বিদেশিদের দাপট থাকলেও এবার ভালো করেছে দেশের ফরোয়ার্ডরা

নাবীব নেওয়াজ জীবনের নামের পাশে ১৬টি গোল। মতিন মিয়ার ১১টি। মান্নাফ রাব্বীর ৮টি। তকলিস আহমেদ জাল খুঁজে পেয়েছেন ৭ বার। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে এবার দেশি ফরোয়ার্ডরা বিদেশিদের সঙ্গে লড়েছেন বেশ।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 August 2019, 04:11 PM
Updated : 3 August 2019, 04:11 PM

গত মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় স্থানীয় ফরোয়ার্ডদের উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। তৌহিদুল আলম সবুজ ছিলেন সর্বোচ্চ (৮টি) গোলদাতা। এবার দেশিদের মধ্যে সেরা জীবনের গোলসংখ্যা গতবারের সবুজের গোলের দ্বিগুণ। সতীর্থদের ছয় গোলে অবদানও রেখেছেন ২৮ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড।

অথচ গতবার স্থানীয় ফরোয়ার্ডদের সুযোগ ছিল বেশি। কোটা প্রথায় বিদেশি খেলোয়াড় তিন থেকে দুইয়ে নামিয়ে আনা হয়েছিল। কিন্তু সুযোগ মুঠোয় নিতে পারেননি জীবন-মতিনরা। এবার চার বিদেশি খেলানোর সুযোগ থাকলেও দেশিদের পারফরম্যান্স উজ্জ্বল।

২২ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড রাফায়েল ওডোইন। তার স্বদেশি আবাহনী লিমিটেডে খেলা সানডে চিজোবার গোল ২০টি। এরপরের নামটি জীবনের। সেরা ১০ গোলদাতার তালিকায় যথারীতি বিদেশিদের দাপট; আটজন বিদেশি। জীবনের বাইরে সেরা দশে দেশের ফরোয়ার্ডদের মধ্যে আছেন কেবল মতিন।

দেশি ফরোয়ার্ডদের গোলের আকাল নিয়ে কথা হয় প্রতি মৌসুমের শেষে। কোচদের মুখেও ঘুরেফিরে উঠে আসে সামর্থ্যের ঘাটতি, কৌশলগত দুর্বলতা, ফিটনেসের অভাবের বিষয়টি। জীবন-মতিন-তকলিসরা প্রাপ্তি নিয়ে বলতে গিয়ে জানালেন আগের খামতি পুরণের মানসিকতা তৈরি হওয়ার কথা।

নিজের উন্নতির পেছনে লেফট উইং থেকে দ্বিতীয় ফরোয়ার্ড হিসেবে খেলা, পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোসের ভূমিকাও বড় কারণ বলে জানালেন আবাহনীর জীবন।

“আগের চেয়ে আমাদের ফিটনেস লেভেল বেড়েছে। আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। সুযোগ পাওয়ার ব্যাপারও আছে। যেমন গত আসরগুলোয় আমি লেফট উইংয়ে খেলতাম, এবার খেলেছি দ্বিতীয় স্ট্রাইকার হিসেবে।”

“স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপে প্রতি ম্যাচে ১০-১৫ মিনিট খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু বিদেশি কোচ আসার পর আমাকে বললেন-তুমি দ্বিতীয় স্ট্রাইকার হিসেবে খেলবে এবং কমপক্ষে ১৪টা গোল করবে। আমি সেটা পেরেছি।”

প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের প্রথম আসরেই শিরোপা জেতা বসুন্ধরা কিংসের ফরোয়ার্ড মতিন জানালেন টেকনিক্যাল দিকে আগের চেয়ে আরও পরিপক্ক হওয়ার কথা।

“আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে। প্রথম ম্যাচে গোল করতে পারিনি। দ্বিতীয় ম্যাচ থেকে গোল করা শুরু করেছি। সুযোগ তৈরি করেছি। পেরেছি। টেকনিক্যাল দিক দিয়ে আমরা এখন আগের চেয়ে আরও বেশি পরিপক্ক হয়ে উঠেছি। যার কারণে গোল পেয়েছি।”

ওডোইন-চিজোবাদের সঙ্গে নিজে সেভাবে পাল্লা দিয়ে খেলতে পারেননি তকলিস। তার দল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবও ১৩ দলের মধ্যে অষ্টম স্থানে থেকে লিগ শেষ করেছে। দলের অবস্থান নিয়ে হতাশা আছে তকলিসের। তবে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে খুশি ২৩ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড জানালেন বিদেশিদের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকার মানসিকতা তৈরি হয়েছে তাদের।

“আমাদের এখন লড়াই করার মানসিকতা বেড়েছে। আগেও বিদেশি ফরোয়ার্ডরা আমাদের তুলনায় বেশি প্রাধান্য পেতো। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তো আমরাও বুঝতে পেরেছি ওদের সঙ্গে লড়াই করেই আমাদের টিকে থাকতে হবে। ক্লাবও সুযোগ দিয়েছে। বিদেশি কোচও একটা ব্যাপার। তারা নতুন কিছু শেখাচ্ছে, আমরাও সেটা শিখছি এবং মাঠে করে দেখাচ্ছি।”

গতবার জীবনের গোল ছিল ৪টি। মতিনের ছিল ৩টি। তকলিসের ২টি; মোহামেডানের এই ফরোয়ার্ড জানালেন এবার তার লড়াইটা ছিল দেশিদের সঙ্গেও।

“তাছাড়া নিজেদের মধ্যে লড়াইও একটা ব্যাপার। জীবন গোল করছে, মতিন গোল করছে তাহলে আমি কেন পারব না, এগুলোও অনেক সময় মনের মধ্যে কাজ করেছে।”