আরেকটি প্রথমের অপেক্ষায় বাংলাদেশের মেয়েরা

স্বপ্নের সিঁড়িগুলো কী তরতরিয়েই না পেরুচ্ছে বাংলাদেশের মেয়েরা। লিখে চলেছে একের পর এক সাফল্যের গল্প! মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে আরেকটি প্রথমের স্বপ্ন নিয়ে শক্তিশালী ভারতের মুখোমুখি বাংলাদেশ। তবে সাবিনা-কৃষ্ণারা প্রত্যয়ী স্বপ্নের ফাইনালের ক্যানভাসে সাফল্যের রঙতুলির শেষ আঁচড়টা দিতে।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরশিলিগুড়ি থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Jan 2017, 12:25 PM
Updated : 3 Jan 2017, 02:07 PM

ভারতের শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে বুধবার বাংলাদেশ সময় সাড়ে ৬টায় মুখোমুখি হবে দুই দল। গত তিন আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে প্রথমবারের মতো গোলশূন্য ড্রয়ে রুখে দেওয়ার আত্মবিশ্বাস বাংলাদেশকে জোগাচ্ছে জয়ের অনুপ্রেরণা।

আসলে অনুপ্রেরণা, আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই বাংলাদেশ দলে। চোট দুর্ভাবনা নেই কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের। বেঞ্চের খেলোয়াড়দের সামর্থ্যের ওপর পুরো আস্থা আছে তার। স্বপ্ন পূরণের শেষ ধাপে এসে খালি হাতে ফিরতে চান না তিনি।

“লক্ষ্য অবশ্যই জেতা। তবে এর আগেও একাধিকবার বলেছি, ভারত শক্তিশালী দল। এখনও একই কথা বলছি। তবে ফাইনালে যেহেতু উঠেছি, সেহেতু বড় স্বপ্নই দেখছি।”

“সেমি-ফাইনাল খেলার লক্ষ্য নিয়ে আমরা এসেছিলাম। সেটা পূরণ করে ফাইনালে উঠেছি। ফাইনাল নিয়ে কোনো চাপ নিচ্ছি না। আমার আশা, মেয়েরা তাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করবে। দেখা যাক তারপর কী হয়।”

গ্রুপ পর্বে রক্ষণাত্মক কৌশলে খেলে ভারতের শক্তিশালী আক্রমণভাগকে ঠেকিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টে প্রতিপক্ষের জালে ১২ গোল করেছেন সাবিনারা; হজম করেননি একটিও। অন্যদিকে ভারত ৮ গোল দিয়ে খেয়েছে ২টি। কিন্তু ভারত কোচ সাজিদ ইউসুফ দার ফাইনালে নিজের দলকে ‘ফেভারটি’ ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছেন এবারের লড়াইটা ভিন্নরকমই হবে।

“আমরা ফেভারিট। গ্রুপ পর্বের ড্র হওয়া ম্যাচটি এখন আর আমাদের ভাবার বিষয় নয়। আমরা শিরোপা জিততে চাই। গ্রুপের ওই ড্র আমাদের জন্য কোনো চাপের বিষয় হবে না। কেননা, ওই ম্যাচে যে ফলই আমরা পেতাম, সেমি-ফাইনালে খেলতাম।”

“এখন আমরা ফাইনালে। তো ফাইনালের পরিকল্পনা ফাইনালের মতোই হবে। যখন দুইটা দল ফাইনালে ওঠে তখন তারা নিজেদের মতো করে পরিকল্পনা সাজায়। কখনও পরিকল্পনা কাজ করে, কখনও করে না। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে তাদের পরিকল্পনা কাজ করেছিল। ওই ম্যাচ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। তো আমরা ওই ম্যাচের পুনরাবৃত্তি হতে দেব না। আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।”

গ্রুপের ওই ম্যাচে ভারতের বালা দেবি, সাসমিতা মালিক ও কমলা দেবিকে নিয়ে সাজানো শক্তিশালী আক্রমণভাগকে আটকে রেখেছিল শিউলি-নার্গিস-শামসুন্নাহারে সাজানো রক্ষণভাগ। সাবিনা-কৃষ্ণা-স্বপ্নায় গড়া আক্রমণভাগ গোলও এনে দিচ্ছেন নিয়মিত। সাবিনা করেছেন সাত গোল, স্বপ্নার গোল চারটা। সাবিনা আক্তারও বাংলাদেশের পোস্টের নিচে দুর্ভেদ্য। প্রতিপক্ষকে তাই সমীহ করতে ভোলেননি ভারত কোচ।

“টুর্নামেন্টে অবশ্যই বাংলাদেশ ভালো করছে এবং আমি আগেও বলেছি, তাদেরকে কোনোভাবেই হালকাভাবে নিচ্ছি না। তারা মানসম্পন্ন ফুটবল খেলে ফাইনালে এসেছে।”

“অবশ্য ওদের দলেও ভালো কিছু খেলোয়াড় আছে। ওদের নাম্বার নাইন (স্বপ্না) ও টেনের (সাবিনা) বোঝাপড়াটা খুব ভালো। তবে আমরা শুধু এই দুই জনকে নিয়ে নয়, পুরো দলকে নিয়ে ভাবছি।”

বাংলাদেশে কোচ গ্রুপ পর্বের ড্র থেকে আত্মবিশ্বাস পেয়ে ভারত বধে হয়ে উঠছেন আরও সাহসী। ফাইনালের বৈতরণী সাবিনা-কৃষ্ণা-মাইনুতে পার হতে আশাবাদী তিনি।

“গ্রুপ পর্বের ম্যাচে আমরা ওদের আটকে রাখতে পেরেছিলাম। সেটা অবশ্যই ফাইনালে আমাদের আরও ভালো করার অনুপ্রেরণা দেবে।”

“টুর্নামেন্টে আসার আগে দলের রক্ষণভাগ নিয়ে আমার একটু দুঃশ্চিন্তা ছিল। কিন্তু শিউলি-শামসুন্নাহার-নার্গিসরা যেভাবে গত ম্যাচগুলো খেলেছে, তাতে আমার দুঃশ্চিন্তা কেটে গেছে। আক্রমণভাগ নিয়ে আমি খুশি। অভিজ্ঞতার ঘাটতির কারণে আমাদের মাঝমাঠের খেলাটা যতটা চেয়েছি, ততটা হচ্ছে না। তবে আশা করি, ফাইনালে সেটা কেটে যাবে।”

টুর্নামেন্টে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর প্রথমবারের মতো ফাইনালেও উঠেছে বাংলাদেশ। বাকি আর আরেকটি প্রথমের, সাফের শিরোপার!