স্বপ্নের ভেলায় চেপে নেপালে সাঁতারুরা

দুটি সোনা ও ১৫টি ব্রোঞ্জ, মোট ১৭টি পদক-গত দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের সাঁতার থেকে প্রাপ্তি। এবার প্রত্যাশা ডানা মেলেছে-ব্রোঞ্জগুলোর রং যদি সোনায় বদলে নেওয়া যায়! সাঁতারুদের চোখেও সেই রং বদলে নেওয়ার লুকোচুরি খেলা।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2019, 03:40 PM
Updated : 17 Nov 2019, 03:49 PM

নেপালের কাঠমাণ্ডু ও পোখারায় আগামী ১ ডিসেম্বর শুরু হবে এসএ গেমসের ত্রয়োদশ আসর। ২৭টি ডিসিপ্লিনের মধ্যে ২৫টিতে অংশ নিবে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালের এসএ গেমসে সোনা-রুপা-ব্রোঞ্জ মিলিয়ে জেতা ৭০টি পদকের মধ্যে ১৭টিই ছিল সাঁতারে।

বাংলাদেশের পুলগুলো ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের। নেপালে লড়াই হবে ২৫ মিটারের পুলে। ডিসেম্বরে দেশটিতে ঠাণ্ডাও থাকবে বেশি। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে রোববার নেপালে রওনা দিয়েছে ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে ২২ জনের দল। এর মধ্যে ১০ জনের আছে এসএ গেমসের অভিজ্ঞতা। বাকিরা নতুন। ট্যালেন্ট হান্ট থেকে উঠে আসা ৬ সাঁতারুও সুযোগ পাবেন নেপালের পুলে ঝড় তোলার।

গত এসএ গেমসে ৭টি ব্রোঞ্জ জিতে ‘ব্রোঞ্জবয়’ খেতাব পাওয়া মাহফিজুর রহমান সাগর কিংবা গত জাতীয় সাঁতারে আটটি রেকর্ডসহ ৯টি সোনা জেতা ইংল্যান্ড প্রবাসী জুনাইনা আহমেদ, সবাই পাখির চোখ করেছেন নেপালের আসরকে। ৫০ ও ১০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে গতবার সেরা হওয়া মাহফুজা খাতুন শীলা সরে দাঁড়ানোয় তার ঝাণ্ডা থাকবে জুনাইনার হাতে।

সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এমবি সাইফ জানালেন, জুনাইনা ও গত জাতীয় সাঁতারে পাঁচটি সোনা জেতা আরিফুল ইসলামের কাছে বেশি প্রত্যাশার কথা।

“দলের অধিকাংশের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। জুনাইনা, আরিফুল ও রোমানার ওপর প্রত্যাশাটা একটু বেশি। কারণ, এদের টাইমিং এসএ গেমসে যারা সোনা জিতে তাদের কাছাকাছি।”

“নেপালে আগের দুটো এসএ গেমসে আমাদের রেকর্ড ভালো না। এজন্য চিন্তিত। সেখানে আমাদের সাঁতারুদের প্রধান সমস্যা মূলত দুটি। প্রথমত, খেলা হবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উচ্চতায়। দ্বিতীয়ত, আমরা এখানে ৫০মিটার পুলে খেলি, কিন্তু সেখানে হবে ২৫মিটার পুলে। এজন্য তাড়াতাড়ি নেপাল যাওয়া; যাতে পরিবেশ ও তাপমাত্রার সাথে সমন্বয় করতে পারে সাঁতারুরা।”

বয়সভিত্তিক ও সিনিয়র পর্যায়ে আলো ছড়ানো আরিফুল আশাবাদী নিজের প্রিয় ইভেন্ট ৫০ ও ১০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোক নিয়ে। ২১ বছর বয়সী এই সাঁতারু জানালেন ফ্রান্সে স্কলারশিপ নিয়ে অনুশীলনের মধ্যে থাকায় উন্নতি হওয়ার কথাও।

“টোকিও অলিম্পিকের জন্য ফ্রান্সে একটি স্কলারশিপ পোগ্রামে এক বছর ধরে আছি। দুই বছরের স্কলারশিপ। এর ওপর ভিত্তি করেই আমার ওপর ফেডারেশনের এত প্রত্যাশা। আশা করি তাদের আশা পূরণ করতে পারব।”

