লুজনিকি স্টেডিয়াম, মস্কো
শুরুতে লুজনিকি স্টেডিয়ামের নাম ছিল সেন্ট্রাল লেনিন স্টেডিয়াম। সোভিয়েত ইউনিয়নের অ্যাথলেটরা ১৯৫২ সালে হেলসিংকি অলিম্পিক থেকে ৭১টি পদক জিতে ফেরার পর ক্রীড়ার উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে মাত্র ৪৫০ দিনে এটি নির্মাণ করা হয়।
ওই সময়ে ধারণক্ষমতা ছিল এক লাখের কিছু বেশি। ১৯৮০ সালে মস্কো অলিম্পিকের প্রধান ভেন্যু ছিল এই স্টেডিয়াম। ১৯৯০ এর দশকে সংস্কার করে এর নতুন নাম রাখা হয় লুজনিকি। ১৯৯৯ সালে উয়েফা কাপের ফাইনাল এবং ২০০৮ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল হয় এই স্টেডিয়ামে।
২০১৮ সালের বিশ্বকাপ উপলক্ষে স্টেডিয়ামের ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে। মাত্র পঞ্চম স্টেডিয়াম হিসেবে একই সঙ্গে বিশ্বকাপ ও ইউরোপিয়ান কাপ বা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল আয়োজন এবং অলিম্পিকের মূল ভেন্যু হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার গৌরব অর্জন করতে যাচ্ছে লুজনিকি।
দর্শক ধারণক্ষমতা: ৮১ হাজার
বিশ্বকাপের ম্যাচ: ফাইনাল ছাড়াও একটি সেমি-ফাইনাল, শেষ ষোলোর একটি ম্যাচ এবং উদ্বোধনী ম্যাচসহ গ্রুপ পর্বের চারটি ম্যাচ হবে এখানে।
সেন্ত পিতার্সবুর্গ স্টেডিয়াম, সেন্ত পিতার্সবুর্গ
২০০৭ সালে শুরু হওয়া সেন্ত পিতার্সবুর্গ স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০০৯ সালে। ফিফার শর্ত মানতে নকশার পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে দেরি হয়। প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ কোটি ২০ লাখ ইউরো, কিন্তু দেরি হওয়ায় কমপক্ষে তিনগুণ বেশি খরচ হয়।
‘নভোযান নকশার’ এই স্টেডিয়ামের ছাদ খোলা ও বন্ধ করা যায়। প্রযুক্তির দিক দিয়ে বিশ্বের অন্যতম অত্যাধুনিক এই স্টেডিয়াম বিশ্বকাপের পর রুশ ক্লাব জেনিতের ঘরের মাঠ হবে।
দর্শক ধারণক্ষমতা: ৬৭ হাজার
বিশ্বকাপের ম্যাচ: তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান নির্ধারণী ম্যাচ, একটি সেমি-ফাইনাল, একটি শেষ ষোলোর ম্যাচ এবং গ্রুপ পর্বের চারটি ম্যাচ হবে এখানে।
নিজনি নভগোরোদ স্টেডিয়াম, নিজনি নভগোরোদ
নিজনি নভগোরোদ শহরের কেন্দ্রে ওকা নদী ভলগা নদীর পশ্চিম তীরে যে জায়গায় মিশেছে সেখানে তৈরি করা হয়েছে স্টেডিয়ামটি।
ভলগা অঞ্চলের ভূপ্রকৃতির সাথে মিল রেখে নতুন এই স্টেডিয়ামের নকশা করা হয়েছে।
দর্শক ধারণক্ষমতা: ৪৫ হাজার
