‘বাংলাদেশে এত ফাঁকা গ্যালারি কখনও দেখিনি’

খেলোয়াড় হিসেবে বাংলাদেশের ফুটবলের সোনালি সময়টা দেখেছেন। কোচ হিসেবে এখন মোহাম্মদ নাজিম দেখছেন দুঃসময়টা। বাংলাদেশ এখন ভুটানের কাছে হারে, মালদ্বীপের কাছে প্রীতি ম্যাচে হজম করে পাঁচ গোল। উল্টোরথে ছোটা বাংলাদেশের ফুটবল, হাঁটিহাঁটি পা পা করে মালদ্বীপের ফুটবলের এগিয়ে যাওয়া এমন অনেক বিষয় নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বললেন শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ খেলতে আসা টিসি স্পোর্টস ক্লাবের এই কোচ।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Feb 2017, 06:23 PM
Updated : 19 Feb 2017, 06:23 PM

এ নিয়ে তো বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে এলেন। আতিথেয়তা কেমন লাগছে?

মোহাম্মদ নাজিম: এখানকার মানুষের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে তারা খুব বন্ধুপ্রতিম। খুবই আন্তরিক। তাছাড়া আমাদের ওখানে বাংলাদেশের অনেক মানুষ কাজ করছে। বাংলাদেশ আর মালদ্বীপের মধ্যে একটা বন্ধন একারণেও আছে।

এখানকার ফুটবলের অতীতটা দেখেছেন। বর্তমানের সঙ্গে সেটা কতটুকু মিলছে?

মোহাম্মদ নাজিম: এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো এলাম। ২০০৩ সালে মালদ্বীপের হয়ে এসে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে হেরেছিলাম। ভ্যালেন্সিয়া ও অনূর্ধ্ব-১৪ দলের কোচ হিসেবেও এসেছি। আমি খুবই বিস্মিত হয়েছি এবার আবাহনীর বিপক্ষে আমাদের প্রথম ম্যাচে ফাঁকা গ্যালারি দেখে। কারণ, আমি কখনই এখানকার গ্যালারি ফাঁকা দেখিনি। এখানে আসার আগেও ছেলেদের বলেছিলাম, তোমাদের কিন্তু ভরা গ্যালারির সামনে খেলতে হবে। কিন্তু ম্যাচের পর ছেলেরা যখন জিজ্ঞেস করল, কোথায় দর্শক? আমাকে বলতে হলো-আমি ভুল ছিলাম! অথচ আমি ঢাকায় টিকেটের জন্য মানুষের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি! অবশ্য এখানে হতে পারে, আমাদের বিপক্ষে হোম টিম (চট্টগ্রাম আবাহনী) খেলেনি, তাই সমর্থকরা আসেনি।

আর কোনো কারণ? ফুটবলে এখন বাংলাদেশ এখন মালদ্বীপ, ভুটানের কাছে হারে…

মোহাম্মদ নাজিম:
আগে যখন এখানে এসেছিলাম, তখন আমি খুব কমই ক্রিকেট ব্যাট, ক্রিকেটের মাঠ দেখেছি। কিন্তু এখন দেখছি এখানকার প্রতিটি মাঠেই ক্রিকেট পিচ। হতে পারে, এটাও একটা কারণ।

আরেকটি বিষয় হতে পারে বাংলাদেশের জাতীয় দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স। মালদ্বীপের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটা আমি দেখেছি। সত্যি বলতে আমি আশা করিনি, মালদ্বীপ ৫-০ গোলে জিতবে। এটা খুব বেশি হয়ে গেছে!

