দলের ২০ জনের ১৫ জনই অনূর্ধ্ব-১৬ দলের। ৫ জন আবার জাতীয় দলে একেবারেই নতুন। ফাইনালে স্বপ্ন ভাঙলেও বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলের সুন্দর আগামীর সম্ভাবনাটা ডালপালা মেলেছে এই টুর্নামেন্টেই।
সাবিনার ঝলকে সবচেয়ে দাপুটে শুরু
পাকিস্তান না থাকায় ‘বি’ গ্রুপের দল হলো তিনটি। ভারত আফগানিস্তানকে হারিয়ে শুরুটা পেয়ে যাওয়ায় সেমি-ফাইনালে ওঠার চাপ প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশের কাঁধে চাপল। অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের নৈপুণ্যে সে চাপ বাংলাদেশ উড়িয়েও দিল দুর্দান্তভাবে।
আফগানিস্তানকে ৬-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে সাফে নিজেদের সেরা শুরুও পায় বাংলাদেশ। গত সাফে আফগানিস্তানকে ৬-১ গোলে হারানো ছিল প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের আগের সেরা শুরু। ২০১০ সালে শ্রীলঙ্কাকে ২-০ হারিয়ে এবং ২০১২ সালে ভারতের কাছে ৩-০ গোলে হেরে যাত্রা শুরু করেছিল মেয়েরা।
দাপুটে শুরু পাওয়া ম্যাচে ফরোয়ার্ড সাবিনা একাই করেন পাঁচ গোল।
ভারতকে প্রথম রুখে দেওয়া, প্রথমবার গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন
আফগানিস্তানকে হারিয়ে সেমি-ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। এরপর ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটি এল পরিসংখ্যানের চোখ রাঙানি নিয়ে। আগের ছয় বার মুখোমুখি হয়ে সবগুলোতে হার। সবশেষ এসএ গেমসের দেখায় হয়েছিল ৫-১ গোলের ভরাডুবি। কিন্তু এ ম্যাচে গোলরক্ষক সাবিনা আক্তার দুর্দান্তভাবে আগলে রাখলেন গোলপোস্ট। শিউলি-শামসুন্নাহার-নার্গিসরা সাবিনার সামনে গড়ে রাখলেন দুর্ভেদ্য রক্ষণ দেয়াল। গোলশূন্য ড্রয়ে প্রথমবার শুধু ভারতকে রুখে দেওয়া নয়, প্রথমবার গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমি-ফাইনালেও উঠার গল্পটাও লিখল বাংলাদেশ। এড়ানো গেল আগের তিন আসরেই ফাইনালে ওঠা নেপালকে।
স্বপ্নার হাত ধরে প্রথম স্বপ্নের ফাইনালে ওঠা
২০১০ ও ২০১৪ সালের পর এবার তৃতীয়বারের মতো সেমি-ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। ২০১২ সালে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায়। গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচ দেখে সবার মধ্যে বিশ্বাস জন্মাতে শুরু করে এবার শিরোপা মঞ্চে উঠতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সিরাত জাহান স্বপ্না তা সম্ভবও করলেন দারুণ এক হ্যাটট্রিক করে।
মালদ্বীপ কোচ আগের দিন জানিয়েছিলেন, সাবিনাকে কড়া পাহারায় রাখবেন; রাখলেনও। কিন্তু স্বপ্না তিন গোল করে দেওয়ার পর মালদ্বীপ ভেসে গেল। সাবিনাও করলেন জোড়া গোল। ৬-০ ব্যবধানের জয়ে অপর গোলটি নার্গিস খাতুনের।
ভারত ও নেপালের রেকর্ডে ভাগ
কোনো গোল হজম না করে ফাইনালে ওঠার রেকর্ড ছিল দুই দল ভারত (২০১০ ও ২০১২) ও নেপালের (২০১০ ও ২০১৪)। এবার সে রেকর্ডে ভাগ বসাল বাংলাদেশ; ফাইনালে ওঠার পথে ১২ গোল করলেও একটা গোলও হজম করতে হয়নি।
২০১৪ সালে ভারতের গোল না খেয়ে ফাইনালে ওঠা হয়নি বাংলাদেশের কারণে। সেবার অবশ্য সাফের শিরোপা জিতেছিল ভারত কিন্তু একমাত্র গোলটি তারা খেয়েছিল বাংলাদেশের কাছে। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে গোলটি করেছিলেন সাবিনা খাতুন।
সবচেয়ে বেশি গোল দেওয়া, সবচেয়ে কম খাওয়া
রক্ষণ, মাঝমাঠ, আক্রমণভাগ-তিন বিভাগেই এবার বাংলাদেশ ছিল আগের তিন আসরের তুলনায় সবচেয়ে জমাট। পরিসংখ্যানও দিচ্ছে সে প্রমাণ। এবার বাংলাদেশ দিয়েছে সবচেয়ে বেশি (১৩টি) গোল, খেয়েছে মাত্র ৩টি এবং তিনটিই স্বপ্ন গুঁড়িয়ে যাওয়া ফাইনালে।
স্বপ্ন ভাঙা ফাইনালে লড়াইয়ের তৃপ্তি
শিরোপা হারানো সবসময়ই কষ্টের; কিন্তু হারের মধ্যে সুন্দর আগামীর বীজ বোনা দেখাটাও তৃপ্তির। গ্রুপ পর্বে ভারতের বিপক্ষে রক্ষণাত্মক কৌশলে ছিল বাংলাদেশ। ফাইনালে ছিল রক্ষণাত্মক আর আক্রমণাত্মক কৌশলের মিশেল। শুরুতে পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে তাই স্বপ্নার গোলে স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছিল বাংলাদেশ। প্রতিযোগিতায় ৭ গোল করা বাংলাদেশ অধিনায়ক সাবিনা ছিলেন মাঠ জুড়ে; কখনও স্বপ্না-কৃষ্ণার বাড়ানো বল ধরে ছুটেছেন প্রতিপক্ষের গোলমুখে, কখনও এক ছুটে রক্ষণে এসে শিউলি-নার্গিসদের সহযোগিতা করেছেন।
শুধু শুরুতে শিউলি-শামসুন্নাহার আর দ্বিতীয়ার্ধে নার্গিস ও গোলরক্ষক সাবিনার ভুলের চড়া মাশুল দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। কোচ ছোটনের ভাষায় যেগুলো ‘ছোটখাট ভুল’।
ফাইনালের ভুলটুকু বাদ দিলে টুর্নামেন্টজুড়ে কেমন খেলেছে বাংলাদেশ? উত্তরটা দিয়ে দেওয়া যায় ভারত কোচ সাজিদ ইউসুফের ম্যাচ শেষের প্রতিক্রিয়া দিয়ে- বাংলাদেশ চমৎকার খেলেছে। আগের চেয়ে উন্নতি করেছে অনেক।
সত্যিই বাংলাদেশের মেয়েদের সুন্দর আগামীর পূর্বাভাস দিয়ে গেল মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ-২০১৬।