মেসি-সুয়ারেসের গোলে রিয়ালকে হারাল বার্সা

প্রয়োজনের সময় জ্বলে উঠতে পারলেন না ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো; সুযোগ নষ্ট করলেন অনেক। অন্যদিকে দারুণ ছন্দে থাকা লিওনেল মেসি দেখা দিলেন স্বরূপে। সময়ের সেরা দুই তারকার এমন বিপরীতমুখী পারফরম্যান্সই হয়ে উঠল ফল নির্ধারক। দ্বিতীয়ার্ধের অনেকটা সময় একজন কম নিয়ে খেলা রিয়াল মাদ্রিদকে তাদেরই মাঠে হারিয়ে দিল বার্সেলোনা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Dec 2017, 01:51 PM
Updated : 24 Dec 2017, 03:07 PM

শনিবার সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে স্থানীয় সময় দুপুরে লা লিগার এ মৌসুমের প্রথম ক্লাসিকোয় ৩-০ গোলে জিতেছে বার্সেলোনা। লুইস সুয়ারেসের গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মেসি। শেষ মুহূর্তে আলেইশ ভিদালের গোলে বড় জয় নিশ্চিত হয় কাতালান ক্লাবটির।

প্রথমার্ধে বেশিরভাগ সময় বল দখলে রাখার পাশাপাশি আক্রমণেও এগিয়ে ছিল রিয়াল। কিন্তু বিরতির পর পাল্টে যায় চিত্রপট; একের পর এক আক্রমণে স্বাগতিক রক্ষণভাগকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে অতিথিরা। তারই মাঝে ১০ মিনিটের ব্যবধানে দুবার জালে বল পাঠিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় বার্সেলোনা।

এই প্রথম লিগে সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে টানা তিন ম্যাচে জিতল বার্সেলোনা। এক ম্যাচ কম খেলা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে ১৪ পয়েন্টে এগিয়ে গিয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধারের পথেও এগিয়ে গেল কাতালান ক্লাবটি।

তৃতীয় মিনিটেই হেডে জালে বল পাঠিয়েছিলেন রোনালদো; কিন্তু অফসাইডের বাঁশি বেজে ওঠে। একাদশ মিনিটে টনি ক্রুসের পাস ডি-বক্সে ফাঁকায় পেয়ে বলে পা লাগাতে পারেননি পর্তুগিজ এই ফরোয়ার্ড।

৩০তম মিনিটে প্রথম ভালো সুযোগ পায় বার্সেলোনা। কিন্তু মেসির উঁচু করে বাড়ানো বলে পাওলিনিয়োর শট ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান কেইলর নাভাস। পরের মিনিটে রোনালদোর শট কোনোমতে পা দিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান অতিথি গোলররক্ষক মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেন।

৩৯তম মিনিটে আবারও নাভাসে রক্ষা রিয়ালের। বাঁ-দিক থেকে মেসির ক্রসে পাওলিনিয়োর দারুণ হেড ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান কোস্টা রিকার এই গোলরক্ষক। তিন মিনিট পর বেনজেমার কোনাকুনি হেড পোস্টে লাগলে বেঁচে যায় বার্সেলোনা।

দ্বিতীয়ার্ধের নবম মিনিটে দারুণ এক আক্রমণে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। মাঝমাঠের কাছ থেকে ইভান রাকিতিচ বল পায়ে ছুটে ডান দিকে সের্হিও রবের্তোকে বাড়ান। আর স্প্যানিশ এই মিডফিল্ডারের পাস বাঁ-দিক দিয়ে ডি-বক্সে পেয়ে নিচু শটে নাভাসকে পরাস্ত করেন অরক্ষিত সুয়ারেস।

গোল খেয়ে যেন কিছুটা খেই হারিয়ে বসে রিয়ালের খেলোয়াড়েরা। মেজাজ হারিয়েই হয়তো সুয়ারেসকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন সের্হিও রামোস। এর খানিক পরই চরম ধাক্কা খায় তারা।

ক্ষণিকের জন্য রিয়ালের রক্ষণ উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। সেই সুযোগে বাঁ-দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢোকা সুয়ারেসের শট নাভাস ঝাঁপিয়ে ঠেকালেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি। সতীর্থের পা ঘুরে আসা ফিরতি বল পেয়ে উরুগুয়ের স্ট্রাইকারের দ্বিতীয় প্রচেষ্টা পোস্টে লাগে। ফিরতি বলে জটলার মধ্যে রবের্তোর করা হেড হাত দিয়ে ঠেকানোর দায়ে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন দানি কারবাহাল আর পেনাল্টি পায় বার্সেলোনা। সফল স্পট কিকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মেসি।

ক্লাসিকোয় এই নিয়ে সর্বোচ্চ ২৫ গোল করলেন আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। আর এবারের লিগে সর্বোচ্চ ১৫ গোল হলো মেসির।

আক্রমণের ধার বাড়াতে ৭২তম মিনিটে মাতেও কোভাসিচের জায়গায় গ্যারেথ বেল ও কাসেমিরোকে তুলে মার্কো আসেনসিওকে নামান কোচ।

আক্রমণভাগের শক্তি বাড়ায় বাকি সময়ে বার্সেলোনার রক্ষণে চাপ বাড়াতেও সক্ষম হয় রিয়াল। বেল, রোনালদোরা বেশ কিছু সুযোগও তৈরি করেছিল; কিন্তু কাঙ্ক্ষিত গোলের দেখা মেলেনি।

উল্টো ম্যাচ শেষের আগ মুহূর্তে রিয়ালের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন ভিদাল। ডান দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে দারুণ এক কাটব্যাক করেন মেসি। ভিদালের জোরালো নিচু শট ঠেকাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন নাভাস। গতি কমাতে পারলেও প্রতিহত করতে পারেননি, বল গড়িয়ে গড়িয়ে জালে ঢুকে যায়।

লিগে এখন পর্যন্ত অপরাজিত বার্সেলোনার অর্জন ১৭ ম্যাচে ১৪ জয় ও তিন ড্রয়ে ৪৫ পয়েন্ট।

৯ পয়েন্ট পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে শুক্রবার এসপানিওলের মাঠে ১-০ গোলে হারা আতলেতিকো মাদ্রিদ। এক ম্যাচ কম খেলা রিয়ালের পয়েন্ট ৩১।