ক্রিকেট সেই সাফল্য এনে দিচ্ছে বলে ক্রীড়াপ্রেমীরা সেদিকে ছুটছে, যেটা ফুটবল পারছে না।

মোহাম্মদ নাজিম: আমিও সেটাই বলতে চাইছি। দেখুন, আমরাও একসময় শ্রীলঙ্কার কাছে ৫-০, ৬-০ গোলে হারতাম। কিন্তু এখন আমরা উল্টো ওদের পাঁচ-ছয় গোল দেই। কারণ, ওরা ক্রিকেটের দিকে ঝুঁকেছে। আমার মনে হয় বাংলাদেশেও একই ব্যাপার ঘটেছে। ক্রিকেটের পাশাপাশি ভারতও ফুটবল নিয়ে খুব চেষ্টা করছে কিন্তু সেভাবে হচ্ছে না। ভারত, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলছে, তারা এই দিকটায় শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

কিন্তু শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ দিয়ে বাংলাদেশও দেখাচ্ছে, তারা ফুটবলের এই টুর্নামেন্টগুলো চালাতে পারে। এখন দরকার ক্লাব, ফেডারেশন আর ব্যক্তিগত পর্যায়ে ফুটবল নিয়ে সম্মিলিত উদ্যোগ। আমি মনে করি না, এখানকার ফুটবলারদের দক্ষতা নেই। আমি শুধু বলব, প্রিমিয়ার লিগে খেলার আগে তৃণমূল পর্যায় থেকে ফুটবলারদের ঠিকঠাক যত্ন নেওয়ার।

মালদ্বীপের ফুটবল কি এভাবেই একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে?

মোহাম্মদ নাজিম: হ্যাঁ। আমাদের ওখানে অনেক ফুটবলপ্রেমী সংগঠক আছেন, যারা ব্যক্তিগতভাবে বিনিয়োগ করছেন। আমাদের ফেডারেশনের নির্বাচন হয়েছে, তারাও সহযোগিতা করছে ক্লাবগুলোকে। প্রতিটি ক্লাবে অ্যাকাডেমি আছে। বয়সভিত্তিক দল আছে। মালদ্বীপে আনুমানিক এক হাজার বিভিন্ন ক্যাটাগরির লাইসেন্সধারী ফুটবল কোচও আছে। আমরা ইউরোপের দেশগুলো থেকে টেকনিক্যাল সাপোর্ট নিই। সেখানে আমাদের কোচরা যান কোর্স করতে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও আমাদের ফুটবলের উন্নয়নে সহযোগিতা করে।

টিসি স্পোর্টসের (ট্রাস্ট অ্যান্ড কেয়ার) নিয়ে বলুন, এর নামটাও একটু কেমন যেন…

মোহাম্মদ নাজিম:
(হাসি) আসলে এই ক্লাবটা কয়েকজন বন্ধু মিলে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যেখানে ক্লাবটা, যেখানেই তারা খেলতেন। সেসময় ওই মাঠে তেলের ট্যাঙ্ক রাখা হতো। আর নামটা তাদের বন্ধুত্বের প্রতি আস্থা, বিশ্বাস এসব বোঝাতে দেওয়া। যেমন, এখন অনেক পৃষ্ঠপোষক টিসি স্পোর্টসকে সাহায্য করতে হাত বাড়াচ্ছে কিন্তু ওই বন্ধুরা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারাই এটা তাদের মতো করে চালাবে।

টিসি স্পোর্টসের ফুটবলার সংগ্রহের প্রক্রিয়াটা কেমন?

মোহাম্মদ নাজিম: আমাদেরও অ্যাকাডেমি আছে। অনূর্ধ্ব-১২, ১৩ দল রয়েছে। আসলে আমাদের প্রতিটা ক্লাবেরই অ্যাকাডেমি আছে। ১৬-১৭টা অ্যাকাডেমি ক্লাব বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে চলছে। যেখানে আনুমানিক ৫ হাজার ফুটবলার রয়েছে। সেখান থেকে ফুটবলার উঠে আসছে। যারা ক্লাব ও মালদ্বীপকে সার্ভিস দিচ্ছে।

একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। বয়স তিরিশ হওয়ার আগে ফুটবল ছেড়ে কোচিংয়ে আসার কারণ?

মোহাম্মদ নাজিম: (হাসি) আসলে অন্য কোনো কারণ নেই। ওই সময় আমার মনে হয়েছিল, কোচ হওয়ার এটাই উপযুক্ত বয়স। এই টুর্নামেন্ট শেষ করে উয়েফার প্রো লাইসেন্স পাওয়ার চেষ্টা করব। ইউরোপের কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অভিজ্ঞতা নেওয়ার। মালদ্বীপের কোচ হওয়ার স্বপ্নও আছে।