শেষটায় কিছু পাওয়ার আশা

তাসকিন আহমেদ রান আপে ছুটছিলেন লাল বল হাতে। লাল কুকাবুরাতেই নেটে এবাদত হোসেনকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন মুশফিকুর রহিম। পাশের নেটে ব্যাট করছিলেন মুমিনুল হক। বাংলাদেশের অনুশীলন দেখে মনে হতে পারে, পরদিনই বুঝি টেস্ট ম্যাচ!

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনি মাউন্ট মঙ্গানুই থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Jan 2017, 02:00 PM
Updated : 7 Jan 2017, 03:46 PM

আদতে এটি মোটামুটি প্রতিদিনেরই চিত্র। বাংলাদেশের বিশাল বহরে যারা টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে নেই, মূল দলের অনুশীলনের আগে বা পরে তারা সেরে নেয় অনুশীলন। শনিবার টি-টোয়েন্টি দলের ছিল ঐচ্ছিক অনুশীলন। এসেছিলেন মাত্র ৪-৫ জন্য। তাদের ছাপিয়ে তাই বে ওভালের নেটে দেখা গেল লাল বলের দাপট।

সাদা পোশাক, লাল বলের ক্রিকেটের সময় এগিয়ে আসছে বটে। তবে তার আগে বাকি আরেকটি ম্যাচ। সিরিজের প্রেক্ষাপটে যে ম্যাচ শুধুই আনুষ্ঠানিকতার, নিউ জিল্যান্ড সিরিজ জিতে গেছে আগেই। তবে বাংলাদেশ দলের জন্য এই ম্যাচও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। জিতলে এড়ানো যাবে হোয়াইটওয়াশ, নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে তাদের বিপক্ষে আসবে প্রথম জয়। কিছু একটা অন্তত পাওয়া হবে রঙিন পোশাকের সিরিজে। টেস্টের আগে এটিই আত্মবিশ্বাসের কিছু রসদ নেওয়ার শেষ সুযোগ।

ম্যাচে আগের দিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তামিম ইকবালের কণ্ঠেও শোনা গেল সেই আকুতি, “শেষ ম্যাচেও অবশ্যই পাওয়ার আছে। এই কন্ডিশনে এসে যে কোনো ফরম্যাটেই একটা ম্যাচ জিতলে যে পরিমাণ আত্মবিশ্বাস মিলবে, সেটা অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না। চেষ্টা থাকবে সুযোগ কাজে লাগানোর।”

তামিমের কথায় এই সিরিজের বাস্তবতা যেমন ফুটে উঠছে, তেমনি জাগাচ্ছে প্রশ্নও। বাংলাদেশের ক্রিকেট কি তবে সেই ‘কিছু পাওয়ার’ দিন ফিরে এল?

একটা সময় ম্যাচের পর ম্যাচ কিছু একটা পাওয়ার আশাতেই খেলত বাংলাদেশ। খুঁজত সান্ত্বনার জয়। হতাশার সাগর সেচে চেষ্টা করত দু-একটি আশার নুড়ি-পাথর তুলে আনার। গত বছর দুয়েকে সেসব দিনকে পেছনে ফেলে দল সামনে এগিয়েছে বলেই মনে হচ্ছিলো। কিন্তু দু বছরেরও পর বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম সফর ফিরিয়ে দিল আগের সেই সময়ের বাস্তবতা।

বাংলাদেশ দল অবশ্য টানা পাঁচ ম্যাচ হারার সফরেও পেয়ে গেছে অনেক কিছু। নিউ জিল্যান্ডে এসে তাদের বিপক্ষে জয়ের সুযেগ সৃষ্টি করা গেছে, এটিও নাকি অনেক প্রাপ্তি! অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বারবার বলে চলেছেন, সাকিব আল হাসান বলেছেন। শনিবার তামিমও শোনালেন একই তৃপ্তির কথা। সুযোগ সৃষ্টি করাও নাকি কম নয়।

নিউ জিল্যান্ডে আগের কোনো সফরে বাংলাদেশ লড়াইও করতে পারেনি। সৃষ্টি করতে পারেনি তেমন কোনো সুযোগ। এই সবই সত্যি। কিন্তু দলের অধিনায়ক, সহ-অধিনায়ক ও সিনিয়র ক্রিকেটাররা যদি এতটুকুতেই তৃপ্তির ঢেকুর তোলে, তাহলে গোটা দলের মানসিকতার প্রতিফলনও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

দুই বছরেরও বেশি সময় পর বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলছে দেশের বাইরে। সেটিও নিউ জিল্যান্ডের মত কন্ডিশনে। কাজটা সহজ ছিল না এমনিতেও। কিন্তু বড় দল হয়ে উঠতে হলে তো কঠিন কাজগুলোই করতে হবে সহজে! বাংলাদেশ সেটি পারেনি, বরং প্রায় প্রতি ম্যাচেই হেরেছে সুযোগ নষ্ট করে। একটি-দুটি ম্যাচ হলে বলা যেত বিচ্ছিন্ন কিছু। কিন্তু প্রতি ম্যাচেই একই ভুল করার পর ব্যাখ্যাগুলো ভোতা শোনায়। সুযোগ তৈরি করা থেকেই প্রাপ্তি খুঁজে নেওয়া প্রচণ্ড বিস্ময় জাগায়। এতদিন পরও কেন অল্পতে তুষ্টি!

শেষ ম্যাচটা অন্তত এসব থেকে মুক্তি দিতে পারে, যদি দেখা মেলে অধরা জয়ের।

ম্যাচের আগে অবশ্য দলের অবস্থা ছ্ন্নছাড়া। মুস্তাফিজুর রহমানকে দিতে হচ্ছে বিশ্রাম, একাদশে ফিরছেন তাসকিন আহমেদ। কুঁচকিতে হঠাৎ টান লাগায় ম্যাচের আগের রাতেও খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন মাশরাফি। ব্যাটিং ধস তো প্রতি ম্যাচের সঙ্গী। বোলিং-ফিল্ডিংয়েও নেই আহামরি কিছুর অস্তিত্ব।

তবে তার পরও তো আশা নিয়েই নামতে হয় মাঠে। বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী যেমন টিম হোটেলে আড্ডায় বলছিলেন, “অভাবনীয় কিছু কিন্তু দল করেও ফেলতে পারে। কেউ যখন আশা করে না একটুও, কিভাবে কিভাবে যেন জিতে যায় দল।”

আশার বিপরীতে আশা বুঝি একেই বলে! অপেক্ষা এখন সেই আশা পূরণের। রঙিন পোশাকের ফ্যাকাশে সিরিজের শেষটা হোক না একটু বর্ণময়!