‘ভারতকে হারানোর সুযোগ আমাদের আছে’

বরাবরই জেদী তিনি। মুখিয়ে থাকেন চ্যালেঞ্জ নিতে। জাতীয় দল তো বটেই, নতুন দল বসুন্ধরা কিংসের রক্ষণেও প্রাণভোমরা ইয়াসিন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় খুঁলে দিলেন সব মনের জানালা।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরচট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2019, 06:56 AM
Updated : 20 Oct 2019, 11:02 AM

সল্ট লেকে ভারতকে আটকে দেওয়া, ক্যারিয়ারের চোটাক্রান্ত সময়, নিষেধাজ্ঞার দুঃসহ দিনগুলো, শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের লক্ষ্য নিয়ে মিতভাষী এই ডিফেন্ডার কথা বললেন মন খুলে।

১৯৯৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর জন্ম। বেড়ে ওঠা বরিশালের মুলাদিতে। ২০১০ সালে প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে অভিষেক। এরপর শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব ঘুরে নোঙর ফেলেছেন কিংসে। ২০১৪ সালে গোয়ায় ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে জাতীয় দলে অভিষেক।

নানা বাক বদলের পর রক্ষণের নির্ভরযোগ্য সেনানি হয়ে ওঠা ইয়াসিন জানালেন, কেবল ভারত নয়, অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দলেরও ঘাম ছুটিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য এখন তাদের আছে।

বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আপনার দারুণ পারফরম্যান্সের প্রশংসায় পঞ্চমুখ কলকাতার স্থানীয় সাংবাদিকরা। এবার চট্টগ্রামে এসেছেন নতুন মিশনে। চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে?

ইয়াসিন খান: চ্যালেঞ্জ তো বটেই। নতুন ক্লাব। নতুন স্বপ্ন। ভালো পারফরম্যান্স করতে হবে। ক্লাব যে আশা করে নিয়ে নিয়েছে, সেটা পূরণ করতে হবে।

কলকাতায় প্রশংসার কথাও শুনেছি। মামুন (মামুনুল ইসলাম) ভাইয়ের কাছ থেকে শুনেছিলাম মোহনবাগান আগ্রহী আমাকে নিতে কিন্তু আমি তো বসুন্ধরাতে যোগ দিয়েছি।

একটু পেছনে ফেরা যাক, সুনীল ছেত্রী-আশিক কুরুনিয়ানদের সামলাতে কোচ কি বার্তা দিয়েছিলেন?

ইয়াসিন: ও একটা কথাই বলেছিল ফুলপ্যাক স্টেডিয়াম থাকবে, আমরা যেন কোনো চাপ না নেই। মানসিকভাবে যেন আগে থেকে ডাউন না হয়ে যায়। খেলাটা উপভোগ করি।

স্টেডিয়ামে ঢুকে এত বেশি দর্শক দেখে আমরা আরও বেশি এক্সাইটেড ছিলাম। আরও ভালো করতে হবে। ওদের মাঠ থেকে পয়েন্ট নিয়ে যেতে হবে, এমন জেদ চেপে গিয়েছিল।

কিন্তু শুরুতেই তো চোট পেলেন আশিকের কনুইয়ের গুঁতোয়। বাকিটা সময় খেললেন ব্যান্ডেজ লাগিয়ে। ওই মুহূর্তে….।

ইয়াসিন: কিছুক্ষণ সেন্সলেস ছিলাম-পাঁচ-সাত মিনিটের মতো, বলতে চাচ্ছি জ্ঞান ছিল কিন্তু কোনো কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। এরপর কয়েকটা হেড দেওয়ার পর ঠিক হল কিন্তু রক্ত ঝরছিল। কোচ বারবার সাহস দিচ্ছিলেন-ইউ ক্যান ডু ইট।

আপনি ছাড়া ব্যাক লাইনে সবাই তরুণ। তখন যদি আপনাকে উঠে যেতে হত-বাড়তি দায়িত্ব কাজ করছিল?

ইয়াসিন: জেদ ছিল। দায়িত্বও ছিল। কারণ রক্ষণে একজন সিনিয়রকে লাগবে। মিডফিল্ডে জামাল তরুণদের দিয়ে খেলাচ্ছে। টিমে আমরা মাত্র কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড়।

সামনের সাফে এই তরুণরা আরও পরিণত হবে। দায়িত্ব নিবে। আমার মনে হয়, দলটা যদি এভাবেই এগুতে থাকে তাহলে সামনের সাফে ভালো একটা ফল আসবে।

সল্ট লেকের ম্যাচের পর কি মনে হচ্ছে দেশিরাই ঘরোয়াতে বিদেশিদের মতো আলো ছড়াতে পারে?

