নেপালের বিপক্ষে ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙার প্রত্যয় বাংলাদেশের

সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাস তো বটেই জাতীয় দলের কোনো লড়াইয়ে নেপালের বিপক্ষে জয়ের হাসি নেই বাংলাদেশের মেয়েদের। পরিসংখ্যানের পাতায় যা একটু স্বস্তি আছে, তা গত নভেম্বরে অলিম্পিক বাছাইয়ে পিছিয়ে পড়ে করা ড্র নিয়ে। মিয়ানমারের ওই ড্র থেকে অনুপ্রেরণা নিতে চাইছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের মাঠে, স্থানীয় দর্শকের সামনে খেলার প্রতিকূলতা জয় করে বেরিয়ে আসতে চাইছে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরনেপালের বিরাটনগর থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2019, 04:19 PM
Updated : 15 March 2019, 04:19 PM

নেপালের বিরাটনগরের শহীদ রঙ্গসালা স্টেডিয়ামে আগামী শনিবার স্থানীয় সময় তিনটায় ‘এ’ গ্রুপের সেরা হওয়ার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে দুই দল।

বয়সভিত্তিক পর্যায়ে নেপালকে হরহামেশাই হারালেও সিনিয়র পর্যায়ে সে সাফল্য টেনে আনতে পারেনি বাংলাদেশ। সাফে এ পর্যন্ত দুইবার দেখা হয়েছে দুই দলের। দুইবারই সেমি-ফাইনালে। ২০১০ সালে ৩-০ এবং ২০১৪ সালে ১-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। রব্বানী তাই ‘শতভাগেরও বেশি’ দিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছেন হতাশার বলয় থেকে।

“সেমি-ফাইনালের আগে এটা আমাদের জন্য আরেকটা সেমি-ফাইনাল। নেপালের চেয়ে আমরা পিছিয়ে আছি বয়স আর অভিজ্ঞতায়। অভিজ্ঞতার ঘাটতির কারণে আমরা ছোট ছোট ভুল করি। ভুটান ম্যাচে যেমন রুপনা একটা ছোট ভুল করেছিল। এ ঘাটতি পুষিয়ে নিতে হলে আমাদের শতভাগের বেশি দিতে হবে। মেয়েরা প্রস্তুত আছে।”

“আমরা চাই নেপালকে হারিয়ে গ্রুপ সেরা হতে। আমি মনে করি নেপাল স্বাগতিক হিসেবে এ টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে। তারাই সেরা দল। আশা করছি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ হবে।”

সাফের তিনবারের রানার্সআপ নেপাল এবার শুরু করেছে ভুটানকে ৩-০ গোলে হারিয়ে।  গতবারের রানার্সআপ বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে জিতে ২-০ ব্যবধানে। এ ম্যাচ ড্র হলে গ্রুপ সেরা হবে গোলের ব্যবধানে এগিয়ে থাকা নেপাল। জয় লাগবে বাংলাদেশের।

বাংলাদেশের খুব করে জয় চাওয়ার আছে আরেকটি কারণও। শিরোপাধারী ভারতকে ‘বি’ গ্রুপের সম্ভাব্য সেরা ধরে নিয়ে হিসেব কষছে দল। সেমি-ফাইনালে তাদেরকে এড়াতে হলে নেপাল ম্যাচে তাই জয় চাই বাংলাদেশের। তবে দলের সঙ্গে থাকা বাফুফের টেকনিক্যাল অ্যান্ড স্ট্রেটেজিক ডিরেক্টর পল স্মলি সাবিনা-মনিকাদের ওপর চাপ দেওয়ার পক্ষে নন।

“আমার মতে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শুধু আগামীকালের ম্যাচের প্রতি মনোযোগ দেওয়া। সেমি-ফাইনালে আমরা কাদের সঙ্গে খেলব সেটা নিয়ে ভাবার চেয়ে দুই ম্যাচের মাঝে রিকোভারির জন্য মাত্র ২৪ ঘণ্টা সময় পাওয়া পর মেয়েরা নেপালের সঙ্গে কেমন খেলব সেটা গুরুত্বপূর্ণ।”

“আমরা অলিম্পিক বাছাইয়ে নেপালের বিপক্ষে ভালো করেছিলাম। কিন্তু তাদের তুলনায় আমাদের দলটা তরুণ; শিখছে এবং বেড়ে উঠছে। এটা মেয়েদের জন্য কঠিন একটা ম্যাচ হতে যাচ্ছে। তবে ম্যাচে সবসময়ই জয়ের সুযোগ থাকে এবং অবশ্যই নেপালের বিপক্ষেও আমাদের জয়ের সুযোগ থাকবে।”

জয়ের লক্ষ্য পূরণে মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন রব্বানী-স্মলি দুজনই। বাংলাদেশের কিছুটা দুর্ভাবনাও এখানে। হাঁটুর চোটে পড়া কৃষ্ণা রানী সরকার শুক্রবার দলের সঙ্গে অনুশীলন করেছেন। কৃষ্ণার ফেরা নিয়ে আশাবাদী দুজনেই।  মিডফিল্ডারদের ওপর আস্থা রাখা স্মলি সেট পিসে প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে আশাবাদী।

“ভুটানের বিপক্ষে মেয়েরা যেভাবে মাঝ মাঠ নিয়ন্ত্রণ করেছে তাতে আমি মুগ্ধ। আমাদের ম্যাচের ভাগ্য বদলে দেওয়ার সামর্থ্য আছে। আমরা সেট পিসে প্রতিপক্ষের জন্য খুবই ভয়ঙ্কর। কেননা এটা নিয়ে আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি। ভুটান ম্যাচের মতো নেপালের বিপক্ষেও আমরা সব সামলে নিতে পারব।”

প্রতিপক্ষের মাঠে স্থানীয় দর্শকের সামনে খেলা নিয়েও স্মলির দুর্ভাবনা থাকলেও কোচ রব্বানী আস্থা রাখছেন শিষ্যদের ওপর।

“মেয়েরা ভুটানে দুইটা গত দুটি টুর্নামেন্টে ভরা স্টেডিয়ামে স্থানীয় দর্শকের সামনে সব প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে চাপ ধরে রেখে খেলেছে এবং জিতেছে। কিছুদিন আগে মিয়ানমারেও একই পরিবেশে খেলেছে। আশা করি মেয়েরা এখানেও মানিয়ে নেবে।”

নেপাল কোচ হরি খাড়কা অবশ্য ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন বাংলাদেশকে হারিয়ে সেরা চারে উঠতে চান তিনি “আমরা আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলব। আমরা বাংলাদেশের শক্তি ও দুর্বলতা জানি। কোনো গোল না খেয়ে তাদেরকে হারিয়ে সেমি-ফাইনালে উঠতে চাই।”