আইএসএসএফ আর্চারিতে মেয়েদের রিকার্ভ এককে দিয়ার সোনা

প্রথম সেটে লড়াই-ই করতে পারলেন না; হারলেন ২৭-২১ পয়েন্টে। দ্বিতীয় সেটে লড়াই জমিয়ে ২৫-২৪ ব্যবধানে হেরে বসলেন দিয়া সিদ্দিকী। কিন্তু স্নায়ুর চাপ জিতে তৃতীয় সেটে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর পর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ইরানের প্রতিযোগীকে হারিয়ে আইএসএসএফ ইন্টারন্যাশনাল সলিডারিটি ওয়ার্ল্ড আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপ্সের মেয়েদের রিকার্ভ এককে সোনার পদক জিতেছেন বাংলাদেশের এই আর্চার।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2019, 11:35 AM
Updated : 26 Feb 2019, 11:35 AM

টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার শোজামেহের শিভাকে ৩-২ সেটে হারিয়েছেন দিয়া। তার হাত ধরে এবারের প্রতিযোগিতায় এককের ইভেন্ট থেকে একমাত্র সোনার পদক জিতেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সোনা এসেছে মেয়েদের দলীয় কম্পাউন্ড থেকে।

তৃতীয় সেটে লড়াই করে ২৫-২৪ পয়েন্টে জেতার পরের সেটেও লড়াই করে ২৪-২৩ ব্যবধানে জেতেন দিয়া। সমতায় ফেরার পর পঞ্চম সেটে প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেন ২৮-২২ পয়েন্টে। সেরা হওয়ার পর নীলফামারী থেকে উঠে আসা আর্চার জানালেন শুরুতে স্নায়ুর চাপ সামলাতে না পারার কথা।

“এর আগে কোনো দিন কোনো সোনার পদক জিতি নাই। ভালো লাগছে। উত্তেজনা কাজ করছে। এটাই আমার প্রথম আন্তর্জাতিক পদক। ”

“ফাইনালে খেলতে নামার আগে একটু ভয় করছিল। মনে হচ্ছিল পারব কিনা। শরীর কাঁপছিল। ভয় লাগছিল। কারণ এটা আমার প্রথম আন্তর্জাতিক গেম। ইরানের প্রতিযোগীও কঠিন প্রতিপক্ষ ছিল। তবে অনুশীলনে আমি ভালো করেছিলাম। তাই আত্মবিশ্বাসও ছিল ভালো করার।”

“২-০ সেটে পিছিয়ে থাকার পরও যেভাবে ফিরে এলাম…সেটা সম্ভব হয়েছে যখন তৃতীয় সেটে দুই পয়েন্ট পেলাম, তখন। ওটা পাওয়ার পর আত্মবিশ্বাস ফিরে এলো। তখন মনে হলো পারব। এর আগে ম্যাচগুলোতেও এরকম হয়েছে আমার। পিছিয়ে পড়ার পর “বারবার আমার মনে হচ্ছিল আমাকে কিছু একটা করতে হবে। আমি যদি ভালো মারি তাহলে প্রতিপক্ষ এমনিতেই খারাপ করবে।”

২০১৬ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ট্যালেন্ট হান্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়া দিয়া এবারই প্রথম আন্তর্জাতিক ইভেন্টে অংশ নিলেন। এর আগে যুব ও জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা খেলেছিলেন। প্রথম সোনার পদক জয়ের পর দশম শ্রেণিতে পড়া এই ছাত্রী শোনালেন তার আর্চার হয়ে ওঠার গল্প।

“আমি নিজেও বুঝতে পারিনি এভাবে আর্চারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ব। ভাগ্যে থাকলে যা হয় আরকি। হঠাৎ করেই আর্চারিতে এসেছি। নীলফামারী গার্লস হাইস্কুলে পড়ার সময় শারীরীক শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক খায়রুল ইসলাম আমার উচ্চতা দেখে আর্চারিতে আসতে বললেন। ওখানে ট্রায়ালে টিকলাম। এরপর ১০ দিনের অনুশীলন করে বিকেএসপিতে এসে ট্রায়ালে টিকে গেলাম। ভর্তি হলাম অষ্টম শ্রেণিতে।”

“অন্য কোনো খেলা কখনও খেলিনি। শখ করে হ্যান্ডবল খেলতাম; ব্যাডমিন্টন খেলতাম। গ্রামের বাড়িতে ভাইয়ারা বাঁশ দিয়ে তীর-ধনুক নিয়ে খেলত, আমিও এক-দুবার খেলেছিলাম। এই যা।”

মেয়ে ডাক্তার হবে-বাবার এই স্বপ্ন পূরণের জন্য বিজ্ঞান বিভাগে পড়ছেন দিয়া। তাহলে ডাক্তার নাকি আর্চার এই প্রশ্নের জবাবে সম্ভাবনা জাগিয়ে অনেকের মতো হারিয়ে না যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিলেন তিনি।

“এই পর্যায়ে অনেকে হারিয়ে যায়। আমি হারিয়ে যেতে আসিনি। সামনে অনেকগেুলো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা আছে। অলিম্পিক আছে। আমি সেখানে নিজেকে মেলে ধরতে চাই।”