বাংলাদেশকে হকির বিশ্বকাপে নিয়ে যেতে চাই: আশরাফুল

শুরুটা একেবারেই বিবর্ণ; প্রথম ম্যাচে গোলহীন। চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে গোলের খাতায় উঠল নাম; একটু একটু করে নিজেকে মেলে ধরা শুরু। পুল ‘এ’র শেষ ম্যাচে জ্বলে উঠলেন; করলেন হ্যাটট্রিকসহ পাঁচ গোল। সব মিলিয়ে ৯ গোল নিয়ে বাংলাদেশের আশরাফুল ইসলাম হলেন টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2016, 05:16 PM
Updated : 28 Nov 2016, 05:16 PM

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার উচ্ছ্বাসের কথা জানালেন এই ডিফেন্ডার।

গ্রুপের পর খেলা দুই ম্যাচে আরও তিন গোল করেন আশরাফুল; এর মধ্যে একটি শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে বাংলাদেশের টানা তৃতীয়বারের মতো এএইচএফ কাপ জয়ের ম্যাচে। প্রথম দল হিসেবে টানা তিনবার এ শিরোপা জয়ের কীর্তি গড়ে হংকং থেকে মালয়েশিয়া হয়ে ফিরছে বাংলাদেশ দল। সোমবার রাতে মালয়েশিয়া বিমানবন্দরে কথা বললেন আশরাফুল। ১৮ বছর বয়সী এই তরুণ পিছু ফিরে দেখা হংকংয়ের আসর নিয়ে জানালেন, সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার ভাবনা তার মাথাতেই ছিল না; ছিলেন শুধু নিজেকে মেলে ধরার সুযোগের অপেক্ষায়!

নতুন পেনাল্টি কর্নার স্পেশালিস্ট

গত বেশ কয়েক বছর ধরে জাতীয় দলকে পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল এনে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব বয়ে বেড়াচ্ছেন মামুনুর রহমান চয়ন। মাঝেমধ্যে খোরশেদুর রহমান কাজটি করেছেন। আশরাফুলের আগমণী বার্তা বলছে চয়নের উত্তরসূরি পেয়ে গেছে বাংলাদেশ। হংকংয়ে ৯ গোলের আটটিই যে পেনাল্টি কর্নার থেকে করেছেন তিনি; অন্যটি পেনাল্টি থেকে!

সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করতেই আশরাফুল পূর্বসূরি চয়নকে টেনে আনলেন সামনে, “হংকং যাওয়ার আগে এসব কোনো চিন্তাই ছিল না। কেননা, চয়ন ভাই ছিল। আমার লক্ষ্য ছিল, সুযোগ পাওয়ার। ভেবেছিলাম, সুযোগ পেলে কিছু একটা করে দেখাব।”

“যখন সর্বোচ্চ স্কোরার হলাম তখন জিমি-চয়নভাই সবাই আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। আসলে আমি মনে করি, তাদের মতো সতীর্থ পাওয়ার কারণেই এটা আমি পেরেছি। কোচ অনেক সুযোগ দিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাও ছিল। সব মিলিয়ে পেরেছি। এ আনন্দ আসলে বলে বোঝাতে পারব না; বলতে পারেন পাহাড়ের সমান আনন্দ!”

শ্রমে-ঘামে পেতে চান সবকিছু

বয়স মাত্র ১৮ বছর কিন্তু অনেক তরুণের চেয়ে আশরাফুলের জীবন দর্শণটা ভিন্ন। সবকিছু পরিশ্রম করে, ঘামের বিনিময়ে পেতে চান। এমনকি পাওয়া, না-পাওয়ার হিসেব কষে সামনের আগামীর স্বপ্নটাকে কঠিন করে তোলার মানে দেখেন না। দেশে ফিরে যেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে চাইলেন, তাতেও পাওয়া গেলো ‘পরিণত ও পেশাদার’ আশরাফুলকে।

“জানি, আমার ওপর সবার প্রত্যাশা বাড়ল। কিন্তু আমি শুধু নিজের অনুশীলন ঠিক রাখব। আগে যেখানে দুই’শটা ড্র্যাগ ফ্লিক করতাম, এখন সেটা পাঁচ’শটা করে নেব। আমাকে আরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে; অনুশীলন করতে হবে। তাহলে পারফরম্যান্সও ভালো হবে এবং দেশকেও অনেক বেশি দিতে পারব।”।”

‘হকিতে আসার ইচ্ছাই ছিল না’

হকিস্টিকের বদলে আশরাফুলের হাতে ক্রিকেটের ব্যাট থাকলে, গোলের বদলে রানের ফোয়ারা ছুটলে কিন্তু অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। মেরিনার ইয়াংসের হয়ে খেলা এই ডিফেন্ডার যে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে পা রেখেছিলেন ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে!

“প্রথমে ক্রিকেট খেলতে বিকেএসপিতে গিয়েছিলাম। জাকির হোসেন রাজু স্যার আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন; ভর্তি করিয়েছিলেন। কিন্তু হকি খেলা নিয়ে আমি খুশি ছিলাম না। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় চলে এলাম। বুঝিয়ে-সুঝিয়ে উনি আবার আমাকে নিয়ে গেলেন। আমিও নতুন শুরু করলাম।”

সেই শুরুটা শেষ হওয়ার এখনও অনেক বাকি। আশরাফুল ততদিনে কোথায় পৌঁছুবেন, সে উত্তর আপাতত সময়ের হাতে তোলা। এএইচএফ কাপ জিতে এশিয়া কাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এশিয়া কাপ আবার বিশ্বকাপের বাছাই। আশরাফুলও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।

“বাংলাদেশকে হকির বিশ্বকাপে নিয়ে যেতে চাই। দেশের মুখটা আরও উজ্জ্বল করতে চাই, তা আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও।”