শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাব, চট্টগ্রাম আবাহনী, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ও ঢাকা আবাহনী যেখানে দল গঠনে অঢেল বিনিয়োগ করেছে, ঘরোয়ার সেরা ফুটবলারদের দলে ভেড়ানোর ক্ষেত্রে মোহামেডান সেখানে ছিল উল্টো রথে। আগামী রোববার থেকে শুরু হতে যাওয়া প্রিমিয়ার লিগের নবম আসরেও দলটি লড়বে তরুণ যোদ্ধাদের নিয়ে। তারুণ্যের শক্তি থাকলেও অভিজ্ঞতার ঘাটতি ঠিকই দলটির পরতে পরতে থেকে যাচ্ছে।
অধরা প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা
২০১৩ সালে সুপার কাপ জয় মোহামেডানের সর্বশেষ সাফল্য; ২০০৯ সালের প্রথম শিরোপাটিও জিতেছিল তারা। অর্জনের শোকেসে সাজানো ১০টি ফেডারেশন কাপের সবশেষটি ২০০৯ সালে জেতা। সুপার কাপ, ফেডারেশন কাপে সাফল্য মিললেও ঘরোয়া ফুটবলের শীর্ষ লিগে গত কয়েকটি মৌসুম নিজেদের নামের প্রতি মোটেও সুবিচার করতে পারেনি তারা।
২০১৪-১৫ মৌসুমে ২০ ম্যাচে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয়, তার আগের মৌসুমে ২৭ ম্যাচে ৪৫ পয়েন্ট নিয়ে লিগে চতুর্থ হয় মোহামেডান। প্রিমিয়ার লিগের গত আট আসরে দলটির সেরা অবস্থান দ্বিতীয়; প্রথম তিন আসরে সেরাদের পেছনে থেকে থেমেছিল দলটি। শুরুর ওই তিন আসরের পর পারফরম্যান্স বিবর্ণ হয়েছে।
লম্বা সময় ধরে পিছু নেওয়া সাফল্য খরা এবার কাটানোর লক্ষ্য পূরণের জোরালো ঘোষণাও নেই জোসির মুখে। ‘ভালো ফল’ পাওয়ার গণ্ডিতেই আটকে থাকছে ঐতিহ্যবাহী দলটির কোচের চাওয়া।
“যেভাবে দল গঠন করা হয়েছে, লিগে আমরা ভালো ফল পাওয়ার জন্য লড়াকু মনোভাব নিয়ে খেলব। তবে শুধু মনোবল থাকলে হবে না, খেলোয়াড়দের মান, সামর্থ্য, শৃঙ্খলা, পরিকল্পনার ব্যাপারও থাকে। সর্বোপরি ভাগ্যেরও একটা ব্যাপার থাকে।”
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) কদিন আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে জোসি দল নিয়ে নিজের অসহায়ত্ব জানাতে বলেছিলেন ‘সেরা দল গড়েনি মোহামেডান’। ