বেলজিয়ামের ব্রাজিল বধ

একের পর এক আক্রমণে রক্ষণে ভীতি ছড়িয়েছে ব্রাজিল। কিন্তু বেলজিয়ামও যে ছিল তাদের সেরা ছন্দে। গতিময় পাল্টা আক্রমণে উঠে আর একের পর এক আক্রমণ রুখে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের বধ করেছে দেশটির ‘সোনালী প্রজন্ম’।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2018, 05:44 PM
Updated : 7 July 2018, 11:23 AM

কাজান অ্যারেনায় ঝরে পড়ল আরেক চ্যাম্পিয়ন। ব্রাজিলকে ২-১ গোলে হারিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে উঠেছে বেলজিয়াম।

শুক্রবার রাতে শুরুতেই ফের্নান্দিনিয়োর আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়ে ব্রাজিল। প্রথমার্ধেই ব্যবধান বাড়ে কেভিন ডে ব্রুইনের দারুণ গোলে। বদলি হিসেবে নামা রেনাতো আউগুস্তোর গোলে আশা দেখেছিল তিতের দল। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস গড়তে পারেনি।

ম্যাচের সপ্তম মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারতো ব্রাজিল। নেইমারের কর্নারে কোনোমতে বলে পা লাগিয়েছিলেন চিয়াগো সিলভা। বল উঁচু হয়ে উঠে বারে লেগে ফিরে। চার মিনিট পর আরেকটি কর্নার থেকে ফাঁকায় বল পেয়েও ১০ গজ দূর থেকে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি পাওলিনিয়ো।

ত্রয়োদশ মিনিটে কর্নার থেকে ঠিকই গোল করে ফেলে বেলজিয়াম। নাসের শাদলির কর্নারে বল ফের্নান্দিনিয়োর কনুইয়ে লেগে জালে ঢোকে। এবারের আসরে এটি একাদশ আত্মঘাতী গোল।

গোল খেয়ে আক্রমণ আরও জোরদার করে ব্রাজিল। তবে কেবল রক্ষণ না করে প্রতিবারই প্রতি আক্রমণে ভীতি ছড়ায় বেলজিয়াম। সুফলও মেলে ৩১তম মিনিটে। মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে এগিয়ে গতি আর শক্তিতে বাধা এড়িয়ে রোমেলু লুকাকু বল বাড়ান ডানে। ডে ব্রুইনে বল ধরে সামনে একটু এগিয়ে ডি-বক্সের ঠিক বাইরে থেকে কোনাকুনি শটে বাঁ পোস্ট ঘেঁষে বল জালে পাঠান।

পাঁচ মিনিট পর দুইবার ব্রাজিলকে বঞ্চিত করেন থিবো কর্তোয়া। বাঁ দিক থেকে মার্সেলোর ক্রস ঠেকানোর পর ফিলিপে কৌতিনিয়োর বাঁকানো শট পুরো ঝাঁপিয়ে ঠেকান চেলসির এই গোলরক্ষক।

বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমার্ধে দুই গোলে পিছিয়ে থেকে জিততে পারেনি কোনো দল। সেই অসম্ভব কাজটা করতে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই উইলিয়ানের জায়গায় রবের্তো ফিরমিনোকে নামান তিতে। দ্বিতীয়ার্ধের ষষ্ঠ মিনিটেই সুযোগ পেয়েছিলেন লিভারপুলের এই ফরোয়ার্ড; কিন্তু বাঁ দিক থেকে মার্সেলোর দারুণ নিচু ক্রসে পা লাগতে পারেননি।

এরপর থেকে একের পর এক হলুদ ঢেউ আছড়ে পড়ে বেলজিয়ামের ডি-বক্সে। তবে দ্বিতীয়ার্ধে সঙ্গত কারণেই রক্ষণে মনোযোগ বেশি ছিল কম্পানিদের। এরই মধ্যে ৬২তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে ম্যাচটা শেষ করে দেওয়া সুযোগ এসেছিল বেলজিয়ানদের। কিন্তু ডে ব্রুইনের বাঁ দিকে বাড়ানো বল ধরে ডি-বক্সে ঢুকে নেওয়া এদেন আজারের শট দূরের পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে যায়। পরক্ষণেই বদলি হিসেবে নামা দগলাস কস্তার নিচু শট দৃঢ়তার সঙ্গে ঠেকান কর্তোয়া।

