চ্যাম্পিয়নদের সামনে ‘আক্রমণাত্মক’ মোহামেডান

শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের ‘বি’ গ্রুপে মুখোমুখি হওয়ার আগে দুই রকম অবস্থানে স্বাগতিক দুই দল। প্রথম ম্যাচ হেরে টিকে থাকার লড়াইয়ে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। আর জয় দিয়ে শুরুতে সেরা চারে এক পা দিয়ে রেখেছে শিরোপাধারী চট্টগ্রাম আবাহনী। স্থানীয় ক্লাবটির বিপক্ষে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেই সেমি-ফাইনালের দৌড়ে টিকে থাকার ছক কষছে মোহামেডান।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Feb 2017, 12:18 PM
Updated : 21 Feb 2017, 12:18 PM

আগামী বুধবার চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে বাংলাদেশের দুই দলের লড়াই।

নেপালের মানাং মার্সিয়াংদির কাছে ২-০ গোলে হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করা মোহামেডান কোচ আব্দুল কাইয়ুম সেন্টু চাইছেন না পিছন ফিরে তাকাতে। ভাঙাচোরা দল আর প্রস্তুতির কমতি মেনে নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া তিনি।

“যতটুকু প্রস্তুতি নিয়ে আসতে পেরেছি, ততটুকু নিয়েই আগাচ্ছি। যেহেতু পেছনে ফেরার পথ নেই, সেহেতু চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে আমাদের সুযোগ কাজে লাগাতেই হবে এবং সে অপেক্ষায় আছি।”

“ওদের বিপক্ষে খেলাটা আমাদের একটু কঠিন হবে। ওরা আফগানিস্তানের দলটাকে ভালো খেলেই হারিয়েছি। তবে ওদেরকে সমীহ করেই বলছি, আমরাও জানবাজি রেখে খেলব।”

হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করা ঘরোয়া ফুটবলের আরেক ঐতিহব্যহী দল আবাহনী লিমিটেড দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার এফসি পচেয়নের সঙ্গে ড্র করে আশা বাঁচিয়ে রেখেছে। সেন্টুও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মতো টিকে থাকার স্বপ্ন দেখছেন।

“আমরা পয়েন্ট নেওয়ার জন্য খেলব। আক্রমণাত্মক খেলব। কেননা, এখন আর আমাদের হারানোর কিছু নেই। এ ম্যাচে পয়েন্ট পেলে শেষ ম্যাচ পর্যন্ত আশা বেঁচে থাকবে আমাদের।”

গত লিগের দিকে তাকালেও এ ম্যাচে পরিষ্কার ফেভারিট চট্টগ্রাম আবাহনী। মোহামেডানকে দুই লেগে যথাক্রমে ৪-২ ও ১-০ ব্যবধানে হারিয়েছিল তারা। চট্টগ্রাম আবাহনীর বর্তমান কোচ সাইফুল বারী টিটো লিগে ছিলেন আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের দায়িত্বে। আরামবাগকে নিয়ে মোহামেডানকে দুই লেগেই ড্রয়ে রুখে দিয়েছিলেন।

দলীয় শক্তির হিসেবেও এগিয়ে চট্টগ্রাম আবাহনী। বাবার মৃত্যুশোক কিছুটা কাটিয়ে দলের আক্রমণভাগে ফিরেছেন জাহিদ হোসেন। পুরোপুরি ফিটনেস ফিরে না পেলেও মামুনুল ইসলাম আছেন আগের চেয়ে ভালো অবস্থায়। মোহামেডানের এলিটা বেঞ্জামিন, কামারা, দাউদা সিসে, জাত্তা মুস্তাফার চেয়ে চট্টগ্রামের দলটির বিদেশি খেলোয়াড় মুফতা লাওয়াল, এনকোচা কিংসলে, অগাস্টিন ওয়ালসন, চিয়াগো তাইসন সিলভা প্রত্যাশার প্রতিদান দিচ্ছেন বেশি। টিটো তাই আক্রমণাত্মক খেলতে চাওয়া মোহামেডানকে ‘আমন্ত্রণই’ জানাচ্ছেন!

“শক্তিশালী দলটা যখন বল হারায়, তারা চিন্তা করে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করে বল কেড়ে নেবে নাকি নিজেদের অর্ধে খেলতে আসতে দিয়ে চাপ দেবে। তো মোহামেডান আগ্রাসী হলে বরং আমাদের জন্য সুবিধা হবে। কেননা, আমার দল প্রতিআক্রমণে ভালো। গত ম্যাচেও প্রথম দুইটা গোলই আমরা প্রতিআক্রমণ থেকে পেয়েছি। আমাদের খেলার কৌশল আসলে ঠিক করে দেবে মোহামেডানই। তবে আমরা গোল হজম করতে চাই না।”

“মোহামেডান প্রথম ম্যাচের কৌশলে আমাদের বিপক্ষে খেলবে কিনা জানি না, কিন্তু আমার কথা হচ্ছে মোহামেডান হোক, নেপালের মানাং মার্সিংয়াংদি হোক, প্রতিপক্ষকে আটকানোর জন্য আমাদের যা যা করা লাগবে, আমরা করব। আগের ম্যাচের প্রতিপক্ষকে বিশ্লেষণ করেছি, মোহামেডান ম্যাচের ভিডিও ফুটেজও আমরা পেয়েছি, এটা আরও বেশি বিশ্লেষণ করব। সেটা দেখে আমাদের করণীয় ঠিক করব।”

শাহিন আসমায়ের জালে জোড়া গোল করা অগাস্টিন ওয়ালসন ও এক গোল করা এনকোচা কিংসলের দিকে এ ম্যাচের গোলের জন্য তাকিয়ে থাকবে চট্টগ্রাম আবাহনী। শিরোপাধারী দলটির কোচকে আরও আত্মবিশ্বাসী করছে গত আসরে চার গোল করা জাহিদের ফেরা।

“যখনই আমরা শেষ কামাল ক্লাব কাপ নিয়ে কথা বলেছি, আমি ওয়ালসন ও কিংসলেকে চেয়েছিলাম। আমাদের হয়ত অন্যদের নেওয়ার লক্ষ্য ছিল কিন্তু আমি দেখেছি, ব্রাদার্সকে লিগে টেনে নিয়ে যাওয়ায় এই দুই জনের অনেক অবদান। এ কারণেই অন্তর্ভুক্ত করেছি। বিষয়টা তারাও জানে এবং আমাকেও বলেছে, চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে আরও ভালো করতে চায়।”

“জাহিদের কালকের ট্রেনিং দেখেছি, ওকে ভালো দেখাচ্ছে। সম্ভবত এই একটা পরিবর্তনই হবে। মামুনুলের রিকোভারি আসলে খেলতে খেলতে আসবে। গত ম্যাচে ৭৫ মিনিট পর্যন্ত খেলিয়েছি। ও আসলে এভাবে যত খেলবে, তত বেশি রিকোভার করবে।”

প্রথম ম্যাচে দলের ডিফেন্ডারদের মাঝে মাঝে খেই হারিয়ে ফেলা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত টিটো। তবে চট্টগ্রাম আবাহনী কোচ আত্মবিশ্বাসী ছোট ছোট ভুল শুধরে সেরাটা নিংড়ে দেবে শিষ্যরা।

“দলের রক্ষণভাগ, মাঝ মাঠ, আক্রমণভাগ এসব নিয়ে আমরা মোহামেডান ম্যাচের আগে কথা বলব। তবে দলের সবাই নিজেদের দায়িত্বটা জানে। এটা ঠিক যে চেনা প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলা সবসময় কঠিন। তবে মূল কথা হচ্ছে নির্দিষ্ট দিনে, কে কেমন খেলল, সেটা গুরুত্বপূর্ণ এবং এ ম্যাচে যারা কম ভুল করবে তারাই জিতবে।”