ইয়াসিন: অবশ্যই। এজন্যই কিংস বিদেশিদের এখনও সেভাবে চুক্তি করেনি। স্থানীয়দের দিয়ে ট্রাই করবে। ক্লাবের এখন বিশ্বাস আছে, স্থানীয়রাই পারবে-এ আস্থা রাখছে বসুন্ধরা কিংস।

আপনার গত মৌসুমের দল শেখ রাসেল দলগতভাবে ভালো না করলেও মাত্র ২০ গোল খেয়েছিল। যেখানে আপনার ভূমিকা ছিল অনেক। বসুন্ধরাও একই প্রত্যাশা করবে।

ইয়াসিন: আত্মবিশ্বাস তো আছে পূরণ করার। দলে এখনও বিদেশি খেলোয়াড় যোগ দেয়নি। দুজন যোগ করেছে। বখতিয়ার দুইশবেকভ রাতে এসেছে। আজ  অনুশীলন করবে।

ভারতের বিপক্ষে খেলা মোহাম্মদ ইব্রাহিম, বিশ্বনাথ ঘোষ-দুই সাইড ব্যক দলে আছে। অনুশীলনে দেখছি কোচ বেশিরভাগ সময় ওদের কাজে লাগাচ্ছে। আমার সঙ্গে একজন বিদেশি যোগ হতে পারে, স্থানীয় ফয়সালও থাকতে পারে। ওদের সঙ্গে সমন্বয় আছে। শুধু টিমের সঙ্গে আমার একটু কম্বিনেশন দরকার।

ভিন্ন প্রসঙ্গে আসা যাক, ২০১৪ সালে জাতীয় দলে যোগ দেওয়ার পর চোট পাওয়া, নিষিদ্ধ হওয়া, অনেক চড়াই উৎরাইয়ের মধ্যে দিয়ে গেছেন….

ইয়াসিন: ২০১৬ সালে লিগের একেবারে শেষ দিকে সাইফ স্পোর্টিংয়ের বিপক্ষে ম্যাচে এসিএল মিনিসকাসে চোট পেয়ে প্রায় দেড় বছর জাতীয় দলের বাইরে ছিলাম। ওই সময় পরিবারের কাছ থেকে পুরোপুরি সমর্থন পেয়েছি। মাস দুয়েক বিশ্রাম নেওয়ার পর একা একাই অনুশীলন করে পরে যোগ দিলাম শেখ রাসেলে। ওই সময় জাতীয় দলে যোগ দিলাম, ২০১৮ সালের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ খেললাম।

২০১৬ সালের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সময়ের নিষেধাজ্ঞায় আসলে আমার কোনো দোষ ছিল না। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল মাফ চাইলে তো আর ভুল সংশোধন হবে না। শাস্তিটা শেষ করে নতুন করে শুরু করি।

নতুন শুরুতে রক্ষণের পুরানো সঙ্গী তপু বর্মনকে মিস করেন না?

ইয়াসিন: আসলে বাংলাদেশ টিমেও খেলা এখন কঠিন। যে সুযোগ পাচ্ছে, সে-ই ভালো করছে। রাফি (রিয়াদুল ইসলাম) শেষ কয়েকটা ম্যাচে ভালো করেছে, যে কারণে বাদশাকে (টুটুল হোসেন) বসিয়ে রাখতে হচ্ছে কোচকে। আমি চোটে পড়লে দেখা যাবে, যে সুযোগ পাবে সে ভালো করবে।

ফিটনেস ভালো আছে বলে আমাদের এখনকার খেলোয়াড়রা পুরো নব্বই মিনিট একই ছন্দে খেলা চালিয়ে যেতে পারছে। ফিটনেস বাড়ার কারণ এখন ফেডারেশন, ক্লাব যে ফ্যাসিলিটিজ দিচ্ছে, যেটা আগে ছিল না।

ফিটনেসের সঙ্গে টেকনিক্যাল-ট্যাকটিক্যাল দিকেও উন্নতি হয়েছে। আগে যেমন ডি-বক্সের বাইরে অনাকাঙিক্ষত ফাউল করত ডিফেন্ডাররা।

ইয়াসিন: এগুলো অনুশীলনে বোঝানো হয়েছে। আক্রমণের চ্যানেলগুলো ব্লক করে রাখলে আসলে ফাউল করা লাগে না। বল এমনিতেই প্রতিপক্ষের পা থেকে নিজেদের পায়ে চলে আসে। কোচ চাপ না নিতেও বলেন, ফলে এ দিকটায় আমাদের উন্নতি হয়েছে।

কিন্তু ভারতের বিপক্ষে তো রক্ষণের ভুলেই শেষ মুহূর্তে গোল খেতে হয়েছে দলকে। অধিনায়ক বলেছেন রবিউল হাসানের ভুল ছিল।

ইয়াসিন: আদিলকে মার্কিংয়ের দায়িত্ব আমারই ছিল কিন্তু শেষ দিকে আমি আর পারছিলাম না।  আসলে সামনে রবিউল ছিল, বলও সেখানে পড়েছিল। ও যদি আরেকটু এলার্ট থাকত, তাহলে গোলটা হতো না। কিন্তু যেটা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে। ওটা নিয়ে পড়ে থাকলে তো আর চলবে না।

ভারতের বিপক্ষে নিজেদের মাঠে কি আপনারা এগিয়ে থাকবেন?

ইয়াসিন: এটা আপনারা ধরে রাখতে পারেন, আমাদের মাঠ থেকে ওদের তিন পয়েন্ট নিয়ে যাওয়াটা খুবই কঠিন হবে। ম্যাচটা আমি যতদূর শুনেছি সিলেটে হবে। ওখানে টিকেট আগে থেকেই বিক্রি হয়ে যাবে। গ্যালারিতে আমাদের সমর্থক থাকবে।

আমাদের ৩ পয়েন্ট পাওয়ার সুযোগ তো আছেই। আমাদেরও ভালো পারফরম্যান্স করতে হবে। ওখানে আমাদের দর্শক থাকবে। কেবল ভারত নয়, এখন যদি আমরা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও খেলি, ওরাও অতটা সুবিধা করতে পারবে না। যেটা পেরেছিল ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে।