বেলের জোড়া গোলে লিভারপুলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল

ইতিহাস গড়তে গত আসরের ফাইনালে খেলানো একাদশের ওপরই আস্থা রেখেছিলেন জিনেদিন জিদান। তাকে হতাশ করেনি শিষ্যরা। উজ্জীবিত লিভারপুলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা ঘরে তুলেছে রিয়াল মাদ্রিদ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2018, 08:38 PM
Updated : 26 May 2018, 11:52 PM
কিয়েভে শনিবারের ফাইনালে ৩-১ গোলে জিতেছে জিদানের দল। করিম বেনজেমার গোলে এগিয়ে যায় দলটি। লিভারপুলকে সমতায় ফেরান সাদিও মানে। বদলি নেমে জোড়া গোল করে দলকে শিরোপা এনে দেন গ্যারেথ বেল।

আধুনিক সংস্করণে প্রথম দল হিসেবে টানা তিন আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অনন্য কীর্তি গড়ল রিয়াল। সব মিলিয়ে বায়ার্ন মিউনিখের পর প্রথম দল হিসেবে টানা তিন আসরে চ্যাম্পিয়ন হলো মাদ্রিদের ক্লাবটি। একই সঙ্গে প্রথম কোচ হিসেবে টানা তিনবার ইউরোপ সেরা হওয়ার কীর্তি গড়লেন ২০১৬ সালে মাদ্রিদের ক্লাবটির দায়িত্ব নেওয়া ফরাসি কোচ জিদান। 

গত মৌসুমে রিয়াল ফাইনালে হারিয়েছিল ইউভেন্তুসকে, তার আগেরবার আতলেতিকো মাদ্রিদকে। এবার লিভারপুলকে হারিয়ে ত্রয়োদশ শিরোপা জিতল টুর্নামেন্টের সফলতম দল রিয়াল।

কিয়েভে ম্যাচের শুরুতে রিয়াল মাদ্রিদকে কাঁপিয়ে দেয় লিভারপুল। স্প্যানিশ দলটির অগোছালো ফুটবলের সুযোগ নিয়ে একের পর এক আক্রমণে কঠিন পরীক্ষা নেয় রক্ষণের। তবে কোনোমতে আক্রমণের ঝাপটে সামলে নেয় জিদানের শিষ্যরা।

২৩তম মিনিটে ডি-বক্স থেকে রবের্তো ফিরমিনোর বুলেট গতির শট ফেরে সের্হিও রামোসের পায়ে লেগে। ফিরতি বলে ট্রেন্ট অ্যালেকজান্ডার-আর্নল্ডের শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান রিয়াল গোলরক্ষক কেইলর নাভাস।

৬ মিনিটের মধ্যে চোখে জল নিয়ে মাঠ ছাড়েন দুই দলের দুই খেলোয়াড়। রামোসের সঙ্গে বল কাড়াকাড়ি করার সময়ে চোট পান মোহামেদ সালাহ। কিছুক্ষণ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফিরলেও খেলা চালিয়ে যেতে পারেননি লিভারপুলের মিশরীয় ফরোয়ার্ড। ৩০তম মিনিটে হাল ছেড়ে উঠে যান তিনি।

সালাহ মাঠ ছাড়ার আগ পর্যন্ত এক চেটিয়া আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলছিল লিভারপুল। চলতি মৌসুমে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৪৪ গোল করা ফরোয়ার্ডকে হারানোর পর খেলায় খানিকটা ছন্দ পতন হয় ইংলিশ দলটির। সেই সুযোগে মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় রিয়াল। প্রথমার্ধের বাকি সময়ে দাপট ছিল তাদেরই।

৩৬তম মিনিটে মাঠ ছাড়েন খানিক আগে চোট পাওয়া রিয়ালের স্প্যানিশ ডিফেন্ডার দানি কারভাহাল।

৪৩তম মিনিটে লিভারপুলের জালে বল পাঠান করিম বেনজেমা। কিন্তু গোলের বদলে অফ সাইডের বাঁশি বাজান রেফারি। দূর থেকে আচমকা শট নিয়ে চেষ্টা চালায় জিদানের শিষ্যরা। কিন্তু সাফল্য মেলেনি।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে লিভারপুলকে চেপে ধরে রিয়াল। দ্রুতই পেতে যাচ্ছিল তার সুফল। ৪৮তম মিনিটে ডি-বক্সে আলগা বল পেয়ে যান ইসকো। কিন্তু সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। ক্রসবার লেগে ফেরে স্প্যানিশ মিডফিল্ডারের শট।

৫১তম মিনিটে লিভারপুলের জার্মান গোলরক্ষকের অমার্জনীয় ভুলে এগিয়ে যায় রিয়াল। বেনজেমাকে লক্ষ্য করে বাড়ানো বল এগিয়ে এসে গ্লাভসে নেন লরিস কারিয়ুস। একটু সামনে থাকা এক ডিফেন্ডারকে বল দিতে চেয়েছিলেন তিনি; কিন্তু পারেননি, কাছাকাছি থাকা বেনজেমার পায়ের পিছন দিকে লেগে বল জড়ায় জালে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এটি তার ৫৬তম গোল।

৫৫তম মিনিটে সাদিও মানের গোলে সমতা ফেরায় লিভারপুল। কর্নার থেকে দেজান লভরেনের হেড পা ছুঁইয়ে জালে পাঠান সেনেগালের ফরোয়ার্ড মানে। চলতি আসরে এটি তার দশম গোল।

৬১তম মিনিটে বদলি নেমে তিন মিনিটের মধ্যে দুর্দান্ত এক গোলে দলকে এগিয়ে নেন বেল। মার্সেলোর ক্রসে বাইসাইকেল কিকে জাল খুঁজে নেন ওয়েলসের তারকা ফরোয়ার্ড।

৭০তম মিনিটে অল্পের জন্য ফেরেনি সমতা। মানের নিচু শট ব্যর্থ হয় পোস্টে লেগে।

৮৩তম মিনিটে গোলরক্ষকের আরেকটি ভুলে নিজের দ্বিতীয় গোল পেয়ে যান বেল। ডি-বক্সের বেশ বাইরে থেকে গোলরক্ষক বরাবর শট নেন তিনি। কিন্তু গ্লাভসে নিতে পারেননি কারিয়ুস, ফস্কে গিয়ে বল জড়ায় জালে।
ইউরোপ সেরার মঞ্চে এর আগে রিয়াল সবশেষ ফাইনালে হেরেছিল ১৯৮১ সালে; লিভারপুলের কাছে। তারপর থেকে এনিয়ে সাতবার ফাইনাল খেলে সবকটিতে জিতল মাদ্রিদের ক্লাবটি।

২০০৫ সালে নিজেদের পাঁচ শিরোপার শেষটি জিতেছিল লিভারপুল। ২০০৭ সালের পর আবার ফাইনালে হারল ইংল্যান্ডের দলটি।  

প্রথম ফুটবলার হিসেবে পাঁচটি ব্যালন ডি’অর ও পাঁচটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতলেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। তবে ফাইনালে খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায়নি তাকে। যেন নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন রিয়ালের সবচেয়ে বড় তারকা।