আর্জেন্টিনায় এক রিকেলমে, ব্রাজিলে শতাধিক!

আর্জেন্টিনায় হুয়ান রোমান রিকেলমে আছেন একজনই, জাদুকরী ফুটবলে যিনি মোহিত করে রেখেছিলেন গোটা এক প্রজন্মকে। আর ব্রাজিলে? প্রতিবেশী ফুটবল-পাগল দেশটিতে ‘রিকেলমে’ আছে শতাধিক!

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Oct 2019, 06:58 PM
Updated : 8 Oct 2019, 07:16 PM

ফুটবলে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। তারপরও ব্রাজিলের ভাস্কো দা গামা ক্লাবে এক লেফট ব্যাক আছেন, যার নাম রিকেলমে ভিয়ানা। আরেক জনপ্রিয় ক্লাব করিন্থিয়ান্স সম্প্রতি এক ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারকে দলে নিয়েছে, নাম রিকেলমে রদ্রিগেস মেন্দেস।

চলতি বছর ফ্লামিঙ্গোর অনুশীলন ক্যাম্পে আগুনে প্রাণ হারানো খেলোয়াড়দের একজনের নাম ছিল রিকেলমে দি সুজা ভিয়ানা।

এক অনুসন্ধানে রয়টার্স দেখেছে ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন রিকেলমে নামে ১১০ জন ফুটবলারের নিবন্ধন করেছে। ভিন্ন বানানে রিকেলমে নামে আছে আরও ৪১ জন। বানানের বৈচিত্র্য আছে বটে, তবে নাম রিকেলমেই। বানান কেউ লেখেন ‘কিউইউ’ দিয়ে কেউ বা ‘কে’ দিয়ে। কেউ বা নামের পেছনে ‘ই’ এর জায়গায় লেখেন ‘ও’ কেউবা ‘ওয়াই’।

আর্জেন্টিনার প্লেমেকার হুয়ান রোমানকে নিয়ে আবেগ একটু বেশি ক্রুজেইরোতে। সেখানে বয়স ভিত্তিক একটি দলে চার জন খেলোয়াড় আছে তার নামে। এতে অবশ্য খুব একটা অবাক নন অনূর্ধ্ব-১৭ দলের কোচ আলেকজান্দার গ্রাসেলি।

“এটা মজার। কখনও কখনও আপনি পাবেন পুরো একটা প্রজন্মের নাম রাখা হয়েছে একজন খেলোয়াড় কিংবা অভিনেতার নামে। এক সময়ে আমাদের ছয় জন খেলোয়াড় ছিল যাদের নাম রাখা হয়েছিল টিভি অভিনেতা কাওয়ার নামে।” 

“আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়ের ক্ষেত্রে এখানে এটাই ঘটেছে। আর এটা যোগাযোগকে খুব জটিল করে তোলে। আমাদের একটা পথ বের করে নিতে হয়। তাই আমরা ওদের সবাইকে আলাদা ডাক নাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।”

ফুটবল তারকাদের নামে সন্তানের নাম রাখা মা-বাবার জন্য খুব বিরল কিছু না। এদসন (ফুটবল কিংবদন্তি এদসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো যাকে পৃথিবী জানে পেলে হিসেবে, তার নামে) কিংবা আর্থারে (ব্রাজিলের আরেক কিংবন্দন্তি আর্থার আন্তুনেস কোয়িমব্রা, যাকে পৃথিবী চেনে জিকো হিসেবে) ভরা ব্রাজিল।

তবে নিজেদের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের কারোর নামে সন্তানের নাম রাখাটা বেশ অদ্ভূত। বিশেষ করে এমন একজনের নামে যিনি অসাধারণ প্রতিভাবান হিসেবে পরিচিতি ছিলেন না, এমনকি দেশের হয়ে বড় কোনো শিরোপা জেতেননি!

এর একটা ব্যাখ্যা হতে পারে টাইমিং। রিকেলমের নামে যাদের নাম, তাদের প্রায় সবাই জন্মেছে এই শতাব্দীর শুরুতে। সে সময় আর্জেন্টিনার অন্যতম জনপ্রিয় ক্লাব বোকা জুনিয়র্সের হয়ে রাজত্ব করেছেন এই মিডফিল্ডার। ২০০০, ২০০১ ও ২০০৭ সালে দলকে জিতিয়েছেন কোপা লিবের্তাদোরেস।

প্রতিবারই সেমি-ফাইনাল কিংবা ফাইনালে ব্রাজিলের কোনো দলকে হারিয়েছিল বোকা জুনিয়র্স। ক্রুইজেইরোর এক খেলোয়াড় জানান, এই জয়গুলো রিকেলমের নামে সন্তানের নাম রাখায় বড় ভূমিকা রেখেছে।

“লিবের্তাদোরেসে যখন রিকেলমে পালমেইরাসকে হারালেন তখন তারা আমার নাম বেছে নেন। আমার বাবা (পালমেইরাসের চির প্রতিদ্বন্দ্বী) করিস্থিয়ান্সের সমর্থক ছিলেন। এতেই ব্যাখ্যাটা মেলে।”

আছে আরেকটি ব্যাখ্যা। রিকেলমের ফুটবলে ব্রাজিলিয়ানরা দেখেছিলেন নিজেদের ছায়া।

“রিকেলমে আকর্ষণীয় ফুটবল খেলতেন। ঠিক যেন একজন ব্রাজিলিয়ানের মতো। খেলায় ছিল সৃজনশীলতা, প্রতিভা আর বুদ্ধিমত্তা। তিনি ঠিক একজন মেসি ছিলেন না, এমনকি একজন নেইমারও না তবে তিনি ছিলেন একটা যুগের প্রতীক।”

একজন আদর্শ ‘নাম্বার টেন’।