বিশ্বকাপের ম্যাচ: একটি কোয়ার্টার-ফাইনাল, শেষ ষোলোর একটি ম্যাচ ও গ্রুপ পর্বের চারটি ম্যাচ হবে এখানে।
কাজান অ্যারেনা, কাজান
লন্ডনের ওয়েম্বলি ও এমিরেটস স্টেডিয়াম এবং কাজান অ্যারেনার নকশা করেছে একই স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান। তাই ঐ দুই স্টেডিয়ামের সঙ্গে কাজান অ্যারেনার সাদৃশ্য রয়েছে।
২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের একটি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি স্টেডিয়ামটি এখন স্থানীয় ফুটবল ক্লাব রুবিন কাজানের ঘরের মাঠ।
দর্শক ধারণক্ষমতা: ৪৫ হাজার
বিশ্বকাপের ম্যাচ: একটি কোয়ার্টার-ফাইনাল, শেষ ষোলোর একটি ম্যাচ ও গ্রুপ পর্বের চারটি ম্যাচ হবে এখানে।
ফিশৎ স্টেডিয়াম, সোচি
কৃষ্ণ সাগরের তীরে অবস্থিত ১৪০ কিলোমিটার বিস্তৃত সোচি ইউরোপের সবচেয়ে দীর্ঘ শহর; পুরো বিশ্বে মেক্সিকো সিটির পরে দ্বিতীয়। বিশ্বকাপের সবচেয়ে দক্ষিণের এই ভেন্যুর আরেক দিকে ককেসাস পর্বতমালা।
২০১৪ সালে সোচিতে শীতকালীন অলিম্পিক উপলক্ষে বরফাচ্ছাদিত চূড়ার নকশায় ফিশৎ স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করা হয়। নাম রাখা হয় ককেসাস পর্বতমালার ফিশৎ শৃঙ্গের নামে। স্থানীয় ভাষায় ফিশৎ শব্দের অর্থ ‘সাদা মাথা’।
উত্তরে ক্রাসনায়া পলিয়ানা পর্বতমালা ও দক্ষিণে কৃষ্ণ সাগর দেখার সুযোগ করে দিতে স্টেডিয়ামটির দুই প্রান্ত আগে খোলা ছিল। কিন্তু ফিফার শর্ত অনুসারে আসন সংখ্যা বাড়াতে এই দুই প্রান্তে অস্থায়ী গ্যালারি নির্মাণ করা হয়েছে।
বিশ্বকাপের ম্যাচ: একটি কোয়ার্টার-ফাইনাল, শেষ ষোলোর একটি ম্যাচ এবং গ্রুপ পর্বের চারটি ম্যাচ হবে এই স্টেডিয়ামে এখানে।
সামারা অ্যারেনা, সামারা
দর্শক ধারণক্ষমতা: ৪৫ হাজার
বিশ্বকাপের ম্যাচ: একটি কোয়ার্টার-ফাইনাল, শেষ ষোলোর একটি এবং গ্রুপ পর্বের চারটি ম্যাচ হবে এখানে।
স্পার্তাক স্টেডিয়াম, মস্কো
দর্শক ধারণক্ষমতা : ৪৫ হাজার
বিশ্বকাপের ম্যাচ: শেষ ষোলোর একটি ম্যাচ এবং গ্রুপ পর্বের চারটি ম্যাচ হবে এখানে।
রস্তোভ অ্যারেনা, রস্তোভ
বিশ্বকাপের জন্য ২০১৩ সালে রস্তোভ অ্যারেনার নির্মাণ শুরু হয়। এখানকার মাটি খোঁড়ার সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের অবিস্ফোরিত বোমা পাওয়া যায়।
ডন নদীর দক্ষিণ তীরে তৈরি এই স্টেডিয়ামকে ঘিরে নতুন নগরকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। শহরের বাকি অংশ উত্তরে।
বিশ্বকাপের পর এর আসন সংখ্যা কমিয়ে ২৫ হাজার করা হবে। তখন স্থানীয় ক্লাব এফসি রস্তোভের ঘরের মাঠ হবে এটি।
