দুর্দান্ত মেসিতে শেষ আটে বার্সা

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ঘরের মাঠে আবারও দুর্দান্ত রূপে নিজেকে মেলে ধরলেন লিওনেল মেসি। জোড়া গোল করার পাশাপাশি দুই সতীর্থের গোলে রাখলেন অবদান। অধিনায়কের এমন জাদুকরী পারফরম্যান্সে লিওঁকে উড়িয়ে দিয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে পা রাখলো বার্সেলোনা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 March 2019, 09:57 PM
Updated : 13 March 2019, 10:56 PM

কাম্প নউয়ে বুধবার রাতে শেষ ষোলোর ফিরতি পর্বে ফরাসি ক্লাবটিকে ৫-১ গোলে হারায় এরনেস্তো ভালভেরদের দল। লিওঁর মাঠে প্রথম পর্ব গোলশূন্য ড্র হয়েছিল। 

মেসির গোলে বার্সেলোনা এগিয়ে যাওয়ার পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ফিলিপে কৌতিনিয়ো। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে একটি গোল শোধ করেন লুকা তুজা। কিছুক্ষণ পর ব্যবধান আবারও বাড়ান মেসি। আর শেষ দিকে জেরার্দ পিকে ও উসমান দেম্বেলের গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে কাতালান ক্লাবটি।

ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো বার্সেলোনা। ডি-বক্সের বাইরে থেকে মেসির বাঁ পায়ের বাঁকানো শট বাঁক খেয়ে জালে ঢুকতে যাচ্ছিল, ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক।

সপ্তদশ মিনিটে অধিনায়কের স্পট কিকেই কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা পায় বার্সেলোনা। মেসির বাড়ানো বল ধরে ডি-বক্সে ঢোকা লুইস সুয়ারেস ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। পানেনকা শটে বল জালে পাঠান আর্জেন্টাইন তারকা।

দুই মিনিট বাদেই সমতা টানার দারুণ সুযোগ পেয়েছিল অতিথিরা। কিন্তু গোল করার মতো পজিশন থেকে মেমফিস ডিপাইয়ের শট ফরাসি ডিফেন্ডার ক্লেমোঁ লংলের পায়ে লেগে বাইরে চলে যায়।

খানিক পর বল দখলের লড়াইয়ে কৌতিনিয়োর পায়ে লিওঁ গোলরক্ষক অঁতনি লোপেজের মাথায় আঘাত লাগে। অনেকক্ষণ মাঠে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে খেলা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন অঁতনি। কিন্তু অসুস্থ বোধ করায় ৩৪তম মিনিটে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। এর ফাঁকে ৩১তম মিনিটে দ্বিতীয় গোল হজম করে দলটি।

বল পায়ে ডি-বক্সে ঢুকে একজনকে কাটিয়ে এগিয়ে যান সুয়ারেস। তাকে বাধা দিতে ছুটে আসেন গোলরক্ষক। আর সেই সুযোগে বাঁ দিকে ফাঁকায় বল বাড়ান উরুগুয়ের স্ট্রাইকার। অনায়াসে প্লেসিং শটে গোলটি করেন ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার কৌতিনিয়ো।

দ্বিতীয়ার্ধের দ্বিতীয় মিনিটে মেসির চিপ শট জালে ঢুকতে যাওয়ার শেষ মুহূর্তে বাইলাইন থেকে ফেরান ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার ফের্নান্দো মার্কাল। কিছুক্ষণ পর স্বাগতিকদের আরেকটি গোছানো আক্রমণ রক্ষণে প্রতিহত হয়।

৫৮তম মিনিটে বাঁ দিক থেকে বার্সেলোনার ডি-বক্সে উড়ে আসা বল ডিফেন্ডাররা ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে পেয়ে যান তুজা। বুক দিয়ে বল নামিয়ে নিচু শটে ব্যবধান কমান ফরাসি এই মিডফিল্ডার।

৭৮তম মিনিটে দারুণ নৈপুণ্যে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মেসি। সের্হিও বুসকেতসের পাস পেয়ে ডি-বক্সে এক ঝটকায় দুজন ডিফেন্ডারকে ফেলে দিয়ে শট নেন পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার। বল ঝাঁপিয়ে পড়া গোলরক্ষকের হাতে লেগে গড়িয়ে গড়িয়ে ভিতরে ঢোকে। 

ক্লাব ফুটবলের ইউরোপ সেরা প্রতিযোগিতায় এবারের আসরে মেসির এটি অষ্টম ও সব মিলিয়ে ১০৮তম গোল। আর ঘরের মাঠে ৬১ ম্যাচে হলো ৬২ গোল।

এরই সঙ্গে টানা ১১ মৌসুমে ক্লাবের হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে কমপক্ষে ৩৫টি করে গোল করার কীর্তি গড়লেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক।

৮১তম মিনিটে দলের চতুর্থ গোলে বড় অবদান রাখেন মেসি। মাঝমাঠ থেকে বল পায়ে এগিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে বাঁয়ে পাস দেন পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার। ছুটে এসে বাঁ পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন পিকে।

পাঁচ মিনিট পর আবারও মেসি জাদু। মাঝমাঠের কাছ থেকে বল নিয়ে এগিয়ে বাঁ দিকে পাস বাড়ান তিনি। দ্রুত ডি-বক্সে ঢুকে ফাঁকায় বল কোনাকুনি শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন কৌতিনিয়োর বদলি নামা দেম্বেলে।

এই নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ঘরের মাঠে টানা ৩০ ম্যাচ অপরাজিত (২৭ জয়, তিন ড্র) থাকলো বার্সেলোনা, যা প্রতিযোগিতাটির রেকর্ড।

একই সময়ে শুরু হওয়া অন্য ম্যাচে বায়ার্ন মিউনিখকে তাদেরই মাঠে ৩-১ গোলে উড়িয়ে শেষ আটে জায়গা করে নিয়েছে লিভারপুল।

এর আগে কোয়ার্টার-ফাইনাল নিশ্চিত করা দলগুলো হলো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি, টটেনহ্যাম হটস্পার, আয়াক্স, পোর্তো ও ইউভেন্তুস।