লিগের পঞ্চম শিরোপায় চোখ আবাহনীর

প্রিমিয়ার লিগের পেশাদার পর্বের প্রথম হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন তারা। প্রতিযোগিতাটির গত আট আসরের হিসেবে সর্বোচ্চ চার বারের সেরাও দলটি। এবার পঞ্চমবারের মতো লিগের মুকুট জয়ের লক্ষ্য আবাহনী লিমিটেডের। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় টিম ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রুপু জানালেন, ছোট দলগুলোর কাছে পয়েন্ট খোয়ানোর বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেই লক্ষ্যপূরণ সম্ভব।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 July 2016, 10:08 AM
Updated : 23 July 2016, 01:51 PM

প্রিমিয়ার লিগে দুই পর্বেই সফল আবাহনী। ২০০৬-০৭ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে পা রাখে পেশাদার আঙিনায়। তার আগে ১১বার শিরোপা উৎসব করেছিল তারা। পেশাদার পর্বের শুরুর তিন আসরে শিরোপা জিতে প্রথম হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয় দলটি। এরপর একে মৌসুমে লিগ হয়নি। পরের মৌসুমে বিরতির পর ২০১১-১২তে চতুর্থ লিগ শিরোপা জেতে দলটি। লিগের আট আসরের বাকি চারটির মধ্যে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব ৩টি ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র একটিতে জয়ী। এদের মধ্যে গত দুইবারের সেরা শেখ জামাল এবার হ্যাটট্রিক শিরোপা মিশনে। সফল হলে আবাহনীর সর্বোচ্চ চার শিরোপার পাশে বসবে তারা। তবে জর্জ কোটানের আবাহনী উন্মুখ লিগের পঞ্চম শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে।

প্রস্তুতির সন্তুষ্টি ও সাফল্যের প্রত্যাশা

স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে হার দিয়ে জুয়েল-সানডেদের মৌসুম শুরু। তবে ফেডারেশন কাপে আরামবাগ ক্রীড়া চক্রকে হারিয়ে ২০১১-১২ মৌসুমের পর প্রথম শিরোপার স্বাদ নেয় আবাহনী। ওই দুই টুর্নামেন্টেই দলটির চেনা রূপে দেখা মিলেছে। আবাহনীর টিম ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রুপুও জানালেন, সাফল্যের ধারা এবার লিগে টেনে নিয়ে যেতে চান তারা। কোটানের অধীনে প্রস্তুতিও ঠিকঠাক হয়েছে বলে জানান এই সাবেক খেলোয়াড়।

“প্রস্তুতি ভালো। বলতে পারেন, স্বাধীনতা কাপ ও ফেডারেশন কাপ সবার মতো আমাদের জন্য লিগেও প্রস্তুতিমূলক টুর্নামেন্ট ছিল। মোটামুটি প্রস্তুতি নিয়ে সন্তুষ্ট। ছেলেরা মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত।”

“চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই দল গঠন করা হয়েছে। গত তিনটা মৌসুমে আমরা সারা মাঠ আধিপত্য করেও ফল নিজেদের পক্ষে আনতে পারিনি। অসংখ্য গোল মিসের মহড়া দিয়েছি। তবে গত দুটি টুর্নামেন্টে বিদেশি ও স্থানীয়রা মোটামুটি গোল করেছে। আশা করি, ছেলেরা গোল মিসের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসবে; তাহলে লিগ জেতা সম্ভব।”

‘বেঞ্চ’ শক্তিশালী, দুর্ভাবনা ‘ফিনিশিং’

২০১১ সালে সুপার কাপ জেতা আবাহনী গত কয়েকটি মৌসুমের হিসেবে এবারই শক্তিশালী দল গড়েছে। রক্ষণে অভিজ্ঞ ওয়ালী ফয়সালের সঙ্গী তপু বর্মন, প্রাণোতোষ কুমার, মামুন মিয়া। মাঝমাঠে ইংল্যান্ডের লি টাকের সঙ্গে হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস, আয়ারল্যান্ড থেকে আসা রোহান রিকেটস; আক্রমণভাগে স্থানীয় জুয়েল রানা ও নাবীব নেওয়াজ জীবনের সঙ্গে নাইজেরিয়ার সানডে চিজোবা ও সেনেগালের কামারা সাররা। ওয়াহেদ আহমেদ, শাহেদুল ইসলাম শাহেদ, ফয়সাল মাহমুদের আছে বদলি হিসেবে নেমে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া সামর্থ্য। রুপু তাই আরও বেশি আশাবাদী।

