ভালো সময়টা ধরে রাখাই চ্যালেঞ্জ: জিমি

টানা তিনবার এএইচএফ কাপ হকির শিরোপা জিতল বাংলাদেশ; অধিনায়ক হিসেবে রাসেল মাহমুদ জিমি জিতলেন দু’বার। যে কারোর চেয়ে তার উচ্ছ্বাস স্বাভাবিকভাবে বেশি। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় তারকা এই খেলোয়াড় জানালেন ভালো সময়টা ধরে রেখে সামনে আরও উন্নতির প্রত্যয়ের কথা।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Nov 2016, 05:34 PM
Updated : 29 Nov 2016, 05:34 PM

প্রশ্ন: বাংলাদেশ টানা তৃতীয়বার, অধিনায়ক হিসেবে আপনি টানা দ্বিতীয়বার এএইচএফ কাপ হকির শিরোপা জিতলেন। ভালোলাগাটা নিশ্চয় বাঁধ ভাঙছে?

রাসেল মাহমুদ জিমি: এটা খুবই আনন্দের ব্যাপার। এ আনন্দ আসলে বলে বোঝানো যাবে না। মুহূর্তগুলো যদি ভিডিওতে ধরে রাখা যেত...

২০১২ ও ২০১৬ সালের খেলার ধরণে কি পরিবর্তন দেখেছেন আপনি? খেলার স্টাইল কিংবা দলের পরিবেশ, সতীর্থদের চাওয়া, প্রস্তুতির মতো বিষয়গুলো?

জিমি: আগেরবারের চেয়ে এবার আমাদের ওপর অন্যরকম চাপ ছিল। চাপটা আসলে আমাদের হকিটা যেভাবে এগুচ্ছে, আমরা সেটা ধরে রাখতে পারব কিনা। এই টুর্নামেন্ট ছাড়াও আগামীতে আমাদের রাউন্ড টু-এর খেলা আছে। এএইচএফ কাপের ওপর আসলে আমাদের অনেক কিছু নির্ভর করছিল। সাফল্য তাই ভীষণ দরকার ছিল। এ কারণে সবার মধ্যে আলাদা একটা অনুভূতি, অতিরিক্ত দায়িত্ববোধ কাজ করেছে। সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিল। বোঝাপড়াটাও ভালো ছিল। এ কারণে সফল্য এসেছে।

হংকংয়ের টুর্নামেন্টের আগে আপনাদের খেলার কৌশল নিয়ে কথা হচ্ছিল। ইউরোপিয়ান স্টাইলের কথা উঠে আসছিল সব আলোচনায়...

জিমি: আমাদের আগের কৌশল ছিল স্লো পাসিং, ডজ দেওয়া এবং রক্ষণাত্মক খেলা; কিন্তু এখন সেটা নেই। আমরা সেভ পাসে খেলি, মানে যতক্ষণ আমাদের কাছে বল আছে, তা যেন প্রতিপক্ষ কেড়ে নিতে না পারে এবং খেলাটা আমরাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। খেলা বিল্ডআপের ক্ষেত্রেও হার্ড পাস, সেভ পাসিং, গতি এগুলো ইউরোপিয়ান স্টাইলের মতো ঠিক ছিল বলে অন্য দলগুলোর সঙ্গে আমাদের পারফরম্যান্সে অনেক ব্যবধান ছিল।

হংকং ও চাইনিজ-তাইপের মতো দলগুলোকে বড় ব্যবধানে হারানো যায়নি কি কৌশল বদলের কারণে?

জিমি: সেটা কিছুটা বলতে পারেন। হয়ত আমরা কিছু গোল মিস করেছি কিন্তু নতুন স্টাইল থেকে বেরিয়ে আসতে চাইনি। আমাদের খেলা ছিল পরিষ্কার এবং ভালো।

কোচও কি মনে করেন, আপনারা ইউরোপিয়ান স্টাইল রপ্ত করতে পেরেছেন?

জিমি: হ্যাঁ, অবশ্যই। হংকংয়ে যাওয়ার আগে আমি বলেছিলাম-একটা দল হয়ে খেলতে চাই। শুধু চ্যাম্পিয়ন হওয়া নয়, সবাই (প্রতিপক্ষরাও) যেন বোঝে আমরা ভালো হকি শিখতে পেরেছি এবং সেটাই হয়েছে। কোচও সন্তুষ্ট; তিনি বলেছেন, আমরা তার পরিকল্পনার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ খেলতে পেরেছি। এখন বাকিটা শিখতে হবে।

শুরুর ম্যাচে আপনি এবং মামুনুর রহমান চয়নের মতো অভিজ্ঞরা দলকে টানলেন। এরপর আপনাদের সঙ্গে যোগ হলে তরুণরা। দলে যে ভারসাম্য দেখতে চেয়েছিলেন, সেটা কি এসেছে?

