শেষের লড়াইয়ে জিতে চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা ধরে রাখার অভিযানের শেষ ধাপে এসে পিছিয়ে পড়েছিল ম্যানচেস্টার সিটি। তবে শুরুতে গোল খাওয়ার ধাক্কা সামলে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায় দলটি। ব্রাইটন অ্যান্ড হোভ অ্যালবিওনের জালে গোল উৎসব করে টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পেপ গুয়ার্দিওলার দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2019, 03:52 PM
Updated : 12 May 2019, 05:11 PM

লিগের শেষ রাউন্ডে ব্রাইটনের মাঠে রোববার স্থানীয় সময় বিকালে ৪-১ গোলে জিতেছে সিটি। প্রতিযোগিতায় এটি তাদের চতুর্থ শিরোপা। আর আগের সংস্করণ মিলিয়ে ইংলিশ ফুটবলের শীর্ষ প্রতিযোগিতায় এটা তাদের ষষ্ঠ শিরোপা।

গ্লেন মারের গোলে সিটি পিছিয়ে পড়ার পর পরই সমতা ফেরান সের্হিও আগুয়েরো। কিছুক্ষণ পর এমেরিক লাপোর্তের গোলে এগিয়ে যায় তারা। আর দ্বিতীয়ার্ধে রিয়াদ মাহরেজ ও ইলকাই গিনদোয়ানের গোলে বড় জয় পায় চ্যাম্পিয়নরা।

শিরোপা ভাগ্য নিজেদের হাতেই ছিল, তবে পা হড়কালেই হতে পারতো বিপদ। ২৭তম মিনিটে গোল খেয়ে সেই বিপদেই পড়ে সিটি। জার্মান মিডফিল্ডার পাসকাল গ্রসের ক্রসে কাছ থেকে হেডে বল জালে পাঠান ইংলিশ ফরোয়ার্ড মারে।

একই সময়ে শুরু হওয়া আরেক ম্যাচে উলভারহ্যাম্পটনের বিপক্ষে ১৭তম মিনিটে এগিয়ে গিয়েছিল লিভারপুল। এমন ফল শেষ পর্যন্ত থাকলে সিটির শিরোপা হতো হাতছাড়া। তবে পাল্টা জবাব দিতে একেবারেই দেরি করেনি দলটি।

গোল খাওয়ার পরের মিনিটেই জালের দেখা পায় শিরোপাধারীরা। দাভিদ সিলভার পাস ডি-বক্সে পেয়ে ঠান্ডা মাথায় বাঁ পায়ের শটে কাছের পোস্ট ঘেঁষে বল ঠিকানায় পাঠান আগুয়েরো।

তখনও ফল লিভারপুলের দিকে হেলে। তবে ১০ মিনিট পর এমেরিক লাপোর্তের গোলে ম্যাচের মতো শিরোপা লড়াইয়েও এগিয়ে যায় সিটি। একাদশে ফেরা মাহরেজের কর্নারে লাফিয়ে নেওয়া হেডে স্কোরলাইন ২-১ করেন ফরাসি ডিফেন্ডার লাপোর্ত।

৬৩তম মিনিটে মাহরেজের ব্যবধান বাড়ানো গোলে শিরোপা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় সিটির। দাভিদ সিলভার পাস পেয়ে এক জনকে কাটিয়ে ডি-বক্সের ঠিক বাইরে থেকে জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন আলজেরিয়ার মিডফিল্ডার।

আর ৭২তম মিনিটে স্কোরলাইন ৪-১ করে সব অনিশ্চয়তার ইতি টেনে দেন গিনদোয়ান। প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে অসাধারণ এক ফ্রি-কিকে জাল খুঁজে নেন জার্মান মিডফিল্ডার। ডাগআউটে উল্লাসে ফেটে পড়ে সিটির খেলোয়াড়রা।

সিটির শিরোপা ধরে রাখার অভিযানের শুরুটা আশানুরূপ হলেও মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলেছিল তারা। গত ডিসেম্বরের শেষে লিভারপুলের চেয়ে ৭ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিল গুয়ার্দিওলার শিষ্যরা। পরে এ বছরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ‘অল রেডদের’ হারিয়েই ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু দলটির।

জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে লিগে সবশেষ হেরেছিল সিটি, নিউক্যাসল ইউনাইটেডের মাঠে ২-১ গোলে। এরপর টানা ১৪ ম্যাচ জিতে শিরোপা ঘরে তুলল ক্লাবটি। ৩৮ ম্যাচে ৩২ জয় ও দুই ড্রয়ে ৯৮ পয়েন্ট নিয়ে লিগ শেষ করল তারা।

সেই সঙ্গে তারা আরেক ধাপ এগিয়ে গেল প্রথম দল হিসেবে ইংলিশ ফুটবলের ঘরোয়া ‘ট্রেবল’ জয়ের পথে। ফেব্রুয়ারিতে টাইব্রেকারে চেলসিকে হারিয়ে জিতেছিল লিগ কাপ। আগামী শনিবার ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে হতে যাওয়া এফএ কাপের ফাইনালে ওয়াটফোর্ডকে হারালেই অনন্য কীর্তি গড়বে ম্যানচেস্টার সিটি।

অন্যদিকে, আরও একবার খুব কাছে গিয়েও অধরা প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা জেতা হলো না লিভারপুলের। শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই করা দলটি শেষ রাউন্ডে উলভারহ্যাম্পটন ওয়ানডারার্সকে ২-০ গোলে হারিয়েছে। পুরো লিগে মাত্র একবার হারের স্বাদ পাওয়া ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা ৩০ জয় ও সাত ড্রয়ে ৯৭ পয়েন্ট নিয়ে মৌসুম শেষ করল। এই পয়েন্ট নিয়ে লিগের রানার্সআপ হয়ে লিভারপুল নিজেদেরকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারে। কেননা ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগের ইতিহাসে কখনই কোনো দল এর চেয়ে বেশি পয়েন্ট পেয়ে দ্বিতীয় হয়নি।

লেস্টার সিটির মাঠে গোলশূন্য ড্র করা চেলসি ৭২ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় হয়েছে। আর এভারটনের সঙ্গে ঘরের মাঠে ২-২ ড্র করা টটেনহ্যাম হটস্পার ১ পয়েন্ট কম নিয়ে চার নম্বরে থেকে লিগ শেষ করল।

আর্সেনাল শেষ ম্যাচে বার্নলির মাঠে ৩-১ গোলে জিতেছে। পঞ্চম হওয়া দলটির পয়েন্ট ৭০। কার্ডিফ সিটির কাছে ঘরের মাঠে ২-০ গোলে হারা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে হয়েছে ষষ্ঠ।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের রোল অব অনার:

২০১৯      ম্যানচেস্টার সিটি

২০১৮       ম্যানচেস্টার সিটি

২০১৭       চেলসি

২০১৬      লেস্টার সিটি

২০১৫       চেলসি

২০১৪       ম্যানচেস্টার সিটি

২০১৩       ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

২০১২       ম্যানচেস্টার সিটি

২০১১        ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

২০১০       চেলসি

২০০৯      ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

২০০৮      ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

২০০৭       ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

২০০৬      চেলসি

২০০৫      চেলসি

২০০৪       আর্সেনাল

২০০৩      ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

২০০২      আর্সেনাল

২০০১       ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

২০০০      ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

১৯৯৯       ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

১৯৯৮      আর্সেনাল

১৯৯৭       ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

১৯৯৬      ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

১৯৯৫      ব্ল্যাকবার্ন রোভারস

১৯৯৪       ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড

১৯৯৩      ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড