মউরার হ্যাটট্রিকে রূপকথার জন্ম দিলো টটেনহ্যাম

বার্সেলোনার বিপক্ষে লিভারপুলের অবিশ্বাস্য জয়ের রেশ কাটতে না কাটতে আরেকটি শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ের সাক্ষী হলো ফুটবল বিশ্ব। প্রতিপক্ষের মাঠ থেকে জিতে আসা আয়াক্স ফিরতি পর্বের প্রথমার্ধেই জোড়া গোল করে বসে, কোণঠাসা হয়ে পড়ে টটেনহ্যাম হটস্পার। ওখান থেকে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। লুকাস মউরার হ্যাটট্রিকে অসাধারণ এক জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠে ইংলিশ ক্লাবটি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2019, 09:04 PM
Updated : 6 July 2019, 11:11 AM

ইয়োহান ক্রুইফ অ্যারেনায় বুধবার রাতে শেষ চারের ফিরতি পর্বের ম্যাচে ৩-২ গোলে জিতে মাওরিসিও পচেত্তিনোর দল। অ্যাওয়ে গোলে এগিয়ে থাকায় ফাইনালের টিকেট পায় তারা। গত সপ্তাহে টটেনহ্যামের মাঠে ১-০ গোলে জিতেছিল আয়াক্স।

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো ‘অল ইংলিশ’ ফাইনাল দেখতে যাচ্ছে ফুটবলপ্রেমীরা। এর আগে ২০০৭-০৮ আসরের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও চেলসি।

আগামী ১ জুন মাদ্রিদের ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানোয় শিরোপা লড়াইয়ে বার্সেলোনাকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠা লিভারপুলের মুখোমুখি হবে টটেনহ্যাম হটস্পার।

বল দখলে রেখে আক্রমণাত্মক ফুটবলের পরিকল্পনায় নামা আয়াক্স ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই গোল আদায় করে নেয়। হতে পারতো আগের মিনিটেই। দুসান তাদিচের নিচু শট ইংলিশ ডিফেন্ডার কিরান ট্রিপিয়ারের পায়ে লেগে উঁচু হয়ে জালে ঢুকতে যাচ্ছিল। ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান গোলরক্ষক উগো লরিস। ওই কর্নারেই দারুণ হেডে দলকে এগিয়ে দেন মাটাইস ডি লিখট।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে চতুর্থ টিনএজার হিসেবে গোল করলেন ডি লিখট। কোয়ার্টার-ফাইনালের ফিরতি পর্বে ইউভেন্তুসের মাঠে দলের জয়সূচক গোলটি করেছিলেন ডাচ এই ডিফেন্ডার।

পরের মিনিটেই পাল্টা জবাব দিতে পারতো অতিথিরা; কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল না। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরা সন হিউং-মিনের শট পোস্টে লাগে। ২৩তম মিনিটে দক্ষিণ কোরিয়ার এই ফরোয়ার্ডের আরেকটি শট রুখে দেন গোলরক্ষক।

৩৫তম মিনিটে হাকিম জাইয়েকের দারুণ গোলে টটেনহ্যামের ঘুরে দাঁড়ানোর আশা ফিকে হয়ে যায়। বাঁ দিক থেকে স্বদেশি মিডফিল্ডার ফন দে বেকের কাটব্যাক পেয়ে বাঁ পায়ের জোরালো কোনাকুনি শটে জাল খুঁজে নেন ডাচ মিডফিল্ডার।

দুই লেগ মিলে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমের সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা আয়াক্স। তবে নাটকীয়তার তখনও ঢের বাকি।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে প্রতিপক্ষের রক্ষণে চাপ বাড়ানো টটেনহ্যাম ৫৩তম মিনিটে গোল পেতে পারতো। তবে ক্রিস্তিয়ান এরিকসেনের ক্রস দূরের পোস্টে পেয়ে ডেলে আলির নেওয়া হাফ-ভলি দারুণ ক্ষিপ্রতায় রুখে দেন গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানা।

এর দুই মিনিট পর প্রত্যাশিত গোলের দেখা পায় অতিথিরা। পাল্টা আক্রমণে মাঝমাঠ থেকে বল পায়ে ছুটে একজনকে কাটিয়ে সামনে বাড়ান ডেলে আলি। আর দ্রুত ডি-বক্সে ঢুকে নিচু শটে ব্যবধান কমান মউরা।

জালের দেখা পেয়ে যেন হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় টটেনহ্যাম। চার মিনিট পর পেয়ে যায় দ্বিতীয় গোলও। ফের্নান্দো লরেন্তের শট দারুণ নৈপুণ্যে রুখে দেন গোলরক্ষক, কিন্তু বিপদমুক্ত করতে পারেননি। আলগা বল জটলার মধ্যে পেয়ে ঠান্ডা মাথায় ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে বাঁ পায়ের শটে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার মউরা। ম্যাচে আসে ২-২ সমতা। দুই লেগ মিলে স্কোরলাইন ৩-২।  

৭৯তম মিনিটে ভাগ্যের ফেরে গোল না পাওয়ার হতাশায় ডোবে আয়াক্স। জাইয়েকের দূরপাল্লার নিচু শট গোলরক্ষককে পরাস্ত করলেও পোস্ট বাধা এড়াতে পারেনি। খানিক পর একই হতাশা যোগ হয় অতিথি শিবিরে। ইয়ান ভার্টোনেনের হেড পোস্টে লাগার পর ফিরতি বলে তার শট গোললাইনে প্রতিহত হয়।

যোগ করা সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে আয়াক্সের হৃদয় ভেঙে উল্লাসে ফেটে পড়ে টটেনহ্যাম। ডেলে আলির পাস ধরে ডি-বক্সে ঢুকে নিচু শটে পোস্ট ঘেঁষে বল জালে পাঠিয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন মউরা।

শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে হতাশায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তাদিচ-ডি লিটরা। আর ইতিহাস গড়ার উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে ‘স্পার্স’ নামে পরিচিত দলটি।