জামাল ভূইয়া বিশ্রামে থাকায় মোহনবাগান ম্যাচে মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পান তিনি এবং সফলও হন। গোকুলাম কেরালা এফসিকে হারিয়ে চট্টগ্রাম আবাহনীর শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের ফাইনালে ওঠার মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেও মাঝমাঠের মধ্যমণি ছিলেন মানিক। কোচ মারুফুল হক তাই বলতে পারছেন জামাল-মানিক জুটিতে মাঝমাঠ নিয়ে তার চিন্তা যতটা কমেছে, আক্রমণের ধারও বেড়েছে ততটাই।
Published : 29 Oct 2019, 05:06 PM
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস অনেক ঢাক-ঢোল পিটিয়ে এসে বিদায় নিয়েছে গ্রুপ পর্ব থেকে। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে দেশি দলের প্রতিনিধি হিসেবে টিকে আছে কেবল চট্টগ্রাম আবাহনী।
গ্রুপ পর্বের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ভারতের দল গোকুলামকে ৩-২ গোলে হারিয়ে উঠে এসেছে ফাইনালের মঞ্চে। ২০১৫ সালে প্রতিযোগিতার প্রথম আসরের শিরোপা জেতা বন্দরনগরীর দলটি উন্মুখ হয়ে আছে আগামী বৃহস্পতিবারের ফাইনালে হারানো মুকুট পুনরুদ্ধার করতে। মুকুট ফিরে পাওয়ার মন্ত্র থেকে শুরু করে দলের অনেক বিষয় নিয়ে মারুফুল বললেন অনেক কথা।
সবার আগে সেমি-ফাইনালে উঠলেন। দলটাকে এত অল্প সময়ে গুছিয়ে নিলেন কিভাবে?
মারুফুল হক: মৌসুমের শুরু থেকে ট্রেনিং শুরু করেছি। যদিও জানতাম, যাদের নিয়ে কাজ শুরু করেছি, তাদের মধ্যে ৫০ ভাগকেও আমি পাব না। তারপরও আমার স্টাইলেই কাজ শুরু করেছি। পরে দুজন বিদেশি, পাঁচজন জাতীয় দলের খেলোয়াড় যোগ দিয়েছে। তাদেরকেও বার্তা দিয়েছি, চট্টগ্রাম আবাহনী যেহেতু প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন-পরেরবার জিততে পারেনি, কিন্তু এবার আমরা শিরোপা জিততে চাই। সে অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।
নিজের স্টাইল নিয়ে যদি একটু বলতেন……..
মারুফুল: আমার খুব কমন একটা স্টাইল আছে, যেটা এতদিন মিডিয়ার কেউ জানত না; সেটা হচ্ছে একজন খেলোয়াড় বা দল যদি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগে মানসিকভাবে চ্যাম্পিয়ন না হতে পারে, তাহলে সে কখনও সেরা হতে পারে না। এই টুর্নামেন্টের আগে ছেলেদের মাথায় একটা কথা ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি যে, মানসিকভাবে চ্যাম্পিয়ন হও। তারপর ট্যাকটিক্যালি চ্যাম্পিয়ন হও। যখন তুমি মানসিকভাবে চ্যাম্পিয়ন হবে তখন তোমার অ্যাপ্রোচ, সবকিছুই বদলে যাবে। হঠাৎ করে সেমি-ফাইনালে খেলতে এসে যদি বলা হয়, এখন আমরা চ্যাম্পিয়ন হব, তাহলে ওই পরিবর্তনটা আসে না। ওটা ছেলেদের জন্য তখন চাপ হয়ে যায়। তাই চাপটা আগে থেকে দিয়ে দেওয়া, যাতে সে মানিয়ে নিতে পারে।
মারুফুল: আগেও বলেছি মানিক আমার বেস্ট চয়েস। সে একজন মেধাবী খেলোয়াড়। বিশ্বমানের মিডফিল্ডাররা যেভাবে মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণ করে, বল নিয়ন্ত্রণ করে, মানিক সেভাবে করে। মানিকের কারণে জামাল ফ্রি হয়েছে। আক্রমণে যাওয়ার, প্রতিপক্ষের রক্ষণে চাপ দেওয়ার সুযোগও বেশি তৈরি হয়েছে।
আক্রমণভাগ নিয়ে….বিশেষ করে লুকা রতকোভিচ সেমি-ফাইনালে ছিলেন বিবর্ণ।
মারুফুল: লুকা খুবই ভালো খেলোয়াড়। কালও বলেছি, ম্যাচ নিয়ে সে খুব বেশি এক্সাইটেড ছিল। যখন এক্সাইটমেন্ট বেশি থাকে, তখন কিন্তু ভুলটাও বেশি হয়।
লুকার খেলার যে স্টাইল-আপনারা দেখে থাকবেন টেরেঙ্গানুর যে স্ট্রাইকারটার (ব্রুনো সুজুকি) মতো। কিন্তু ওকে আমরা বলের জোগান দিতে পারছি না। ওর টাইমিং ঠিক আছে কিন্তু বলের জোগানটা হচ্ছে না। বল দিতে দেরি হওয়াতে সে অফসাইডের ফাঁদে পড়ছে। কিন্তু লুকাকে ছাড়া ভাবার অপসন নেই। কেননা, প্রিন্স ট্যাগোকে খেলাতে পারছি না।
গত দুই ম্যাচ মিলিয়ে তিনটি গোলই চট্টগ্রাম আবাহনী হজম করেছে কাছের পোস্ট দিয়ে। ফাইনাল সামনে রেখে এ জায়গা নিয়ে কোনো দুর্ভাবনা?
