ফিফা কর্মকর্তার কাছে বাফুফের প্রস্তাব ‘খুবই উচ্চাভিলাষী’

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) দেওয়া প্রস্তাবনাকে ‘খুবই উচ্চাভিলাষী’ বলে মনে করেন বাংলাদেশ সফরে আসা ফিফার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মাইক ফিস্টার। বাফুফেকে পরিকল্পনা সাজাতে ‘বাস্তববাদী’ হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2016, 05:13 PM
Updated : 4 Nov 2016, 05:13 PM

গত মঙ্গলবার থেকে ফিফার প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কর্মকর্তাদের। আলোচনার সারসংক্ষেপ নিয়ে শুক্রবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তারা।

বাংলাদেশের ফুটবলকে কাছে থেকে দেখার অভিজ্ঞতা আছে সিনিয়র ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার ফিস্টারের। তার বাবা অটো ফিস্টার ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ ছিলেন। সে সময় বাংলাদেশ বয়েজের হয়ে কয়েকটা ম্যাচও খেলেছেন মাইক ফিস্টার। প্রায় বিশ বছর পর ঢাকায় ফিরে সংবাদ সম্মেলনে ‘পরামর্শ’ ও ‘নির্দেশনা’ দিলেন এই জার্মান কর্মকর্তা।

ফিফার ‘ফিউচার ডেভেলপমেন্ট পোগ্রাম’-এর আওতায় প্রতি বছর সর্বোচ্চ সাড়ে সাত লাখ ডলার পাওয়ার সুযোগ আছে বাফুফের সামনে। সে সুবিধা পেতে বয়সভিত্তিক দলগুলোর ও জাতীয় মহিলা দলের আবাসিক ক্যাম্প, সোহরাওয়ার্দী কাপ, জিমনেশিয়াম, ডরমেটরি, ট্রেনিং সেন্টারের জন্য অনুদান চেয়েছে ঘরোয়া ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

বাফুফের প্রস্তাবনার খসড়া দেখে খুশি হলেও মাইক বাস্তববাদী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। চার বছর নয়, আপাতত দুই বছর মেয়াদী পরিকল্পনা তৈরি করে বাফুফের এগুনোর কথাও বলেছেন তিনি।

“আমরা প্রস্তাবের যে খসড়া পেয়েছি, তাতে অনেক ভালো পরিকল্পনা আছে। এটাকে আমাদের খুবই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা মনে হয়েছে। আসলে আপনি যত বেশি পরিকল্পনা উপস্থাপন করবেন, যত বেশি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করবেন, মনে হবে আপনি লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান না। তো আমাদের পরামর্শ বাস্তববাদী হন, আরও জমাট পরিকল্পনা সাজান।”    

মামুনুল-এমিলিদের ভুটানে ভরাডুবির প্রসঙ্গ সরাসরি না বললেও জাতীয় দলের জন্য যে এ মুহূর্তে ‘টার্নিং পয়েন্ট’ দরকার, সেটাও বলেছেন ফিফার এই কর্মকর্তা।

“যদি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ ফুটবল দলের পারফরম্যান্সের দিকে তাকান, এটা (তাদের জন্য) খুবই কঠিন সময়।”

“অবশ্যই আপনি যেটা করছেন, তার প্রতিফলন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাতীয় দলের পারফরম্যান্স। এটা জেগে ওঠার ডাক। ফিফা বিশ্বাস করে, বাংলাদেশের টার্নিং পয়েন্ট দরকার।”

নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে প্রস্তাবনা অনুযায়ী কাজের বাস্তবায়ন, আর্থিক সচ্ছ্বতার মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল ফিফা অনুদান দেবে জানিয়ে ফিস্টার বাফুফেকে তৃণমূল পর্যায় থেকে ফুটবলার তুলে আনার পরামর্শও দেন।

“যখন তৃণমূল এবং যুব পর্যায়ে ফুটবল থাকে না, তখন সে দেশটার ফুটবল ভবিষ্যৎ বিপদের ‍মুখে পড়ে। তৃণমূল ও যুব ফুটবলের জন্য নির্দিষ্ট আঙ্গিকে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে। আসলে এটা লজ্জার যে, এখানকার কোনো ক্লাবে যুব দল নেই! এমনকি অনেক গরীব দেশের পেশাদার ক্লাবেও দ্বিতীয় দল আছে। এই বেসিক দিকগুলো নিয়েও আমাদের কাজ করতে হবে।”

বন্ধ হয়ে যাওয়া সিলেট একাডেমির কার্যক্রম বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) বা কোনো ক্লাবকে নিয়ে শুরু করা যেতে পারে বলে মনে করেন ফিস্টার। দিয়েছেন ডিএফএ (জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন) ও ডিএসএর (জেলা ক্রীড়া সংস্থা) মধ্যকার টানাপোড়েন নিরসন, ফুটবলের উন্নয়নে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার তাগিদও।

বাফুফের পরিকল্পনা পর্যালোচনা করে তা বাস্তবায়নে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মাইক। ‘ফিফা ব্যাংক নয়’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা এটা (পরিকল্পনার খসড়া) আগামী দুই মাস পর্যালোচনা করব। ফিফা এখানে এসেছে সহযোগিতা করতে এবং গুরুত্বপূর্ণ খাতে আর্থিক সহযোগিতা দিতে। তাই বলে সুইমিংপুল বানানোর মতো কোনো প্রকল্পে ফিফা সহায়তা দেবে না।”

এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা হওয়া বাংলাদেশের মেয়েদের প্রশংসাও করেন মাইক। প্রতিনিধিদলের সদস্য ও ফিফার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ডেভেলপমেন্ট অফিসার সাজি প্রভাকরন অনেক বেশি সম্ভাবনা দেখছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ স্কুল টুর্নামেন্ট নিয়ে।

“আমরা দেখেছি, সরকার একটি বড় পর্যায়ে স্কুল টুর্নামেন্ট আয়োজন করছে। যেখানে প্রায় ৬০ হাজার স্কুল অংশ নিচ্ছে। আমরা (বাফুফেকে) বলেছি, সরকারের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে এ নিয়ে কাজ করতে। এই উদ্যেগে কিভাবে সম্পৃক্ত হওয়ায় যায়, সেগুলোও ভেবে দেখতে হবে।”