মেসি জাদুতে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনার বাঁচামরার ম্যাচে জ্বলে উঠলেন লিওনেল মেসি। হ্যাটট্রিক করে জেতালেন শুরুতেই পিছিয়ে পড়া দলকে। সব শঙ্কা কাটিয়ে আর্জেন্টিনা সরাসরি উঠে গেল রাশিয়া বিশ্বকাপে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2017, 01:24 AM
Updated : 11 Oct 2017, 06:00 AM

দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বের শেষ রাউন্ডে একুয়েডরকে ৩-১ গোলে হারিয়ে ভাগ্য নিজেদের হাতেই রেখেছিল আর্জেন্টিনা। অন্য ম্যাচে ব্রাজিলের কাছে চিলি হেরে যাওয়ায় আর কলম্বিয়া-পেরু ম্যাচ ড্র হওয়ায় তৃতীয় হয়ে সরাসরিই তাই ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে উঠে গেল হোর্হে সাম্পাওলির দল।

ব্রাজিলের মাটিতে ৩-০ গোলে হেরে রাশিয়া বিশ্বকাপে আর যাওয়া হলো না চিলির। আগেই বিশ্বকাপ প্রায় নিশ্চিত করে রাখা উরুগুয়ে ৪-২ গোলে হারিয়েছে বলিভিয়াকে। পেরুর সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে কলম্বিয়া হয়েছে চতুর্থ। পঞ্চম স্থান পাওয়া পেরু প্লে-অফ খেলবে ওশিয়ানিয়া অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে।

টানা তিন ড্রয়ে শেষ রাউন্ডের আগে ষষ্ঠ স্থানে থাকা আর্জেন্টিনা ছিল ভীষণ শঙ্কায়। ম্যাচটি আবার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ৮৫০ মিটার উঁচুতে কিটোয়ে যেখানে ২০০১ সালের পর জেতেনি আর্জেন্টিনা। অসাধ্য সাধনের ভার ছিল অধিনায়ক আর দলের সেরা খেলোয়াড় মেসির কাঁধেই। বার্সেলোনার এই ফরোয়ার্ডও দেখালেন কেন তাকে বলা হয় বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার।

বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোরে শুরু হওয়া ম্যাচের ৩৮ সেকেন্ডের মধ্যে পিছিয়ে পড়ে আর্জেন্টিনা। লম্বা বাড়ানো বল ধরে সতীর্থকে হেডে বাড়িয়েছিলেন দিয়েছিলেন রোমারিও ইবাররা। বল ফেরত পেয়ে কোনাকুনি শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন এই মিডফিল্ডার। বিশ্বকাপ ভাগ্য নিজেদের হাতে রাখতে হলে আর্জেন্টিনার তখন কমপক্ষে দুই গোল করতে হতো।

মেসির নৈপুণ্যে সমতা ফেরাতে দেরি হয়নি আর্জেন্টিনার। দ্বাদশ মিনিটে বাঁয়ে আনহেল দি মারিয়াকে বল বাড়িয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন বার্সেলোনার ফরোয়ার্ড। কাটব্যাকে বল ফেরত পেয়ে প্রথম ছোঁয়াতেই বাঁ পায়ের টোকায় জালে পাঠান তিনি। উদযাপন করেননি তেমন, জাল থেকে বল কুড়িয়ে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিতে দিতে ছুটলেন মাঝমাঠে। কাজ তখন যে তার অনেক বাকি।

আট মিনিট পর আরেকটি দুর্দান্ত গোলে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন মেসি। দি মারিয়ার বাড়ানো বল বিপদমুক্ত করতে পারেনি প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়। মেসি বল পেয়ে ডি-বক্সে ঢুকে ছুটে আসা দুই ডিফেন্ডারের বাধা এড়িয়ে জোরালো শটে উপরের বাঁ-কোণ দিয়ে জালে পাঠান।

৩২তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট হয় আর্জেন্টিনার। মেসির বাড়ানো বলে দি মারিয়ার শট ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক।

বিরতির পর শুরুর দিকে বার বার আক্রমণে উঠে অতিথিদের চাপে রেখেছিল একুয়েডর। তবে ৬২তম মিনিটে হ্যাটট্রিক করে যেন সব অনিশ্চয়তার অবসান ঘটালেন মেসি।

বুক দিয়ে বল নামিয়েছিলেন প্রায় ৪০ গজ দূরে। বল নিয়ে এগিয়ে পায়ের জাদু আর ক্ষিপ্রতায় একজনকে ফাঁকি দিলেন। আরেকজন বাধা দিতে  আসতেই একটু এগিয়ে থাকা গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে বল পাঠালেন জালে। এবার সতীর্থদের সঙ্গে মেতে উঠলেন বাঁধনহারা উল্লাসে।

অনেকেই বলেছিল এটা হতে যাচ্ছে মেসির শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। আর্জেন্টিনা অধিনায়ক জবাবটা তোলা রেখেছিলেন যেন এই ম্যাচের জন্য।

নিজেদের ম্যাচটা জিততে পারলে অন্তত পঞ্চম স্থানে থেকে প্লে-অফ খেলাটা নিশ্চিত ছিল আর্জেন্টিনার। তবে মেসির দুর্দান্ত এই নৈপুণ্যের দিনে আর্জেন্টিনার পক্ষে গেল ব্রাজিল-চিলি আর কলম্বিয়া-পেরু ম্যাচের ফলও। তাই শেষ পর্যন্ত তৃতীয় হয়ে সরাসরিই বিশ্বকাপে গেল ১৯৭০ সালের আসরে শেষবার খেলতে না পারা আর্জেন্টিনা।

অন্য ম্যাচে গত দুই বারের কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন চিলির বিশ্বকাপ স্বপ্ন ভাঙতে জোড়া গোল করেন গাব্রিয়েল জেসুস। পাওলিনিয়োর গোলে এগিয়ে গিয়েছিল তিতের দল। সবকটি গোলই হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে।

শেষ রাউন্ডের আগেই বিশ্বকাপে ওঠা একরকম নিশ্চিত ছিল উরুগুয়ের। ঘরের মাঠে বলিভিয়ার বিপক্ষে ৪-২ গোলের জয়ে জোড়া গোল করেন লুইস সুয়ারেস।

আরেক ম্যাচে ভেনেজুয়েলার কাছে নিজেদের মাঠে ১-০ গোলে হেরে বিশ্বকাপে স্বপ্ন গুঁড়িয়ে গেছে প্যারাগুয়ের।

রাশিয়া বিশ্বকাপের দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বের পয়েন্ট তালিকা:

দেশ

ম্যাচ

জয়

ড্র

হার

গোল করা

গোল খাওয়া

গোল ব্যবধান

পয়েন্ট

ব্রাজিল

১৮

১২

৪১

১১

+৩০

৪১

উরুগুয়ে

১৮

৩২

২০

+১২

৩১

আর্জেন্টিনা

১৮

১৯

১৬

+৩

২৮

কলম্বিয়া

১৮

২১

১৯

+২

২৭

পেরু

১৮

২৭

২৬

+১

২৬

চিলি

১৮

২৬

২৭

-১

২৬

প্যারাগুয়ে

১৮

১৯

২৫

-৬

২৪

একুয়েডর

১৮

১০

২৬

২৯

-৩

২০

বলিভিয়া

১৮

১২

১৬

৩৮

−২২

১৪

ভেনেজুয়েলা

১৮

১০

১৯

৩৫

−১৬

১২