সেন্ত পিতার্সবুর্গে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় রাতে ১২টায় ‘ডি’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়ার মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা। রাশিয়া বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে উঠতে হলে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে জিততেই হবে আর্জেন্টিনাকে। সেই সঙ্গে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের তাকিয়ে থাকতে হবে ক্রোয়েশিয়া-আইসল্যান্ডের ম্যাচের ফলের দিকে।
আইসল্যান্ডের সঙ্গে ১-১ ড্র করা ম্যাচে ম্যাচে পেনাল্টি থেকেও গোল পাননি মেসি। ক্রোয়েশিয়ার কাছে ৩-০ গোলে হারা ম্যাচে বার্সেলোনার এই তারকা ফরোয়ার্ড ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে।
বিবিসির কলামে বিশ্বকাপ দলে জায়গা না পাওয়া সাবালেতা লিখেছেন, মেসিকে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের সমালোচনা করাটা অন্যায়। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে দলের সেরা তারকা ঘুরে দাঁড়াবে বলেও বিশ্বাস তার।
“আমি মনে করি, মেসির জন্য আর্জেন্টিনার হয়ে খেলাটা আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। রোববারে সে ৩১ বছর পূরণ করেছে। অর্থাৎ তার বয়স বাড়ছে এবং কখনও কখনও মানসিকভাবেও আপনি ক্লান্ত বোধ করতে পারেন।”
“এর কিছু কারণ আর্জেন্টিনার হয়ে তার খেলার ইতিহাসও। দলটা অতীতে তিনটি ফাইনালে হেরেছিল-২০১৪ বিশ্বকাপ এবং ২০১৫ ও ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকায়।”
“আর্জেন্টিনাতে এটা যথেষ্ট নয়। কিছু মানুষের কাছে, গণমাধ্যমের একটা অংশের কাছে আপনাকে জিততে হবে। শুধু ফাইনালে ওঠা গ্রহণযোগ্য নয়।”
বার্সেলোনার হয়ে ভুরিভুরি শিরোপা মেসির। আর্জেন্টিনার হয়ে নেই তেমন কিছু। আর্জেন্টাইনদের ক্ষোভের কারণেটা বোঝেন সাবালেতা। তবে মেসিকে যে তার দেশের অনেকে ভালোবাসে সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
“এটা কঠিন, যখন আপনার দেশের লোকে আপনাকে পরাজিত হিসেবে গণ্য করে। তারা তাকে বার্সেলোনার হয়ে প্রতি মৌসুমে শিরোপা জিততে দেখে-তাই তারা প্রত্যাশা করে একই কাজটি সে জাতীয় দলের হয়েও করবে।”
“যখন লিও ভালো খেলে না, তখন সে সমালোচনার শিকার হয় কিন্তু যখন সে দলের পাশে থাকে না-যেমন ২০১৬ সালে যখন সে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য অবসর নিয়েছিল-তখন কিন্তু লোকে তাকে ফেরার জন্য ডেকেছে।”
“তার সতীর্থ হিসেবে আমি কোনো সন্দেহ ছাড়াই বলতে পারি যে, সে থাকলে আমরা সবসময় তুলনামূলক ভালো দল। যারা বলে সে বার্সেলোনার হয়ে যেভাবে খেলে, দেশের হয়ে সেভাবে খেলে না, তারা ভুল। যখন আমি তার সঙ্গে জাতীয় দলে খেলেছি, সে সবসময়ই দলের মূল খেলোয়াড় এবং মূল মানুষটা ছিল।”
অনেকেই মনে করছেন রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষ বিশ্বকাপ হতে পারে মেসির। সাবালেতাও তাই মনে করেন। এ কারণে তার বিশ্বাস নাইজেরিয়ার বিপক্ষে জ্বলে উঠবে মেসি।
ক্রোয়েশিয়া ম্যাচ শুরুর আগে মেসির মাথায় হাত দেওয়া ছবি দেখা গিয়েছিল। সাবেক সতীর্থের হাবভাব দেখে চিন্তিত সাবালেতা।
“তার সঙ্গে খেলার সময়ে আমি তাকে সবচেয়ে খুশি দেখেছিলাম ২০১২ সালে-নিউ ইয়র্কে; ব্রাজিলের বিপক্ষে সে হ্যাটট্রিক করেছিল। এবং পুরো ম্যাচটা সে স্বাধীনতা এবং মুখে হাসি নিয়ে খেলেছিল।”
“বৃহস্পতিবার ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের আগে তার শরীরী ভাষা ছিল একেবারেই বিপরীত। লিওকে এতটা অবসন্ন এবং অখুশি দেখাটা আসলেই চিন্তার ছিল।”
“সে আমার বন্ধু এবং সাবেক সতীর্থ। তার জন্য আসলেই আমি কষ্ট অনুভব করেছিলাম। তাকে এভাবে দেখা ভীষণ অস্বাভাবিক। কিন্তু এটা ছিল তার মাথায় কী চলছে সেটার চিহ্ন।”
“এখনকার মতো সময়ে সময়ে তার ওপর অনেক চাপ থাকে। কেননা, লোকে অনেক প্রত্যাশা করে এবং তার জন্য জাতীয় দলের সবকিছুই করাটা চাপের।”
ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের পর কোচ হোর্হে সাম্পাওলি বলে মাঝমাঠ থেকে বলের যোগান না পাওয়ায় নিজের মতো করে খেলতে পারেননি মেসি। সাবালেতারও মনে হচ্ছে ম্যাচটা উপভোগ করতে পারেননি তার সাবেক সতীর্থ।
“ক্রোয়েশিয়ার কাছে বিধ্বস্ত হওয়া ম্যাচে তাকে সংগ্রাম করতে দেখে আমি বিস্মিত হয়নি। একজন খেলোয়াড় হিসেবে আমি জানি, আপনি যদি একটা ম্যাচ খেলতে আসলেই উপভোগ করতে না পারেন, তাহলে আপনার পক্ষে ভালো খেলা আসলে কঠিন।”