বসুন্ধরা কিংসের সাফল্যের পেছনে

ফুটবলে পথচলা শুরু ২০১৬ সালে। আর ২০১৮-১৯ মৌসুমে ঘরোয়া ফুটবলের শীর্ষ পর্যায় প্রিমিয়ার লিগে অভিষেকেই চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। এর আগে স্বাধীনতা কাপও জিতেছে দলটি। রূপকথার মতো এই সাফল্যের পেছনের কারণ অনেক। তবে মোটাদাগে কয়েকটির কথা বললেন দলটির কোচ, খেলোয়াড়, কর্মকর্তারা -সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, টিম স্পিরিট ও শৃঙ্খলার প্রশ্নে আপোসহীনতা।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 August 2019, 03:20 PM
Updated : 3 August 2019, 03:20 PM

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শনিবার চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গে ১-১ ড্র দিয়ে লিগ শেষ করল বসুন্ধরা। ২৪ ম্যাচে ২০ জয়, তিন ড্র এবং এক হারে ৬৩ পয়েন্ট পেল দলটি। দারুণ এই পথচলায় দলটি দুই ম্যাচ বাকি থাকতে শিরোপা জিতেছে। ২০০৭ সালে পেশাদার লিগ শুরুর পর টানা ১৪ ম্যাচ জয়ের রেকর্ডও গড়েছে মাঝে।

২০১৬ সালে পাইওনিয়ার লিগ দিয়ে ঘরোয়া ফুটবলে যাত্রা শুরু করা বসুন্ধরা প্রথমবারই তৃতীয় বিভাগে খেলার সুযোগ পেয়ে যায়। তবে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন দ্বিতীয় স্তরের টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের ২০১৭ সালের আসরে খেলার সুযোগ দেয়। সেখানে সেরা হয়ে লিগে উঠে আসে বসুন্ধরা গ্রুপের দলটি। এরপর কেবল সামনে এগিয়ে চলা।

মৌসুম শুরুর টুর্নামেন্ট ফেডারেশন কাপে রানার্সআপ হওয়া বসুন্ধরা স্বাধীনতা কাপে পেয়ে যায় প্রথম শিরোপার স্বাদ। ধারাবাহিকতা ধরে রেখে লিগেও বাজিমাত করে ঘরোয়া ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে নিজেদের প্রথম মৌসুমে তিন টুর্নামেন্টে দুটি শিরোপা জয়, একটিতে রানার্সআপ হলো বসুন্ধরা!

দলটির সবকিছুই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ঘিরে। এন ব্লকের উত্তর দিকে স্পোর্টস কমপ্লেক্সের কাজ চলছে। বর্তমানে তাই একটু এদিক-ওদিক করে চলে অনুশীলন, জিম, খেলোয়াড়দের থাকা। কিন্তু সবকিছুর মধ্যে আছে দারুণ সমন্বয়। দলের সাফল্যের প্রসঙ্গে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ক্লাব সভাপতি ইমরুল হাসান সবার আগে জানালেন সমন্বয়ের কথা।

“আমাদের সাফল্যের প্রধান কারণ সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, দেশি-বিদেশি খেলোয়াড়দের মধ্যে সমন্বয়, টিম স্পিরিট, খেলোয়াড়-কোচ-কর্মকর্তা সবার মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং শৃঙ্খলার বিষয়ে আপোসহীনতা।”

“আপনারা হয়ত জেনে থাকবেন আমাদের একজন খেলোয়াড়ের কার্যক্রমে আমরা খুব বিরক্ত ছিলাম। এজন্য তাকে আমরা তিন মাস কোনো অনুশীলনেই রাখিনি। নিজেকে শুধরে নিয়ে তাকে ফিরতে হয়েছে। শৃঙ্খলার প্রশ্নে আমাদের কোনো আপোস নেই।”

ইমরুল না বললেও খেলোয়াড়টির নাম হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস। নিজেকে শুধরে ফেরা এই মিডফিল্ডার শনিবার খেলেছেন বসুন্ধরার মাঝমাঠে।

