বোল্টের মিশন শেষ

মহাকাব্যিক যাত্রাটা শুরু হয়েছিল বেইজিং অলিম্পিকে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে। মাঝে লন্ডন জয় করে অলিম্পিক অভিযান শেষ হলো রিওতে নবম সোনার পদক জিতে। প্রাপ্তির চূড়ায় উঠে বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা অ্যাথলেট উসাইন বোল্ট জানালেন মিশন শেষ তার।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 August 2016, 08:33 AM
Updated : 16 Oct 2016, 10:49 AM

নয়টি ফাইনাল, নয়টি সোনা। ৪*১০০ মিটার রিলেতে শেষটি জয়ে বোল্টের হলো ‘ট্রিপল ট্রিপল’। আগেই বলেছিলেন টানা তিন অলিম্পিকে টানা তিন ইভেন্টে সোনা জিতে অমরত্ব চান তিনি। নিজেকে ঘোষণা করে ছিলেন ‘সবার সেরা’। অলিম্পিকের শেষ রেসে জিততে না পারলে যে এই দাবি জোরালো হবে না সেটা জানতেন বোল্ট। তাই দৌড় শেষে সাংবাদিকদের বললেন, “আমি সবার সেরা। আমি ভারমুক্ত যে এটা হয়েছে। আমি খুশি, নিজের উপর গর্বিত। স্বপ্নটা সত্যি হয়েছে।

৯টি সোনা জিতে বোল্ট স্পর্শ করলেন ফিনল্যান্ডের মাঝারি ও দূরপাল্লার দৌড়বিদ পাভো নুর্মি ও যুক্তরাষ্ট্রের স্প্রিন্টার কার্ল লুইসকে। অলিম্পিক ইতিহাসে অ্যাথলেটিক্সে আর কারও এই কৃতিত্ব নেই। সংবাদ সম্মেলনে এমন কীর্তির অনুভূতি জানাতে বোল্ট ছিলেন বড্ড সাদামাটা।

“স্রেফ মিশ্র অনুভূতি অনুভব করছি আমি। স্বস্তি, বছরের পর বছর ধরে আমি এই চাপটা নিয়েছি…অবশ্যই আমি খেলাটাকে মিস করব, মিস করব অলিম্পিককে। কেননা, এটাই সবচেয়ে বড় মঞ্চ।”

রিওর তৃতীয় সোনাটা জেতার পর তিন সতীর্থের সঙ্গে নেচে উদযাপন করেন দুই দিন পরই ৩০তম জন্মদিন পালন করতে যাওয়া বোল্ট। আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সংবাদিকদের সঙ্গে একটু-আধটু মজাও করলেন বিশ্বের এই দ্রুততম মানব। তবে সব কথাতেই ঘুরে ফিরে এলো বিদায়ের প্রসঙ্গ।

“এই সাক্ষাৎকারগুলো মিস করব না। এখানে আসার পর থেকে ৫০০ সাক্ষাৎকার দিয়েছি। কিন্তু আমি অবশ্যই দর্শক, এই প্রতিযোগিতা মিস করব।”

“আমি প্রতিযোগিতা ভালোবাসি। তাই আমি এ সব কিছুর অভাব অনুভব করব। কিন্তু এটা দারুণ একটা ক্যারিয়ার। যেটা পারি, তার সবটাই আমি করেছি। বিশ্বকে প্রমাণ করেছি, খেলাটাই আমিই সবার সেরা। তাই মিশনটা দারুণভাবে শেষ হলো।”

মর্যাদার ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ৯ দশমিক ৫৮ সেকেন্ড, ২০০ মিটারে ১৯ দশমিক ১৯ সেকেন্ড রেকর্ড বোল্টের। কেবল দেশের বাইরের প্রতিযোগী নয়, লড়তে হয়েছে জ্যামাইকা দলের সতীর্থ সাবেক বিশ্ব রেকর্ডের মালিক আসাফা পাওয়েল, অনুশীলনের সঙ্গী ইয়োহান ব্লেকেরও সঙ্গে। অলিম্পিকে শেষ দৌড়ে বোল্টের আরেক সঙ্গী নিকেল অ্যাশমিড। বোল্ট জানালেন সতীর্থদের সঙ্গে লড়াইটাও উপভোগ করেছেন তিনি।

“দলের সঙ্গে লড়তে ভালোবাসি আমি। … জ্যামাইকার সেরা চার জনের সঙ্গে লড়াই করাটা সবসময় আনন্দের।”

“আমি সবসময় আমার দেশের প্রয়োজনটা মেটাতে চেয়েছি এবং দেশের জন্য যতটা পারি, ততটা ভালো দূত হওয়ার চেষ্টা সবসময় করেছি। এমনকি অবসর নেওয়ার পরও আমি দেশকে ওপরে তোলার কাজটা চালিয়ে যাব।”

রিওতে আসা যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিন গ্যাটলিন, জ্যামাইকার আসাফা পাওয়েলের ডোপ পরীক্ষায় পাস করতে না পারার অতীত আছে। রিওর আসরের আগে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ডোপিংয়ের দায়ে রাশিয়ার অ্যাথলেটদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে। লম্বা ক্যারিয়ারে কখনও ডোপ পরীক্ষায় ব্যর্থ হননি বোল্ট। ঠিক পথে থাকার তৃপ্তি নিয়েই বিদায় নিচ্ছেন তিনি।

“আমি মনে করি, আমরা কঠিন পথের ভিতর দিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু তরুণ যারা আমাদের দলে আছে, তাদের নিয়ে আমরা সঠিক পথে থেকেছি।”

অলিম্পিকে আর আসা হবে না; বিদায়ে রাগিণী বাজছে। তাই এত প্রাপ্তির পরও মিশ্র অনুভূতি বোল্টের। কিংবদন্তি এই অ্যাথলেট আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে বলেলেন, “ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে আমি যেটা করতে চেয়েছিলাম, তার সব করেছি। আমাকে শুধু নতুন লক্ষ্য ঠিক করতে হবে এবং নতুন চাওয়া পূরণের তালিকা তৈরি করতে হবে। তবে সবার আগে আমি ছুটিতে যেতে ও বিশ্রাম নিতে চাই।”