“প্রতিটি পজিশনে মানসম্পন্ন বিকল্প খেলোয়াড়ও আমাদের আছে। মাঠে যারা খেলবে তারা যদি কোনো কারণে নিজেদের মেলে ধরতে না পারে, তাহলে বেঞ্চে যারা আছে, তারাও মাঠে নেমে ভালো করতে সক্ষম।”

স্বাধীনতা কাপের গত আসরে সানডে করেন ৬ গোল, কামারা ৪টি; কিন্তু শিরোপা জিততে পারেনি আবাহনী। আরামবাগকে হারিয়ে আবাহনীর নবম ফেডারেশন কাপ জেতা ফাইনালে একমাত্র গোলদাতা লি টাক। এ আসরে সানডের গোল দুটি। তারপরও ফিনিশিং নিয়ে দুর্ভাবনায় রুপু।

“গত দুই আসরে আমরা একটাতে চ্যাম্পিয়ন ও অন্যটাতে রানার্সআপ। কিন্তু এ দুটি আসরে আমরা অনেক গোলও মিস করেছি। ফিনিশিং নিয়ে আমাদের সবচেয়ে বড় ভয়। লিগে যেন আমরা গোলের সুযোগ কোনোভাবেই না হারাই। গোল মিস করতে করতে যেন আমরা দুর্বল না হয়ে পড়ি। কোচ (জর্জ কোটান) এ দিকে বেশি ‍গুরুত্ব দিচ্ছেন।”

সমীহের দৃষ্টি সবার প্রতি

লিগ জয়ে নির্দিষ্ট কোনো প্রতিপক্ষ নিয়ে ভাবনা নেই আবাহনীর। শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র, চট্টগ্রাম আবাহনী, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মতো শক্তিশালী দলকে পেছনে ফেলে সব শেষ ফেডারেশন কাপের ফাইনাল খেলেছে আরামবাগ। রুপু তাই প্রতিপক্ষকে ‘বড়-ছোট’তে ভাগ করছেন না। সবাইকে শক্তিশালী মেনে নিজেদের করণীয় ঠিক করার পক্ষে এই সাবেক ফুটবলার।

“লিগ শিরোপা জন্য এবার অনেকগুলো দল লড়াই করবে। আমার কাছে সব প্রতিপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যাদের নিচের সারির দল বলি, তারা কিন্তু নিচের সারির না। আমাদের গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা বলছে, আমরা আসল পয়েন্টগুলো নষ্ট করেছি ছোট দলের কাছে। গতবারও লিগে যারা নিচের দিকে ছিল, তাদের কাছে পয়েন্ট হারিয়েছি। তাই আমাদের কাছে প্রতিটি ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ এবং সব প্রতিপক্ষ শক্তিশালী।”

‘আবাহনী সমর্থকদের গ্যালারিতে চাই’

এবারই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ যাচ্ছে ঢাকার বাইরে। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেটে হবে খেলাগুলো। রুপুর আশা আবাহনী সমর্থকরা মাঠে আসবেন দলকে উৎসাহ জোগাতে।

“দর্শক মাঠে এলে স্বাভাবিকভাবে খেলোয়াড়রা অনুপ্রাণিত হয়; আরও ভালো খেলার চেষ্টা করে। যদি আবাহনী সমর্থকরা মাঠে এসে ছেলেদের সমর্থন করে, তাহলে আমাদের সাফল্য পাওয়ার কাজটা সহজ হবে।”

দলটির উঠতি ফরোয়ার্ড জুয়েল রানাও জানালেন তারা সবাই ভরা গ্যালারির সামনে খেলতে মুখিয়ে আছেন, “অনেক দর্শকের সামনে খেলা অবশ্যই আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। দলের সবাই এ জন্য মুখিয়ে আছে। লিগে আমাদের লক্ষ্য চ্যাম্পিয়ন হওয়া। এর বাইরে আর কোনো ভাবনা নেই। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য যা করার দরকার, তা আমরা করব।”