মাশুক মিয়া জনি, কিরগিজস্তানের বখতিয়ার দুইশবেকভ প্রতি ম্যাচেই রেখেছিলেন মাঝমাঠের নিয়ণ্ত্রণ। অভিজ্ঞ নাসিরউদ্দিন চৌধুরী নুরুল নাইম ফয়সালকে নিয়ে সামলেছেন রক্ষণভাগ।

মানসম্পন্ন ফুটবলার দলে নেওয়ার দিকে মনোযোগী ছিল বসুন্ধরা। ব্রাজিলের মার্কোস দি সিলভা, কোস্টা রিকার হয়ে বিশ্বকাপ খেলা দেনিয়েল কলিন্দ্রেস সোলেরার মতো তারকাকে আক্রমণভাগে রেখে দল সাজিয়েছিল তারা। ১৪ গোল করে দি সিলভা, ১১ গোল করে সোলেরা প্রতিদান দিয়েছেন। দেশি ফরোয়ার্ডদের মধ্যে মতিন মিয়া করেন ১১ গোল।

শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের কাছে হেরে যাওয়াই একমাত্র ধাক্কা বসুন্ধরার। কিন্তু ৫৪টি গোল দিয়ে মাত্র ১৪টি খাওয়া, ১১ ম্যাচে ক্লিনশিট নিয়ে ফেরার পরিসংখ্যান আক্রমণভাগের শক্তি, রক্ষণভাগের দৃঢ়তা, গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোর বিশ্বস্ততার সঙ্গে দেখাচ্ছে মৌসুমের শুরু থেকে হাল ধরা স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুসনের হাত ধরে কতটা দাপটের সঙ্গে খেলেছে দলটি। ব্রুসন অবশ্য সাফল্যের, দাপটের পেছনে কঠিন কোনো ‘রেসিপি’ ছিল না বলে দাবি করলেন।

“কমিটমেন্ট-এটাই আমাদের সাফল্যের পেছনের কারণ। ছেলেরা সেই শুরু থেকে কঠোর পরিশ্রম করেছে, লড়াই করেছে। তাদের ভালো ও আক্রমণাত্মক খেলার মানসিকতা ছিল। আমাদের সাফল্যের রেসিপিতে এর বাইরে আর কিছু নেই।”

১১ গোল নিয়ে লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় দশম স্থানে থাকা মতিন মিয়া অবশ্য জানালেন কতটা কাঠখড় ব্রুসনের অধীনে পুড়িয়েছেন তারা।

“সকাল ৯টা থেকে আমাদের অনুশীলন শুরু হতো। শুরুতে আধা ঘণ্টা ৭/৮ জন গ্রুপ করে জিমে থাকতাম। এরপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে লাঞ্চে যেতাম। বিকালে ৪টার দিকে আবার শুরু হতো ট্রেনিং। এই পর্বে আমরা পুরো গ্রুপ একসঙ্গে অনুশীলন করতাম। যখন দুই বেলায় ট্রেনিং করতাম, তখন অনেক ক্ষেত্রে সকালের দিকে যদি টেকনিক্যাল বিষয় থাকত, তাহলে বিকালে থাকত গেম প্ল্যান অনুযায়ী ট্রেনিং। এর একবিন্দু ব্যতয় হয়নি।”

মিডফিল্ডার মাশুক মিয়া জনি জানালেন খাবার-অনুশীলন-ম্যাচ সবকিছুতেই ছিল কোচের ভীষণ কড়াকড়ি।

“খাওয়া-দাওয়া, অনুশীলন সবকিছুই কোচ আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কড়াকড়িভাবে করিয়েছেন। ফলে আমাদের ফিটনেস লেভেল, নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া সবকিছুই ভালো হয়েছে।”

“ক্লাব কর্তৃপক্ষও আমাদের কোনো চাওয়া-পাওয়ায় কমতি রাখেননি। যখন যেটা প্রয়োজন, সেটা দিয়েছেন। তাদের একটাই প্রত্যাশা ছিল সাফল্য। আমরা সেটা এনে দিতে খুব মরিয়া ছিলাম এবং আমরা সেটা দিতেও পেরেছি।”