ইতিহাস গড়ে শেষ আটে বার্সা

ম্যাচ শেষের পরই টিভিতে ভেসে উঠল ব্যানারটি। বার্সেলোনার এক ভক্ত লিখে এনেছেন,  ‘ইয়েস উই ক্যান’। হ্যাঁ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইতিহাস গড়ে পিএসজিকে উড়িয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠেছে লুইস এনরিকের দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2017, 09:52 PM
Updated : 9 March 2017, 01:58 PM

প্রথম লেগে পিএসজির মাঠে ছিল ৪-০ গোলের হার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বের ইতিহাসে প্রথম লেগের চার গোলের ঘাটতি পুষিয়ে পরের রাউন্ডে ওঠার নজির ছিল না। বুধবার রাতে কাম্প নউতে স্বাগতিকরা অসাধ্য সাধন করল ৬-১ গোলের অসাধারণ এক জয়ে। শুরুটা লুইস সুয়ারেসের হাত ধরে, শেষের নায়ক সের্হিও রবের্ত। মাঝে ছিলেন মেসি-নেইমারারা। দুই লেগ মিলিয়ে ৬-৫ গোলের ব্যবধানে শেষ আটে লা লিগা চ্যাম্পিয়নরা।

সমর্থকদের সামনে শুরুতেই সুয়ারেসের গোলে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। বিরতির আগে আত্মঘাতী গোলে ব্যবধান বাড়ে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ব্যবধান আরও বাড়ান মেসি। কিছুক্ষণ পর এদিনসন কাভানির গোলে লা লিগা চ্যাম্পিয়নদের স্বপ্ন শেষ হয়ে যেতে বসেছিল। কিন্তু চরম নাটকীয়তার তখনও বাকি। ম্যাচের শেষ দিকে দুই গোল করে ও আর সের্হি রবের্তোকে দিয়ে ইতিহাস গড়া শেষ গোলটি করিয়ে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দেন ব্রাজিলের তারকা ফরোয়ার্ড নেইমার।

গত চার বছরে নক আউট পর্বে দুবার কাতালান ক্লাবটির কাছে হেরেই ইউরোপ সেরার মঞ্চ থেকে ছিটকে পড়ে পিএসজি। এবার চিত্রপট পাল্টে দেওয়ার দারুণ সুযোগ সৃষ্টি করেও পারলো না ফরাসি ক্লাবটি।

ঘরের মাঠে স্বপ্নের পথে বার্সেলোনার শুরুটা হয়েছিল একেবারে যথার্থ। তৃতীয় মিনিটে পিএসজির ডি-বক্সে ডিফেন্ডাররা বল বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হলে ছয় গজ বক্সের মধ্যে হেড করেন সুয়ারেস। পা বাড়িয়ে ফেরান মুনিয়ে। কিন্তু গোললাইন প্রযুক্তিতে দেখা যায়, বল আগেই গোললাইন পেরিয়ে গিয়েছিল।

একের পর এক আক্রমণ সামলে একাদশ মিনিটে প্রথম প্রতিপক্ষের সীমানায় বল নিয়ে ঢুকতে পারে পিএসজি। পরপর দুটি কর্নারও আদায় করে নেয় তারা; তবে গোলরক্ষক মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেনকে বড় কোনো পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি।

সপ্তদশ মিনিটে দূরপাল্লার শটে চেষ্টা করেন নেইমার; কিন্তু বল পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। এর আগে ও পরে দুটি ফ্রি-কিক পায় বার্সেলোনা; কিন্তু সফল হননি মেসি। ৩৫তম মিনিটে গোলরক্ষক বরাবর মেরে সুযোগ নষ্ট করেন সুয়ারেস।

৪০তম মিনিটে রক্ষণভাগের ভুলে দ্বিতীয় গোল হজম করে পিএসজি; বার্সেলোনার আশার পালে লাগে হাওয়া। বাঁ-দিক থেকে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা ব্যাকহিল করে গোলমুখে বল বাড়ান। ঠেকাতে গিয়ে নিজেদের জালেই ঠেলে দেন ফরাসি ডিফেন্ডার লেইভিন।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সফল স্পটকিকে দলকে স্বপ্ন ছোঁয়ার আরেকধাপ কাছে নিয়ে যান মেসি। লেইভিন নিজেদের ডি-বক্সে নেইমারকে ফেলে দিলে পেনাল্টিটি পায় বার্সেলোনা।

এবারের আসরে পাঁচবারের বর্ষসেরা তারকার এটি একাদশ গোল। ইউরোপ সেরার প্রতিযোগিতায় তার মোট গোল হলো ৯৪টি।

৫১তম মিনিটে ম্যাচে প্রথম উল্লেখযোগ্য সুযোগ পায় পিএসজি। কিন্তু কাছ থেকে এদিনসন কাভানির প্রচেষ্টা পোস্টে বাধা পেলে বেঁচে যায় বার্সেলোনা।

তবে এর ১০ মিনিট পরেই কাম্প নউকে স্তব্ধ করে দেন কাভানি। ডি-বক্সের মধ্যে ফাঁকায় বল পেয়ে জোরালো শটে টের স্টেগেনকে পরাস্ত করেন উরুগুয়ের এই স্ট্রাইকার। দুই লেগ মিলিয়ে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৫-৩। অতিথিরা মূল্যবান অ্যাওয়ে গোলও পেয়ে যাওয়ায় তখন বার্সার প্রয়োজন হয়ে পড়ে তিনটি গোল। তখন কে ভেবেছিল, এই সমীকরণও মিলিয়ে ফেলবে স্বাগতিকরা!

শেষ দিকে দুই মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করে আশা দেখান নেইমার। ৮৮তম মিনিটে বাঁ-দিক থেকে চমৎকার বাঁকানো ফ্রি-কিকে লক্ষভেদের পর সফল স্পটকিকে স্কোরলাইন ৫-৫ করেন ব্রাজিলের এই ফরোয়ার্ড। এ অবস্থায় ম্যাচ যায় পাঁচ মিনিটের যোগ করা সময়ে। অ্যাওয়ে গোলে এগিয়ে থেকে এই স্কোরলাইনেও শেষ আটের পথে ছিল পিএসজি।

তবে ম্যাচেরশেষ মুহূর্তে নেইমারের উঁচু করে বাড়ানো বল পা বাড়িয়ে জালে ঠেলে দেন বদলি হিসেবে নামা রবের্তো।কাম্পনউতে গড়া হয় ইতিহাসও।

দিনের অন্য ম্যাচে পর্তুগালের দল বেনফিকাকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠেছে জার্মানির বরুসিয়া ডর্টমুন্ড। দুই লেগ মিলিয়ে তাদের জয় ৪-১ গোলে। প্রথম লেগে ঘরের মাঠে ১-০ গোলে জিতেছিল বেনফিকা।