লিগ শিরোপার ‘দাবিদার’ শেখ রাসেল

২০১২-১৩ মৌসুমের সোনালি সময়টা এ মৌসুমেও ফিরিয়ে আনার ইঙ্গিত দিয়েছিল শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র; কিন্তু পারেনি। স্বাধীনতা কাপ, ফেডারেশন কাপের সেমি-ফাইনাল থেকে স্বপ্ন ভাঙার কষ্ট নিয়ে ফিরতে হয়েছে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দলটির কোচ মারুফুল হক জানালেন, প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা নিজেদের করে নেওয়াই তার দলের একমাত্র লক্ষ্য।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2016, 01:40 PM
Updated : 23 July 2016, 01:51 PM

মারুফুলের হাত ধরেই ২০১২-১৩ মৌসুমে স্বাধীনতা কাপ, ফেডারেশন কাপ, প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা উৎসবে মেতেছিল শেখ রাসেল। এবার স্বাধীনতা কাপে সেরা চারের লড়াইয়ে চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে, ফেডারেশন কাপে আবাহনী লিমিটেডের কাছে হেরে যায় শেখ রাসেল। এ মৌসুমে লিগ শিরোপা জয়ের সুযোগটাই অবশিষ্ট আছে দলটির সামনে। সেটা কাজে লাগাতে প্রত্যয়ী মারুফুল।

প্রস্তুতির সন্তুষ্টি, চোট দুর্ভাবনা

ঘরোয়া ফুটবলের ত্রিমুকুট জয়ের পর থেকে লিগে শেখ রাসেলের পথচলাটা কখনও কখনও শিরোপা স্বপ্ন দেখিয়েছে ভালোভাবেই। ২০১৩-১৪ মৌসুমে তারা ষষ্ঠ স্থানে থেকে লিগ শেষ করলেও গতবার ২০ ম্যাচে ৪২ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় হয়। এবারের লিগে পয়েন্ট টেবিলের চূড়ায় ওঠার প্রস্তুতি ভালো বলে দাবি মারুফুলের। কিন্তু নির্ভরযোগ্য ছয় তারকার চোট দুর্ভাবনায় ফেলে দিয়েছে জাতীয় দলের এই সাবেক কোচকে।

“প্রস্তুতি ভালো। ছোটখাট কিছু ইনজুরি আছে, ওরা এখনও মাঠে নামতে পারেনি।”

‘ছোটখাট চোট’ হলেও চোটে পড়া খেলোয়াড়দের তালিকা মোটেও ছোট নয়। মারুফুলই জানালেন, আবুল বাতেন মজুমদার কোমল, জাহিদ হাসান এমিলি, শাখাওয়াত হোসেন রনি, মিঠুন চৌধুরী, ফিকরু জেইদা ও নাগাইও ভ্যালেরি–এই ছয়জন গত এক সপ্তাহে চোটের কারণে প্রস্তুতিতে নামতে পারেনি। আশা করছেন, লিগে প্রথম থেকেই তাদের পাবেন।

‘দুর্বলতা ফিনিশিং নিয়ে’

চোটে পড়াদের লম্বা তালিকায় এমিলি, মিঠুন ও রনি জাতীয় দলের ফরোয়ার্ড। এই তিন জনের সঙ্গে ফিকরুর কাঁধেও শেখ রাসেলকে গোল এনে দেওয়ার ভার। দলটির স্বাধীনতা কাপের সেমি-ফাইনালে ওঠায় ৬ গোল অবদান রাখেন ইথিওপিয়ার ফরোয়ার্ড ফিকরু। ফেডারেশন কাপে দলকে ইকাঙ্গা, পল এমিলরা টেনেছেন সম্মিলিতভাবে। ক্যামেরুনের ইকাঙ্গা ও এমিল ‍দুটি, শাহেদুল আলম ও রুম্মন হোসেন একটি করে গোল করেন। জাতীয় দলের অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড এমিলি ও বর্তমানের নির্ভরতা রনি শেখ রাসেলের জার্সিতে চলতি মৌসুমে এখনও প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে পারেননি।

বরাবরের মতো এবারও মাঝমাঠকে কেন্দ্র করে খেলার ছকে মারুফুল। আক্রমণভাগ চোট জর্জর হওয়ায় মাঝ মাঠের দিকে তার নজরটা আরও বেশি। তবে লিগের মুকুট পুনরুদ্ধারে আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই তার।

“ফিনিশিং নিয়ে আমাদের একটু সমস্যা আছে। আমাদের শক্তির জায়গা মিডফিল্ড। এ জায়গায় নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারলে ম্যাচ বের করে আনা সম্ভব।”

রাসেল মাহমুদ লিটনের কাঁধে গোলপোস্ট আগলানোর ভার। ইকাঙ্গা, ভ্যালেরি, আতিকুর রহমান মিশু, মিন্টু শেখ ও অরূপ কুমার বৈদ্য সামলাবেন রক্ষণ। মাঝ মাঠ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কোচ রাখছেন মোনায়েম খান রাজু, ফজলে রাব্বী, শাহেদুল আলম শাহেদদের ওপর। ফিকরু, কোমলও প্রয়োজনে পাশে দাঁড়াবেন রাজু-ইকাঙ্গাদের।

তবু দৃষ্টি শিরোপায়

লিগ শিরোপার সেরা তিন ফেভারিটের তালিকায় অধিকাংশই দুই আবাহনীর সঙ্গে রাখছেন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবকে। মারুফুলের তালিকাও একই রকম। তবে শেখ রাসেল কোচ হিসেবে দ্বিতীয় লিগ শিরোপার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

“আমার দৃষ্টিতে সেরা তিন ফেভারিট দুই আবাহনী ও শেখ জামাল। অনেকে শেখ জামালের বর্তমান দলটিকে খুব একটা সমীহ না করলেও আমি তা মনে করি না। জাতীয় দলে খেলা অনেকে আছে তাদের। তবে আমাদেরও লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া। মৌসুমে আমাদের সামনে এখন লিগটাই বাকি। এটা জয়ের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টাই করব আমরা।”

“গত দুটি আসরে আমাদেরকে সেমি-ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। এ নিয়ে আমি খুব অখুশি নই, আবার শতভাগ খুশিও নই। তবে ফুটবলে এটুকু মেনে নিতেই হবে এবং আমরা এটুকু মেনে নিয়ে লিগে সাফল্য পেতে চাই।”

“চাপ নিতে না পারলে সে পেশাদারই না”

জেবি প্রিমিয়ার লিগের খেলাগুলো এবার ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেটের ভেন্যুতে হবে। ফুটবলের কোনো আয়োজন ঢাকার গণ্ডি পেরুনো মানেই গ্যালারিতে উপচে পড়া ভিড়। আবাহনী ও মোহামেডান অভিজ্ঞতা দিয়ে দর্শকের এ চাপ সামলাতে সক্ষম। যে দলগুলোর অভিজ্ঞতায় কমতি আছে, তারা পড়বে সমস্যায়।

মারুফুলের বিশ্বাস গ্যালারি ভরা দর্শকের সামলে তাল হারাবে না তার শিষ্যরা।

“যারা সত্যিকারের পারফরমার, তাদের গ্যালারির দিকে মনোযোগ থাকে না। তাদের মাঠের খেলায়, কোচ যে নির্দেশনা দিবে, সেটা বাস্তবায়নের দিকেই মনোযোগ থাকে। দর্শক যদি সমস্যা হয়, এ চাপ যদি কেউ নিতে না পারে, তাহলে সে আসলে পেশাদার খেলোয়াড় নয়।”