স্বদেশের ফুটবলারদের মধ্যে রোনালদোর ধারে কাছে নেই কেউ। সাতশ ছুঁতে ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে মোট ৯৭৩ ম্যাচ খেলেছেন রোনালদো-এর মধ্যে ৪৫৮টি ম্যাচে পেয়েছেন জালের দেখা।
বয়স হয়ে গেছে ৩৪, আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি পূর্ণ করবেন ৩৫ বছর। তবে যে দাপটের সঙ্গে খেলে চলেছেন তাতে সেটা যেন শুধুই সংখ্যা। এবারের ইউরো বাছাইয়ে টানা চার ম্যাচে পেয়েছেন গোল। গত সেপ্টেম্বরে লিথুয়ানিয়াকে ৫-১ ব্যবধানে উড়িয়ে দিতে একাই করেন চার গোল। গত চার ম্যাচে তার মোট গোল সাতটি।
‘এলিট গ্রুপে' রোনালদো
এমন এক কাতারে উঠেছেন রোনালদো যেখানে শুধু কিংবদন্তিদেরই বসবাস, যারা করেছেন ক্যারিয়ারে কমপক্ষে ৭০০ গোল।
আগের প্রজন্মের ফুটবলে ও ছোট ছোট লিগগুলোর পরিসংখ্যান নিয়ে সুনিশ্চিত হওয়াটা কঠিন। তবে আনঅফিসিয়াল পরিসংখ্যানবিদদের সংগঠন ‘আরএসএসএসএফ'’ এর হিসাব অনুযায়ী, সাবেক অস্ট্রিয়া ও তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার স্ট্রাইকার ইয়োসেফ বিকান কমপক্ষে ৮০৫ গোলে নিয়ে আছেন তালিকায় সবার ওপরে।
৭৭২ গোল নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছেন রোমারিও। একমাত্র ফুটবলার হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জেতা পেলে ৭৬৭ গোল করে আছেন তিন নম্বরে।
এই দুই ব্রাজিলিয়ানের পরেই আছেন হাঙ্গেরিয়ান গ্রেট পুসকাস, তার গোল সংখ্যা ৭৪৬। ১৯৭৪ সালে জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক জার্ড মুলার ৭৩৫ ক্যারিয়ার গোল নিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন শীর্ষ পাঁচে।
৭০০ গোল যাদের:
খেলোয়াড় | জাতীয়তা | মূল ক্লাব | গোল | গোলের সময়কাল |
ইয়োসেফ বিকান | চেক-অস্ট্রিয়ান | রাপিড ভিয়েনা, স্লাভিয়া প্রাগ | ৮০৫ | ১৯৩১-১৯৫৫ |
রোমারিও | ব্রাজিলিয়ান | ভাস্কো দা গামা, পিএসভি, বার্সেলোনা | ৭৭২ | ১৯৮৫-২০০৭ |
পেলে | ব্রাজিলিয়ান | সান্তোস, নিউ ইয়র্ক কসমস | ৭৬৭ | ১৯৫৭-১৯৭৭ |
ফেরেঙ্ক পুসকাস | হাঙ্গেরিয়ান | বুদাপেস্ট হনভেদ, রিয়াল মাদ্রিদ | ৭৪৬ | ১৯৪৩-১৯৬৬ |
জার্ড মুলার | জার্মান | বায়ার্ন মিউনিখ | ৭৩৫ | ১৯৬২-১৯৮১ |
ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো | পর্তুগিজ | সোর্তিং, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, ইউভেন্তুস | ৭০০ | ২০০২-বর্তমান |
গোলে ভরা ক্যারিয়ার
গোল মেশিন রোনালদোয় সবচেয়ে লাভবান হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।
ক্যারিয়ারের শুরুতে স্বদেশের ক্লাব স্পোর্তিংয়ের হয়ে ৫ গোল করা রোনালদো ২০০৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে করেছিলেন ১১৮টি। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের ক্লাবটিতে ৯ বছরের ক্যারিয়ারে ৪৫০ গোল করেন রোনালদো, যা ক্লাবটির সর্বোচ্চ।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে এখন পর্যন্ত তার মোট গোল ৯৫টি। পর্তুগালের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা পাউলেতার সংখ্যাটা রোনালদোর অর্ধেকেরও কম, মাত্র ৪৭।
রোনালদোর প্রিয় প্রতিপক্ষ
জাতীয় দলের হয়ে রোনালদো সবচেয়ে বেশি পুড়িয়েছেন অ্যান্ডোরা, লাটভিয়া ও সুইডেনকে। এই দলগুলোর বিপক্ষে পাঁচটি করে গোল করেছেন তিনি। আর এস্তোনিয়া, ফারো আইল্যান্ডস, হাঙ্গেরি, লিথুয়ানিয়া, লুক্মেমবার্গ ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে করেছেন সমান চারটি করে।
প্রাপ্তিতে ভরা ক্যারিয়ারে আছে কিছু অপূর্ণতাও। এই যেমন ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কখনোই জালের দেখা পাননি তিনি।
ক্লাব ফুটবলে রোনালদোর বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি ভুগেছে সেভিয়া। স্প্যানিশ ক্লাবটির বিপক্ষে রেকর্ড ২৭ গোল করেছেন তিনি। আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ২৫, গেতাফের বিপক্ষে ২৩, সেল্তা ভিগোর বিপক্ষে ২০ ও বার্সেলোনার বিপক্ষে ১৮ গোল করেছেন পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার।
সামনে বাকি কী
ফুটবলের বিশাল পরিসরে রোনালদোর রেকর্ডের তালিকাটাও অনেক লম্বা। কোনো বিশেষ একটার কথা বলুন, দেখবেন তিনি হয়তো ভেঙে ফেলেছেন সেটা। তাহলে সামনে তার আর কি পাওয়ার আছে? তারপরও আছে বেশ কিছু...।
এ মাসের শুরুতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বায়ার লেভারকুজেনের বিপক্ষে জালে বল পাঠানোর পর রোনালদোর ক্লাব গোল এখন ৬০৫। মেসির (৬০৩) চেয়ে দুটি বেশি।
ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের গোলদাতাদের তালিকায় সমান ৪১৯ গোল করে যৌথভাবে শীর্ষে আছেন মেসি ও রোনালদো। রোনালদোর গোল যদিও ৪২২টি; তবে পর্তুগালের লিগ শীর্ষ পাঁচ লিগে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় স্পোর্তিং লিসবনের হয়ে তার করা তিন গোল এখানে বিবেচ্য নয়।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে এখন পর্যন্ত চার গোল করেছেন রোনালদো। পুসকাস ও আলফ্রেদো দি স্তেফানোর সাত গোলের রেকর্ড ভাঙতে এখনও তার চাই আরও চার। আর রায়ান গিগসের টানা ১৬ আসরে গোল করার রেকর্ড ছুঁতে আগামী মৌসুমেও প্রতিযোগিতাটিতে গোল করতে হবে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে।