অবশেষে ফুটবলার তৈরিতে জোর, বাস্তবসম্মত লক্ষ্য

অবশেষে তরুণ ফুটবলার তৈরিতে গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। নতুন পরিকল্পনায় তাই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ক্লাবকে সঙ্গে নিয়ে তরুণ ফুটবলার তুলে আনার বিষয়টি। আর ‘অসম্ভব’ লক্ষ্য থেকে সরে এসে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ ও এশিয়ান পর্যায়ে ভালো অবস্থানে থাকার বাস্তবসম্মত চিন্তার প্রতিফলনও রয়েছে চার বছরের পরিকল্পনায়।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Dec 2016, 01:48 PM
Updated : 10 Dec 2016, 05:24 PM

আগামী চার বছরের পরিকল্পনা ১০ ডিসেম্বর জানানোর কথা আগেই বলেছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে চূড়ান্ত পরিকল্পনা দিলেন।

২০০৮ সালের পর থেকে এ নিয়ে তিন মেয়াদে ঘরোয়া ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির প্রধানের দায়িত্বে সালাউদ্দিন। এ পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগ নিয়মিত মাঠে রাখতে পারলেও তার আমলে জাতীয় দল এখন পর্যন্ত প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি। টানা তিন বার সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় বাংলাদেশ। জাতীয় দলের ব্যর্থতার পেছনে মানসম্পন্ন খেলোয়াড় উঠে না আসাটা অন্যতম কারণ বলে মনে করেন অনেকে। নতুন পরিকল্পনায় অবশেষে বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকে ফুটবলার বের করে আনার গুরুত্ব বুঝতে পারছেন বাফুফে সভাপতিও।

“অনূর্ধ্ব-১৬ দলের এই খেলোয়াড়দেরই বয়স চার বছর পরে ২০ হবে। তখন তারা দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। আমিও চার বছর পর ফুটবলকে ভালো জায়গায় দেখার আশা করি। সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে অন্তত ফাইনাল খেলা আর এশিয়া কাপে ভালো অবস্থানে থাকা, এই আশা।”

জানুয়ারি থেকে চার বছর মেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নামবে বাফুফে। ১০ জানুয়ারি জাতীয় দলের ক্যাম্প হওয়ার কথা রয়েছে। এপ্রিলে শুরু হবে একই সঙ্গে প্রিমিয়ার লিগ ও চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের দলবদল। ফেডারেশন কাপ, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ, শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ-এই টুর্নামেন্টগুলোর পাশাপাশি বয়সভিত্তিক খেলাগুলো ‘নির্ধারিত’ সময়ে আয়োজন করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বাফুফে। এছাড়া অনূর্ধ্ব-১৮ জেলা ভিত্তিক লিগ, ছেলে (৩টি) ও মেয়েদের (২টি) বয়সভিত্তিক দলের আবাসিক ক্যাম্প প্রাধান্য পাচ্ছে বাফুফের কাছে।

“আমরা যদি অনূর্ধ্ব-১৬, ১৭, ১৮ এই তিন বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকে ৩০ জন করে ফুটবলারও নেই, তাহলে আমরা মাত্র ৯০ জন খেলোয়াড় পাব। কিন্তু ক্লাবগুলো ৯০ জন করে নিলে সেটা হবে দুই হাজারের মতো। ডেভেলপমেন্ট কার্যক্রমে আমরা ক্লাবগুলোর সঙ্গে এ দিকগুলো নিয়ে কাজ করব।”

“ফেডারেশনের কর্মকাণ্ডকে আমরা এবার দুই ভাগে ভাগ করেছি। একটা বিভাগ প্রিমিয়ার লিগ থেকে শুরু করে যেসব কাজ সাধারণত একটা ফেডারেশন করে, সেটা করবে। আমাদের ক্লাবগুলো অনেক কিছু করতে পারে না, আমি আসলে তাদের দোষ দিচ্ছি না। আমাদের অন্য একটা বিভাগ তাদের সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নমূলক কাজগুলো করবে।”

সাবেক এই ফুটবলারের বিশ্বাস পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে প্রত্যাশিত জায়গায় চার বছরে পৌঁছুবে দেশের ফুটবল।

“আপনারা জিজ্ঞেস করতে পারেন, এখানে নতুন কি? আসলে ফুটবলে নতুন করে কিছু করার নেই। সব কিছু প্রপারলি করতে পারলেই হয়।”

চূড়ান্ত পরিকল্পনায় চার বছর মেয়াদের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের জন্য করণীয়, ঘরোয়া টুর্নামেন্টের সূচি সবই আছে। অতীতেও এমন পরিকল্পনা হয়েছে কিন্তু কখনও অর্থাভাবে, কখনও ক্লাবগুলোর অনীহা, কখনও ফেডারেশনের ভুলে সাফল্যের মুখ দেখেনি। তবে এবার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সালাউদ্দিন প্রয়োজনে কঠোর হতেও বদ্ধপরিকর।

“নির্বাচনের পর ওয়াদা করেছিলাম চার বছরের বর্ষপঞ্জি, নির্দিষ্ট পরিকল্পনা দিব। আজ আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি, সে পরিকল্পনা দিতে। ফুটবলের সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করে এটা চূড়ান্ত করা হয়েছে। কেউ যদি আপনাদের কাছে পরে বিষয়টি অস্বীকার করে, তাহলে সে মিথ্যাবাদী। তিন-চারটা মিটিং করার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

“(অনেক ক্ষেত্রে ক্লাবগুলো টুর্নামেন্ট খেলার অনীহা) কেউ যদি টুর্নামেন্টে খেলতে চায়, খেলবে। খেলতে না চাইলে খেলবে না। বাফুফের নিয়মের বাইরে আর বের হবে না। একই কথা স্পন্সরদের বেলায়ও। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাফুফে ঠিকঠাক নিয়ম মেনে চলবে।”

অর্থের সদ্ব্যবহার ও বাফুফের আর্থিক দিকগুলো আরও স্বচ্ছ করার প্রতিও গুরুত্ব দিচ্ছেন সভাপতি, “পরবর্তী ১৫-২০ দিনের মধ্যে আমরা ফান্ড নিয়ে বিস্তারিত আপনাদের জানাব। কোথা থেকে ফান্ড আসছে, কোন খাতে কোন ফান্ড থেকে অর্থ কাজে লাগানো হবে, সেটাও আপনাদের বিস্তারিত জানানো হবে।”

“আসলে ফান্ড থাকলে টুর্নামেন্ট হয়, টুর্নামেন্ট হলে উন্নতি হয়। টাকা না থাকলে আসলে কোনো প্ল্যানই কাজে আসে না। আমি অনেক কিছু পারিনি, কেন না আমার ফান্ড ছিল না। কিন্তু এই প্ল্যানের পেছনে ফাইন্যান্সের ব্যাকআপ আছে। তারপরও যদি না পারি, তখন প্রশ্ন করবেন, আমি উত্তর দিব।”