ফুটবলে ‘নতুন শুরুর’ প্রতিশ্রুতি

বাংলাদেশের ফুটবল তলানিতে ঠেকে যাওয়ার পর নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোনোর প্রতিশ্রুতি দিলেন ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। অবশেষে সাবেক এই তারকা ফুটবলার জানিয়েছেন, তৃণমূল পর্যায় থেকে ফুটবলারদের উঠিয়ে আনতে জোর দেবেন তিনি।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Oct 2016, 03:47 PM
Updated : 16 Oct 2016, 04:53 PM

গত ১০ অক্টোবর ভুটানের মাঠে ৩-১ গোলে হেরে বাংলাদেশের এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে ওঠার আশা গুঁড়িয়ে যায়। নিজেদের ইতিহাসে ভুটানের কাছে প্রথম হারের লজ্জা পাওয়ার পর এই প্রথম গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন গত এপ্রিলে তৃতীয় দফায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি নির্বাচিত হওয়া সালাউদ্দিন। দিলেন ফুটবলের উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি।

২০১৪ সালের নভেম্বরে অনেক ঘটা করে শুরু হওয়া সিলেট একাডেমি বন্ধ হয়ে যায় ২০১৫ সালের অগাস্টে। এই একাডেমি চালুর আশা নেই সালাউদ্দিনের। তবে তৃণমুল পর্যায় থেকে ফুটবলার তুলে আনার লক্ষ্যে ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম চালু, বন্ধ হয়ে থাকা শেরেবাংলা কাপ, সোহরাওয়ার্দী কাপ আয়োজনের পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।

“ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম করব আমরা। এটা করা পৃথিবীর কোনো দেশের ফুটবল ফেডারেশনের কাজ নয়, কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাদেরই করতে হবে। এটা আমি বুঝতে পেরেছি। আরেকটা বিষয়, এখন যেহেতু আমরা (জাতীয় দল) কোনো খেলা খেলছি না, তাতে যে ফান্ডিং বাঁচবে, সেটা আমরা ইয়ুথ ডেভেলপমেন্টে কাজে লাগাতে পারব।”

“ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট প্রোগাম করার ইচ্ছা ছিল; আপনারাও চেয়েছিলেন। পরিস্থিতির কারণে করতে পারিনি বা করা হয়নি; কিন্তু এবার আমরা করব। আগামী সাড়ে তিন বছরে এটা করতে না পারলে আপনারা বলবেন, আমি চেয়ার ছেড়ে দেব। কোনো নাটক তৈরি করার দরকার হবে না। আমি ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়েছি। আমরাও এখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারব।”

তৃণমূল পর্যায় থেকে ফুটবলার উঠে আসার পথ ছিল শেরেবাংলা কাপ ও সোহরাওয়ার্দী কাপ। ১৯৭৪ সালে জেলা পর্যায়ের দল নিয়ে শুরু হওয়া শেরেবাংলা কাপ ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত টানা মাঠে ছিল। ১৯৮৭ থেকে অনিয়মিত হয়ে পড়া জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের এই আসর শেষবারের মতো হয় ২০০৬ সালে। অনূর্ধ্ব-১৯ বছর বয়সীদের প্রতিযোগিতা সোহরাওয়ার্দী কাপ সর্বশেষ মাঠে গড়িয়েছিল ২০০৭ সালে।

এই দুই প্রতিযোগিতা পুনরায় চালুর পাশাপাশি অনূর্ধ্ব-১৬ দল নিয়ে টুর্নামেন্ট ও স্কুল ফুটবল আয়োজনের পরিকল্পনার কথা জানান সালাউদ্দিন।

“ডিসেম্বরে আমরা সোহরাওয়ার্দী কাপ (অনূর্ধ্ব-১৯) আয়োজন করব, পরের বছর করব শেরেবাংলা কাপ। এই ডিসেম্বরে জেলাগুলোকে জোগাড় করে দিতে হবে তিন কোটি টাকার মতো। সেটা করে দিলে তারা তাদের লিগগুলো চালু করতে পারবে। যেভাবেই হোক আমি আমার প্রতিশ্রুতি রাখব এবং তাদের টাকা জোগাড় করে দিব।”

“জেলা পর্যায়ে এনএসসির (জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ) অধীনে ট্যালেন্ট হান্টিং চলছে। সেখান থেকে বাছাই করে আমরা বিকেএসিতে ট্রেনিং করাব। বিকেএসপির সঙ্গে এ নিয়ে আমাদের কথা হয়ে আছে। আপনাদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আর সব টুর্নামেন্টের পাশাপাশি প্রতিবছর অনুর্ধ্ব-১৬ ও ১৯ দলের লিগও হবে।”

এছাড়া ফুটবলের উন্নয়নে গোলকিপার কোচ, ট্রেনার, রেফারিদের জন্য কোর্সের পরিকল্পনাও জানান সালাউদ্দিন।

ক্লাবগুলোর দাবি-দাওয়ায় লিগ পেছানো, জাতীয় দলের ক্যাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে একাধিকবার। সামনের দিনগুলোতে ক্লাবগুলোর নিয়ন্ত্রণে কঠোর হওয়ার ঘোষণাও দেন সাবেক এই ফুটবলার।

“আপনারাও জানেন, আমি কেন তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। কিন্তু আজ আমি ওয়াদা করে গেলাম, আমি বেঁচে থাকলে এবার কেউ কোনো ছাড় পাবে না। আমাকে জেল দেন বা ফাঁসি দেন, আমি প্রতিজ্ঞা করছি, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে নখরা করে কেউ যেতে পারবে না। সে যেই হোক। এটা সব ক্লাবের জন্যই। ২০১৭ সাল থেকে বাফুফের আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। যে ভুলগুলো করেছি, তার দায় নিচ্ছি। আর কোনো অনুরোধের আসর হবে না।”