ব্রাজিল ডাকে ‘জাপানের ব্রুনোকে’

জন্ম ব্রাজিলে। বেড়ে ওঠা জাপানে। বর্তমানে খেলছেন মালয়েশিয়ার দল টেরেঙ্গানু এফসিতে। ব্রুনো জুনিসি সুজুকি কাস্তানেইরা যেন ‘যাযাবর’। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় ‘অর্ধেক ব্রাজিলিয়ান-অর্ধেক জাপানী’ এই ফরোয়ার্ড জানালেন, ভেতর থেকে একটা টান অনুভব করেন-একদিন ফিরে যাবেন ব্রাজিলে।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরচট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2019, 10:46 AM
Updated : 23 Oct 2019, 11:06 AM

বাবা ব্রাজিলিয়ান। মা জাপানী। শৈশব কেটেছে ব্রাজিলের পারা রাজ্যের বেলেমে। আমাজনের কাছাকাছি অঞ্চল। ছয় বছর বয়সে বাবা-মায়ের হাত ধরে জাপানে পাড়ি জমানোর গল্পটা মোটেও সুখের ছিল না ব্রুনোর জন্য। বন্দুকের ট্রিগার টেপার ভঙ্গি করে বলতে থাকেন সেখানকার পরিবেশ।

“আমাজনের কাছাকাছি অঞ্চলে আমরা থাকতাম। জায়গাটা নিরাপদ ছিল না। মা ভয় পেতেন। তো ঠিক করা হলো তিন বছরের জন্য জাপানে যাই, সেখানকার পরিবেশটা দেখি….। জাপানে এসে সবাই নিরাপদ বোধ করতে লাগল। থেকে যাওয়া হলো। আমি এখন জাপানী পাসপোর্ট ব্যবহার করি।”

জাপানে পাড়ি জমানোর পরের বছর ফুটবলে হাতে খড়ি। যুব ক্যারিয়ারে তিনটি দলে খেলার পর ২০০৯ সালে সিনিয়র ক্যারিয়ার শুরু। ২০১৩ সালে সিঙ্গাপুরের লিগ ঘুরে তিন বছর পর ফিরলেন জাপানে।

২০১৮-তে টেরেঙ্গানুর ‘বি’ দলে যোগ দেওয়ার কিছু দিন পরই মূল দলে ঠাঁই পেলেন ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি লম্বা এই ফরোয়ার্ড। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগের মতো সুপার লিগে ভালো করতে পারেননি। ফিরে গেলেন ‘বি’ দলে। সুপার লিগের দলে ফেরার লক্ষ্য নিয়ে চট্টগ্রামের আসরে খেলতে এসেছেন ২৯ বছর বয়সী ব্রুনো।

শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে খেলতে এসে প্রথম ম্যাচে করেছেন চার গোল। তার নৈুপণ্যে ভারতের আই লিগের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সিটি এফসিকে উড়িয়ে দিয়েছে টেরেঙ্গানু। ব্রুনোর স্বপ্নও ডানা মেলতে শুরু করেছে।

“আগেও হ্যাটট্রিক করেছি, কিন্তু এই প্রথম চার গোল করলাম। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার লক্ষ্যটা স্থির করব না কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে চাই। এ টুর্নামেন্টে যোগ করতে চাই ব্রাজিলিয়ান-জাপানী দুই দেশের ফুটবলের ফ্লেভার (হাসি)।”

চাওয়ার শেষ নেই ব্রুনোর। কিন্তু বয়সের দিকে তাকিয়ে তালিকাটা ছোট রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। জানেন ফুটবলার হিসেবে ব্রাজিলে ফেরার সুযোগ নেই। জাপানেও বেশি কিছু করার সুযোগ কম। তাই ঘাড়ে ট্যাট্টু আঁকিয়েছেন ‘বিলিভ’, নিজের প্রতি বিশ্বাসটুকু যেন ফুরিয়ে না যায় দ্রুত।

“এ বছরই এটা আঁকিয়েছি। যেন নিজেকে বিশ্বাস করতে পারি; নিজের প্রতি আস্থা রাখতে পারি যে আমি আরও ভালো ফুটবল খেলতে পারি। বলতে পারো, এই বিশ্বাসের কারণে এখানে এসে এক ম্যাচে চার গোল করেছি, যেটা আগে কখনই পারিনি।”

প্রিয় ফুটবলার ‘দ্য ফেনোমেনোন’ রোনালদো। ক্লাব ফুটবলে প্রিয় দল বার্সেলোনা। জাপানের চেয়ে ব্রাজিলের ফুটবল বেশি টানে বলেও জানালেন ব্রুনো।

“রোনালদো-দ্য ফেনেমেনোন আমার আইডল। ভালো লাগে নেইমারকে, কৌতিনিয়োকে। নেইমার এখন পিএসজিতে, এখন ওদের খেলা দেখি। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলকে পছন্দ করি জাপানের চেয়ে। “

“যদি আমি ব্রাজিলে থাকতাম, হয়তো আরও ভালো খেলোয়াড় হতাম। যদিও ব্রাজিলে বেশি দিন থাকিনি। কিন্তু ছোট বেলায় দেখতাম সেখানে সবাই ফুটবল খেলে। ব্রাজিলে থাকলে হয়ত জীবনটাও অন্যরকম হতো।”

জন্মভূমি ব্রাজিলের জন্য তাই নাড়ির টান অনুভব করেন ব্রুনো। জীবনের নিয়মে কেঁটে যাওয়া জাপানের কাঠখোট্টা, নিষ্প্রাণ জীবনের চেয়ে সাম্বার নৃত্যে মেতে থাকা ব্রাজিল তাকে ডাকে, প্রতি-ক্ষণে।

“যদিও ছোট ছিলাম (ব্রাজিলে থাকাকালীন), কিন্তু এখনও আমি মনে করতে পারি ব্রাজিলের জীবনটা। অনেক পার্টি, অনেক মজা হয় সেখানে। পার্টি আর পার্টি। মোজ-মাস্তি। জাপানে শুধু কাজ আর কাজ। একদিন না একদিন ব্রাজিলে ফিরে যেতে চাই আমি।”