দর্শক ধারণক্ষমতা: ৪৫ হাজার
বিশ্বকাপের ম্যাচ: শেষ ষোলোর একটি ও গ্রুপ পর্বের চারটি ম্যাচ হবে এখানে।
মরদোভিয়া অ্যারেনা, সারানস্ক
জমকালো এই স্টেডিয়ামের বাইরের রং কমলা, লাল এবং সাদা। রাশিয়ার অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সাথে মরদোভিয়ানদের একত্রিত হওয়ার হাজারতম বার্ষিকী উপলক্ষে ২০১০ সালে স্টেডিয়ামটির কাজ শুরু হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে, বিশেষত অর্থসংকটে নির্মাণ কাজ শেষ হতে অনেক দেরি হয়।
দর্শক ধারণক্ষমতা: ৪৪ হাজার
বিশ্বকাপের ম্যাচ: গ্রুপ পর্বের চারটি ম্যাচ হবে এখানে।
একাতেরিনবুর্গ অ্যারেনা, একাতেরিনবুর্গ
এটি বিশ্বকাপের একমাত্র স্টেডিয়াম যেখানে মূল মাঠের বাইরে অস্থায়ী দর্শক গ্যালারি তৈরি করা হয়েছে। ফিফার নিয়মে বিশ্বকাপের কোনো স্টেডিয়ামে অন্তত ৩৫ হাজার আসন থাকতে হবে। এই শর্তে বিপদে পড়ে কর্তৃপক্ষ। পরে স্থপতিদের পরামর্শে দুই গোল-পোস্টের পেছনে মূল মাঠের পরিসীমার বাইরে বাড়তি দুটি গ্যালারি নির্মাণ করা হয়।
মূল স্টেডিয়ামটি তৈরি হয় ১৯৫৩ এবং ১৯৫৭ সালের মধ্যে। ২০০৭ থেকে ২০১১ সালের মাঝে এর সংস্কার করা হয়।
দর্শক ধারণক্ষমতা: ৩৫ হাজার
বিশ্বকাপের ম্যাচ: গ্রুপ পর্বের চারটি ম্যাচ হবে এখানে।
কালিনিনগ্রাদ স্টেডিয়াম, কালিনিনগ্রাদ
বায়ার্ন মিউনিখের অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনার আদলে তৈরি কালিনিনগ্রাদ স্টেডিয়াম নির্মাণে অনেক সমস্যা ও দেরি হয়েছে। প্রাথমিক নকশার দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যায়। শুরুতে ছাদসহ ৪৫ হাজার আসনের অত্যাধুনিক স্টেডিয়ামের পরিকল্পনা করা হলেও পরে ৩৫ হাজার আসনের সাদামাটা স্টেডিয়াম তৈরি করা হয়।
দর্শক ধারণক্ষমতা: ৩৫ হাজার
বিশ্বকাপের ম্যাচ: গ্রুপ পর্বের চারটি ম্যাচ হবে এখানে।
ভলগোগ্রাদ স্টেডিয়াম, ভলগোগ্রাদ
১৯৫৮ সালে চালু হওয়া সেন্ট্রাল স্টেডিয়াম ভেঙে তার জায়গায় ভলগোগ্রাদ স্টেডিয়ামটি বিশ্বকাপের জন্য নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বকাপের অন্যতম নয়নাভিরাম মাঠ এটি। স্টেডিয়ামের ছাদ এমনভাবে বানানো হয়েছে যে দেখলে সাইকেলের চাকার স্পোকের কথা মনে হয়।
দর্শক ধারণক্ষমতা: ৪৫ হাজার
বিশ্বকাপের ম্যাচ: গ্রুপ পর্বের চারটি ম্যাচ হবে এখানে।
* উল্লেখিত ধারণ ক্ষমতা স্টেডিয়ামগুলো পুরোপুরি নির্মিত অবস্থার। বিশ্বকাপ চলার সময় বিভিন্ন কারণে তা কমে আসবে।