এখন আর দুঃশ্চিন্তার জায়গা নেই। এ দিকটায় উন্নতি করতে হবে। কাজ করতে হবে। এক দিনে আমূল পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তারপরও যতটা সম্ভব ভুলের মাত্রা কম করা যায়।
দলের সর্বকণিষ্ঠ ইয়াসিন আরাফাত, লেফট উইংয়ে খেলা আরেক তরুণ আরিফুর রহমান…
মারুফুল: ওর (আরাফাত) সবকিছু ঠিক আছে কিন্তু ম্যাচিউরিটি প্রয়োজন। এখনও সে আবেগ নিয়ে খেলে। যখন ম্যাচিউরিটি আসবে, তখন খুবই ভালো খেলোয়াড় হয়ে উঠবে। তবে এই টুর্নামেন্টে ইয়াসিনের কাছে আমার যে প্রত্যাশা ছিল, সে সেটা পূরণ করেছে।
আরিফুরকেও সময় দিতে হবে। ম্যাচিউরিটি আসতে হবে। লিগের খেলা আর আন্তর্জাতিক ফুটবল এক নয়। সোহেল রানাকে ১০ নম্বর জার্সি কেন দিয়েছি? অ্যাটাকিং থার্ডে এমন কোন পরিজশন নেই, যেখানে সে কার্যকর নয়। যেকোনো জায়গায় সে খেলতে পারে।
রক্ষণভাগে ইকবল জন, রিয়াদুল ইসলাম রাফি গত ম্যাচে পেরে উঠছিল না প্রতিপক্ষের ফরোয়ার্ডদের সঙ্গে…
তারপরও ছেলেদের মাঠের পারফম্যান্স আমার দৃষ্টিতে ৮০% ঠিক আছে। কিন্তু সামর্থ্যের দিক থেকে বিবেচনা করলে ছেলেরা ১৫০% দিয়েছে। কেননা, সামর্থ্যের পার্থক্য থাকে। আমি মনে করি, আরও ৫০% দেওয়ার মতো ক্ষমতা আছে এই দলটার।
সামর্থ্য বাড়ানোর জন্য ক্লাবগুলোর খেলোয়াড়দের ফিটনেসের দিকে দৃষ্টি দেওয়াটা কিভাবে দেখছেন?
মারুফুল: ক্লাব লেভেলে ফিটনেস নিয়ে সচেতনতা বাড়ছে। আগে যেমন মৌসুম শুরুর সাত দিন আগে এসে অনুশীলন করে টিমে ঢুকে যেত। এখন আর সেটা হয় না। এখন বড় দল যারা আছে, তারা তো বটেই, ছোট দলগুলোও প্রি-সিজন শুরু করে। চার সপ্তাহের নিচে কেউ ট্রেনিং করে না। কোনো কোনো দল তো ৮/১০ সপ্তাহও করে। গত মৌসুমে আমি দেখেছি তিনটা টিম অন্তত তিনমাস ট্রেনিং করেছে। যারা লম্বা সময় ধরে ট্রেনিং করিয়েছে তাদের খেলোয়াড়রাই কিন্তু জাতীয় দলে। এতে করে খেলোয়াড়দের ফিটনেস ও সার্বিক খেলায় উন্নতি হয়েছে। আমি মনে করি, এতে তাদের খেলার সামর্থ্য ৯০ থেকে ১২০ মিনিটে পৌঁছেছে।
এবার ঝটপট প্রশ্ন। আপনার এই দলটার সবচেয়ে ভালো দিক?
মারুফুল: টিম বন্ডিং সবচেয়ে ভাল দিক। মনে হয় একটা সুখী সংসারের মতো।
মন্দ দিক?
মারুফুল: (হাসি) এখনও পাইনি।
দলের প্রাণভোমরা
মারুফুল: নির্দিষ্ট কেউ নেই। আগেই বলেছি, ৩/৪ জন আছে যাদের নিয়ে পরিকল্পনা সাজায় এবং তারাই মাঠে নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করে। অবশ্যই জামাল তাদের একজন। এছাড়া মানিক, চার্লস দিদিয়ের, চিনেডু ম্যাথিউ আছে।
প্রতিদ্বন্দ্বিতার দিক থেকে এবারের আসর কেমন?
মারুফুল: তিনটি আসরই তো দেখলাম। এ বছর অনেক মানসম্পন্ন দল এসেছে। ম্যাচগুলো খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে।
শেষ প্রশ্ন। ফাইনাল নিয়ে?
মারুফুল: আমরা ট্রফির জন্যই খেলবো।