সাফে ‘আরও ভালো’ খেলার লক্ষ্য বাংলাদেশের

গত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দারুণ খেলে রানার্সআপ হয়েছিল বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দল। মাঝের দুই বছরে সাবিনা-মারিয়াদের বয়স এবং অভিজ্ঞতা বাড়ায় এবারের সাফ নিয়ে প্রত্যাশা আরও বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। তবে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন প্রত্যাশার চাপ না নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন আরও ভালো খেলার। জানালেন সেমি-ফাইনালে শক্তিশালী ভারতকে এড়ানোর জন্য গ্রুপ পর্ব নিয়ে পরিকল্পনা থাকার কথাও।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 March 2019, 12:58 PM
Updated : 9 March 2019, 12:58 PM

আগামী ১২ মার্চে নেপালের বিরাটনগরে শুরু হবে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের পঞ্চম আসর।  শনিবার ২০ জনের দল দিয়েছে বাংলাদেশ। শামসুন্নাহার জুনিয়র চোট নিয়ে সঙ্গে যাচ্ছেন; তবে এই ফরোয়ার্ড থাকছেন না সাফের দলে।

২০১৬-১৭ তে ভারতের শিলিগুঁড়ি-গোয়াহাটির সাফে খেলা ১৩ জন আছেন বর্তমান দলে। বাদ পড়েছেন সাত জন। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্বের টিকেট পাওয়া দলের ৯ জন আছেন সাফের দলে। তরুণ ও অভিজ্ঞতার মিশেলে দলকে ‘পরিপক্ক’ মানছেন রব্বানী। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে মেয়েরা অনেক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলায় আশাবাদী কোচ।

“গত সাফে আমাদের এই দলটা ছিল অনভিজ্ঞ। মেয়েদের অনেকের বয়সও ছিল কম।  গত দুই বছরে এরা অনেক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে। খেলোয়াড়দের মধ্যে পরিপক্কতা এসেছে।  আশা করছি, গত সাফের চেয়ে মেয়েরা এবার আরও ভালো ফুটবল খেলবে।”

“আমার দলে মূল শক্তি গোল করার অনেক খেলোয়াড় আছে। সাবিনা আক্তার, শামসুন্নাহার (সিনিয়র), কৃষ্ণা রানী সরকারের সঙ্গে তহুরা খাতুন আছে। তহুরা মিয়ানমারের অলিম্পিক বাছাইয়ে ভালো করেছে। সিরাত জাহান স্বপ্না, ইশরাত জাহান রত্না আছে।  গত দুই বছরে এদের মধ্যে অনেক পরিপক্কতা এসেছে বলে মনে করি আমি।”

“আমাদের প্রথম লক্ষ্য ভালোভাবে গ্রুপ পর্ব পেরিয়ে সেমি-ফাইনালে ওঠা। যদিও আমরা গতবারের রানার্সআপ, তবু আমরা সেমির পর ফাইনাল নিয়ে ভাবব। গতবার এই দলটা নিয়ে কিন্তু আমাদের কোনো প্রত্যাশা ছিল না। আমরা কোনো লক্ষ্য নিয়ে যাইনি কিন্তু আমরা ফাইনালে উঠেছিলাম।”

‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভুটান ও স্বাগতিক নেপাল। গত চার আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারত এবার আছে ‘বি’ গ্রুপে। গতবার আফগানিস্তানকে ৬-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর ভারতের সঙ্গে ড্র করে গ্রুপ সেরা হয়ে সেমি-ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। এড়াতে পেরেছিল সাফের তিনবারের রানার্সআপ নেপালকে। এবার একই গ্রুপে নেপাল থাকায় সেরা চারে ভারতকে এড়ানোর পরিকল্পনাও আছে কোচের।

“গত সাফে যেমন ভারত আফগানিস্তানকে ৫ গোল দিয়েছিল; আমাদের লক্ষ্য ছিল ওদের ৬ গোল দেওয়ার এবং দিয়েছিলাম। পরে আমরা ভারতের সঙ্গে ড্র করে গ্রুপ সেরা হয়ে সেমি-ফাইনালে নেপালকে এড়িয়েছিলাম। এবারও আমাদের লক্ষ্য থাকবে গ্রুপে নেপালের চেয়ে ভালো করে সেমি-ফাইনালে ভারতকে এড়ানোর।”

“নেপাল শক্তিশালী দল। কেননা তারা কিছু দিন ভারতের মাঠে তাদেরকে হারিয়ে এসেছে। তবে এই নেপালের সঙ্গে কিছুদিন আগে আমরা মিয়ানমারে (অলিম্পিক বাছাই) ড্র করেছিলাম। এই অভিজ্ঞতায় সাফে কাজে আসবে।”

দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ সাবিনা। এই ফরোয়ার্ড সেই ২০১০ সাল থেকে সবগুলো প্রতিযোগিতায় খেলছেন। পঞ্চম সাফ খেলতে যাওয়া সাবিনাও দিলেন সর্বোচ্চ চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতি।

“নেপাল ও ভারত শক্তিশালী দল। আমাদের সঙ্গে তাদের মূল পার্থক্য হচ্ছে অভিজ্ঞতায়। যেমন ভারতের এমন অনেক খেলোয়াড় আছে যার আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলার বয়সের চেয়েও আমাদের দলের অনেকের বয়স কম। তবে আমরা নিজেদের উজাড় করে খেলব। ভালো ফল পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”

রোববার বিরাটনগরের উদ্দেশে রওনা দেবে দল। ১৪ মার্চ প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে ভুটানের। দুই দিন পর খেলবে নেপালের বিপক্ষে, যাদের জাতীয় দলকে কখনও হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। অবশ্য বয়সভিত্তিক পর্যায়ে নেপালের বিপক্ষে সাফল্য আছে মারিয়া-মনিকাদের। বাফুফের টেকনিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ডিরেক্টর পল স্মলি শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে জানালেন বাস্তবতা।

“আমাদের জাতীয় দলের খেলোয়াড়ই আছে মাত্র ১৬ জন। সেখানে অনান্য দেশগুলোর জাতীয় দলের খেলোয়াড় সংখ্যা অনেক। আমরা যেখানে বয়সভিত্তিক পর্যায়ে ভালো, তখন ওরা জাতীয় দলে ভালো। কেননা বাকি দলগুলো অভিজ্ঞতার কারণে ছোটখাট ভুলগুলো করে না এবং আমাদের ছোট ছোট ভুলের সুযোগ নেয়। আসলে এ মুহূর্তে এ বিষয়টির সমাধান করতে হলে আমাদের ধৈর্যই ধরতে হবে। আমাদের দলটায় একটা সময় দারুণ একটা জাতীয় দল হবে।”

বাংলাদেশ দল:

মাহমুদা আক্তার, রুপনা চাকমা, ইয়াসমিন আক্তার, মাসুরা পারভীন, আঁখি খাতুন, নার্গিস খাতুন, নিলুফা ইয়াসমিন নীলা, শামসুন্নাহার (সিনিয়র), শিউলি আজিম, মিশরাত জাহান মৌসুমী, মারিয়া মান্ডা, মনিকা চাকমা, ইশরাত জাহান রত্না, সানজিদা আক্তার, মার্জিয়া, সিরাত জাহান স্বপ্না, সাবিনা খাতুন, কৃষ্ণা রানী সরকার, রাজিয়া খাতুন, তহুরা খাতুন।