“৫০ ও ১০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে আমার ভালো করার সম্ভাবনা আছে। এ দুটিতে সোনাও জেতা সম্ভব, রুপা পেতে পারি। পদক থাকবে এটা নিশ্চিত। ২০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোক ও রিলেতে পদক থাকবে আশা করি।”

“ভারত-শ্রীলঙ্কার সাঁতারুরা ১০০মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে করে ১ দশমিক ০২ মিনিট আর আমি করি ১ দশমিক ৩ মিনিট। তো প্রতিপক্ষ যদি কোনো ভূল করে আমার সুযোগ থাকবে সোনা জেতার।”

২ মিনিট ৪৯ দশমিক ৬০ সেকেন্ড সময় নিয়ে গতবার ২০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন রোমানা। কিশোরগঞ্জের নিকলী থেকে উঠে আসা এই সাঁতারু ভালো কিছুর প্রত্যাশা নিয়েই যাচ্ছেন নেপালে।

“এর আগে একটি এসএ গেমসে অংশগ্রহণ করেছিলাম, (গতবার) যেখানে ২০০মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে একটি ব্রোঞ্জ জিতেছিলাম। সামান্যর জন্য আমার সোনা জেতা হয়নি। অভিজ্ঞতা কম ছিল, এটাও একটা কারণ। সে হিসেবে সবার প্রত্যাশা এখন আগের থেকে বেশি। আশা করি ভালো কিছু করার।”

গতবার রোমানার এই ইভেন্টে ২ মিনিট ৪৮ দশমিক ৮৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে পাকিস্তানের প্রতিযোগী সেরা হয়েছিলেন। রুপা জেতা শ্রীলঙ্কার সাঁতারুর টাইমিং ছিল ২ মিনিট ৪৯ দশমিক ১৭ সেকেন্ড।

৩৪ দশমিক ৮৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে ৫০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে গতবার সেরা হয়েছিলেন শীলা। এবার এই ইভেন্টে রোমানার সঙ্গে বৃষ্টি খাতুনও নামতে পারেন। বৃষ্টির সেরা টাইমিং ৩৭ সেকেন্ডের একটু বেশি। আশাবাদী এই সাঁতারুও।

“গত এশিয়ান গেমসে শারীরীকভাবে অসুস্থ ছিলাম; তাই আশানুরুপ টাইমিং হয়নি। এবার ভালো প্রস্তুতি হয়েছে জাপানিজ কোচের তত্ত্বাবধানে। সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। নিজের সেরা টাইমিং গড়ার চেষ্টা করব। ৫০মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে আমার সেরা টাইমিং ৩৭ সেকেন্ড। শীলা আপুর রেকর্ড আছে ৩৪ সেকেন্ডের একটু বেশি; চেষ্টা করব নিজের সেরাটা দিতে। লক্ষ থাকবে দেশকে সোনা উপহার দিতে।”

পদকের রং বদলে দেওয়ার প্রত্যয় সবচেয়ে বেশি সাগরের। গতবার যে সাত ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন এই সাঁতারু!

“লক্ষ্য থাকবে সেরাটা দেয়ার। প্রত্যাশা সোনা জেতা। আগেরবার ভালো টাইমিং করেও ৭টা ব্রোঞ্জ জিতেছিলাম। চেষ্টা করতেছি ব্রোঞ্জগুলোকে সোনা, রূপায় রূপান্তরিত করার। ১০০ অথবা ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইলের যেকোনো একটায় হতে পারে (সোনা)। এই দুটোয় তুলনামুলক কাছাকাছি আছে, তাই আশা করছি।”

দল: মাহফিজুর রহমান সাগর,  মাহমুদুন্নবী নাহিদ, আসিফ রেজা, জুয়েল আহমেদ, সুকুমার রাজবংশী, মামুনুর রশিদ, নূর আলম, ফয়সাল আহমেদ, পলাশ চৌধুরী, জামরুল মিয়া, আরিফুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, অনিক ইসলাম, সোনিয়া আক্তার টুম্পা, সোনিয়া খাতুন, সুরাইয়া আক্তার, নাঈমা আক্তার, ছুম্মা খাতুন, রোমানা আক্তার, খাদিজা আক্তার, মুক্তি খাতুন ও জোনায়না আহমেদ।