রাশিয়া বিশ্বকাপ হতে পারে মেসির ‘শেষ সুযোগ’

ক্লাব ফুটবলে সব শিরোপা জিতেছেন একাধিকবার; কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে এখনও কাটেনি শূন্যতা। আসছে বিশ্বকাপেই সে অপূর্ণতা ঘোঁচাতে চান লিওনেল মেসি। আর্জেন্টিনা অধিনায়কের ধারণা, রাশিয়ায় ফের ব্যর্থ হলে তিনি বা তার সতীর্থরা আর কোনো সুযোগ পাবে না।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 March 2018, 12:41 PM
Updated : 20 March 2018, 12:41 PM

আন্তর্জাতিক ফুটবলে বেশ কয়েকবার সাফল্যের খুব কাছে গিয়েও ডুবতে হয়েছে হতাশায়। ২০০৫ সালে জাতীয় দলে মেসির অভিষেক হওয়ার পর তিন বার কোপা আমেরিকার রানার্সআপ হয় আর্জেন্টিনা। জার্মানির কাছে হারে ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে।

ওই বিশ্বকাপের পরের দুই বছর কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠে প্রতিবারই চিলির কাছে হেরে বসে আর্জেন্টিনা। সবশেষ হারের পর হতাশায় জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন মেসি। তবে পরে সবার অনুরোধে পাল্টান সিদ্ধান্ত।

রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে সময়টা ভালো কাটেনি আর্জেন্টিনার। একসময় তো ছিটকে পড়ার শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল তারা। তবে শেষ রাউন্ডে মেসির অসাধারণ এক হ্যাটট্রিকে একুয়েডরকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সরাসরি বিশ্বকাপে ওঠে দুবারের চ্যাম্পিয়নরা।

মাঝে লম্বা সময় ধরে আর্জেন্টাইন গণমাধ্যম বয়কট করেছিলেন মেসি ও তার সতীর্থরা। দেশটির সংবাদমাধ্যম অন্যায্যভাবে পুরো দলের সমালোচনায় মেতেছিল বলে অভিযোগ ছিল তাদের।

সম্প্রতি দেশটির একটি টিভি অনুষ্ঠানে ওই প্রসঙ্গে মেসি বলেন, “এই দলের খেলোয়াড়দের ভাবনা এটাই। এমন যে, টানা তিনটি ফাইনালে ওঠা কিছুই নয়। অবশ্যই ফলাফলই আসল কথা এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা তিন ফাইনালে উঠে কোনোটিতেই জিততে পারিনি।”

“আমাদের সম্পর্কে অনেক কিছু বলা হয়েছে। সেসব সমালোচনা তখন আঘাত করেছিল। রাশিয়াতেও দলটির কাছে শিরোপা জেতার দাবি থাকবে। আমাদের মনে হয়, আমরা যদি করতে না পারি তাহলে আরও অনেক সমালোচনা হবে এবং আমরা আরেকটি সুযোগ পাব না।”

আগামী শুক্রবার ইতালির বিপক্ষে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা। এর চার দিন পর আরেক সাবেক চ্যাম্পিয়ন স্পেনের মুখোমুখি হবে হোর্হে সাম্পাওলির দল। এই দুই প্রীতি ম্যাচের জন্য বর্তমানে জাতীয় দলের সঙ্গে আছে মেসি।

আগামী জুন-জুলাইয়ে হতে যাওয়া বিশ্বকাপেই নিজের অপূর্ণতা ঘোঁচাতে এবং দেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণে মরিয়া পাঁচটি ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসি।

“ফাইনালগুলো হারায় আমি অনেক কেঁদেছি। কেঁদেছি আমাদের জাতির স্বপ্ন পূরণ করতে না পারায়। প্রত্যেক আর্জেন্টাইনের মতো আমাদের চাওয়াও এক, সেটা হলো বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরা।”

২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে স্বপ্নভঙ্গের স্মৃতি আজও তাড়া করে ফেরে বলে জানিয়েছেন মেসি।