জিমি:
হ্যাঁ। অধিনায়ক হিসেবে দলে এই সমন্বয় দেখাটা আসলেই দারুণ ব্যাপার। আগেও আপনাকে বলেছিলাম, বেঞ্চের খেলোয়াড় নিয়ে আমাদের যে সমস্যা অতীতে ছিল, এখন নেই। এবার যে ১৮ জন দলে ছিল, আমি মনে করি, সবাই সেরা একাদশে খেলার যোগ্য। এ কারণেও সমন্বয় করা সহজ হয়েছে।

প্রশ্ন: সর্বোচ্চ ৯ গোল করেছেন আশরাফুল ইসলাম। এই তরুণের কাছে এতটা চাওয়া কি ছিল আপনার?

জিমি: আশরাফুল অনেক ভালো খেলোয়াড়। সে আসলে অল্প দিনে অনেক কিছু আয়ত্ত করতে পেরেছে। বিশেষ করে পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করা। যদি সে আরও ভালো ভালো টুর্নামেন্ট খেলতে পারে, তাহলে আমার বিশ্বাস, অনেক বড় মাপের খেলোয়াড় হবে। ড্র্যাগ ফ্লিক শটের ক্ষেত্রে সে বাংলাদেশের সেরা।

বাকি দুই পেনাল্টি কর্নার স্পেশালিস্ট চয়ন ও খোরশেদুর রহমান…

জিমি: চয়ন-আশরাফুল-খোরশেদ মিলেই কিন্তু পেনাল্টি কর্নার (পিসি) থেকে খুব ভালো করেছে। টুর্নামেন্টে আমরা শতকরা ৬০ ভাগ পিসি থেকে গোল পেয়েছি। এটা কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক বড় একটা ব্যাপার।

অধিনায়ক হিসেবে তো মুঠোভরে পেলেন। খেলোয়াড় হিসেবে নিজের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন যদি করতে বলি…

জিমি: দলীয় লক্ষ্য সবার আগে; সেটা পূরণ হয়েছে। ব্যক্তিগত চাওয়া পূরণ নিয়ে বলব-সেটাও পূরণ হয়েছে। নিজের শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যেহেতু কোচের কোনো অভিযোগ ছিল না, সেহেতু আমি বলতেই পারি-ভালো খেলেছি।

সামনের এশিয়া কাপ নিয়ে লক্ষ্যটা বলুন...

জিমি: এশিয়া কাপ যেহেতু আমাদের এখানে খেলা (যদিও সেটা চূড়ান্ত হয়নি), সেহেতু আমাদের যেন পরবর্তীতে বাছাইয়ে খেলতে না হয়, সেটা টার্গেট করে এগুতে হবে। অবশ্যই আমাদের সেরা ছয় দলের মধ্যে থাকার চেষ্টা করতে হবে, তাহলে পরের আসরে আমাদের আর বাছাইপর্ব খেলা লাগবে না।

প্রশ্ন: ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবনা...

জিমি: বিশ্বকাপের হিসেব অবশ্য আলাদা। আমরা হকি ওয়ার্ল্ড লিগের রাউন্ড থ্রি পর্যন্ত খেলতে পারি। তবে, এবার যেহেতু বিশ্বকাপে দল বেড়েছে, ১৬ দল হয়েছে, সেহেতু আমাদেরও বড় সুযোগ আছে।

প্রশ্ন: অনেক চাওয়া, স্বপ্ন নিয়ে এগুচ্ছেন। সামনের পথটা মসৃণ পেতে কি কি চাওয়া আপনার?

জিমি: দেখুন যখন আমরা ২০০৮ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, তখন এই দলগুলোর বিপক্ষে খেলেছি। এরপর ২০১২ সালের এদের সঙ্গে খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। কিন্তু আমাদের হকি একবার ওপরের দিকে ওঠে এবং ওখানেই থেমে যায়। কিন্তু আর সব দল দিনকে দিন উন্নতি করে। তো এখন আমরা যে অবস্থায় আছি, আমাদের সুযোগ আছে পরিকল্পনা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার।

আর একটা বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ, যখন আমাদের ভালো দিন যায়, তখনই সমস্যার শুরু হয়। যখন জাতীয় দল বাইরে ভালো করে, আমি বলতে চাচ্ছি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাতীয় দল ভালো করলে সেটাকেই ভালো পারফরম্যান্স বলে এবং তখন সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এ পক্ষ, ও পক্ষ এসব করলে হবে না। এটা কিন্তু আমি বারবার বলে আসছি। তো এখন ফেডারেশনের সব কিছু ভালোভাবে চলছে, যদি এভাবে চলে, সবার দোয়া থাকে তাহলে আমার বিশ্বাস, ভালো কিছু সম্ভব।