাভ নেই।”

সত্যিই তাই। লাভ-ক্ষতির হিসেব বাদ দিয়ে নেপালের মঞ্চে প্রাণপণ চেষ্টায় একমাত্র পথ জহিরদের সামনে।