“একটা বিশ্বকাপ জেতা কতটা চ্যালেঞ্জিং আমরা জানি। বিশ্বকাপ জেতা খুবই কষ্টের আর সে স্বপ্ন পূরণের খুব কাছে আমরা গিয়েছিলাম। ফুটবল বিস্ময়কর ঘটনায় ভরা। সবসময় সেরা দলই জিতবে, বিষয়টা এমন নয়। এটা মেনে নিতে শিখেছি আমি। আমার মনে হয়েছিল, ২০১৪ বিশ্বকাপ আমাদের প্রাপ্য ছিল। সেটা কঠিন একটা ধাক্কা ছিল। খুব কাছাকাছি ছিলাম, খুবই কষ্টকর।”

আরেকটি বিশ্বকাপের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে কষ্টের সে স্মৃতিতে প্রলেপ দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মেসি। এবারের বিশ্বকাপে ‘ডি’ গ্রুপে তাদের প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া, আইসল্যান্ড ও নাইজেরিয়া।

“আমি ফাইনালে ওঠার, শিরোপা উঁচিয়ে ধরার স্বপ্ন দেখি। এটা আমার সারাজীবনের স্বপ্ন। প্রতিবার একটা বিশ্বকাপ আসে আর আমার ইচ্ছেগুলো শক্তিশালী হয়।”

“আশা করি, এটা আমাদের জন্য দারুণ একটা বিশ্বকাপ হবে এবং ২০১৪ সালের মতো একইরকম অভিজ্ঞতা হবে। দেশের জন্য যা অবিস্মরণীয় একটা অভিজ্ঞতা ছিল; তবে এবার শিরোপা উঁচিয়ে।”

“বিশ্বকাপ জয় করা সহজ নয়। এটা প্রায়ই ঘটে না। শেষ বার আমরা সবকিছু ভালোমতোই করেছিলাম কিন্তু ছোট কিছু ভুলের জন্য জিততে পারিনি। দেশের জন্য আমরা খুব করে বিশ্বকাপ জিততে চাই। আশা করি, ঈশ্বর আমাদের সাহায্য করবেন এবং এটা বাস্তবায়িত হবে।”

দিয়েগো মারাদোনার নেতৃত্বে ১৯৮৬ সালে সবশেষ বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা।

বার্সেলোনার ইতিহাসের রেকর্ড গোলদাতা মেসির বিশ্বাস, শুধু তিনি বা তার দেশের মানুষই নয় বরং পুরো বিশ্বই আর্জেন্টিনার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়া দেখতে চায়।

“বার্সেলোনায় গুরুত্বপূর্ণ কিছুর জন্যে খেলতে পেরে আমি ভাগ্যবান। তা আমাকে লক্ষ্যে মনোযোগী হতে এবং দূরের কিছু নিয়ে না ভাবতে শিখিয়েছে। তবে সারা বিশ্বে আমি দেখেছি যে, সব মানুষ আমার ও আর্জেন্টিনার জন্য দারুণ একটি বিশ্বকাপ চায়।”

“অনেক মানুষ আমাকে চ্যাম্পিয়ন দেখতে চায় যা অবিশ্বাস্য কিছু।”

চলতি মৌসুমে দারুণ ছন্দে থাকা মেসি বার্সেলোনার হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৪ গোল করেছেন। তার নৈপুণ্যে লা লিগা, কোপা দেল রে ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শিরোপা জয়ের পথে আছে কাতালান ক্লাবটি।

দেশের হয়ে কোনো সাফল্য না পাওয়ায় বারবার সমালোচনার মুখে পড়েছেন মেসি। তবে সমালোচনার প্রশ্নে তিনি নিজেই তার বড় সমালোচক বলে জানালেন ৩০ বছর বয়সী তারকা।

“আমিই প্রথম বুঝতে পারি যে আমি ভালো না খারাপ খেলছি। এটা শুধু গোলের বিষয় নয়, আপনি ভালো খেলছেন কি-না, সেটাই আসল। কিছু ম্যাচ আছে যেখানে আমি গোল করেছি কিন্তু ভালো খেলিনি। এখন আমি দলকে খেলাতে সাহায্য করি আর কম ফিনিশার হই।”