৭৫তম মিনিটে আবার কস্তার জোরালো শট, আবার বাধা কর্তোয়া। তবে পরের মিনিটে পুরো ঝাঁপিয়েও পারেননি। কৌতিনিয়োর উঁচিয়ে দেওয়া বলে মাথার পাশ দিয়ে হেডে ডান পোস্ট ঘেঁষে বল জালে পাঠিয়ে ব্রাজিলকে আশা দেখান বদলি হিসেবে নামা আউগুস্তো। ২ মিনিট পর খুব কাছ থেকে ফিরমিনো শটটা লক্ষ্যে রাখতে পারলে সমতায় ফিরতে পারতো ব্রাজিল।

৮০তম মিনিটে আরেকটি গোলের খুব কাছে ছিলেন আউগুস্তো। ডি-বক্সের মাঝ থেকে তার জোরালো শট একটুর জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। চার মিনিট পর নেইমারের কাটব্যাকে ফাঁকায় থাকা কৌতিনিয়োর শটও লক্ষ্যে থাকেনি।

পাঁচ মিনিটের যোগ করা সময়েও এসেছিল সুবর্ণ সুযোগ। ডি-বক্স থেকে নেইমারের বাঁকানো শট দুর্দান্ত সেভে ক্রসবারের উপর দিয়ে পাঠিয়ে ম্যাচে শেষবারের মতো বেলজিয়ামকে রক্ষা করেন কর্তোয়া।

এই কাজানেই দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। এখানেই শেষ ষোলোতে ফ্রান্সের কাছে হেরে স্বপ্ন ভেঙেছে মেসির আর্জেন্টিনার। এবার রচিত হলো ব্রাজিলের বিদায়ের কাব্য। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সেমি-ফাইনালে নেই ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা বা জার্মানির মধ্যে কোনো একটি দেশ।

গত চার বিশ্বকাপের তিনটিতেই ব্রাজিল বিদায় নিল শেষ আট থেকে, তিনবারই ইউরোপিয়ান প্রতিপক্ষের কাছে হেরে। গত নিজেদের মাটিতে গত বিশ্বকাপে সেমি-ফাইনাল থেকেও বিদায় ইউরোপের জার্মানির হাতে। লাতিন আমেরিকার প্রভাব গুঁড়িয়ে বিশ্বকাপে এখন ইউরোপেরই জয়জয়কার। বিশ্বকাপে টিকে নেই আর কোনো মহাদেশের প্রতিনিধি।

দুর্দান্ত এই জয়ে বেলজিয়ামের অপরাজেয় পথচলাটাও আরও দীর্ঘ হলো। এ নিয়ে শেষ ২৪ ম্যাচের একটিতেও হারেনি তারা। ২০১৬ সালের অগাস্টে রবের্তো মার্তিনেস কোচ হিসেবে যোগ দেওয়ার পরের মাসে স্পেনের কাছে ২-০ গোলে হেরেছিল দলটি। তার অধীনে বেলজিয়ামের সেটিই ছিল প্রথম ম্যাচ এবং এখন পর্যন্ত ওই একটিই হার।

মার্তিনেস জানিয়েছিলেন, ছেলেদের স্বপ্নের ম্যাচ হতে যাচ্ছে ব্রাজিলের বিপক্ষে এই কোয়ার্টার-ফাইনাল। এখন আরও বড় স্বপ্ন দেখছে তার শিষ্যরা।

স্বপ্ন দেখারই কথা; ৩২ বছর পর আবারও বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে উঠছে বেলজিয়াম। ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপে সেবার বিদায় নিতে হয়েছিল মারাদোনার আর্জেন্টিনার কাছে ২-০ গোলে হেরে। এবার ফাইনালে ওঠার বাধা উরুগুয়েকে বিদায় করে দেওয়া ফ্রান্স।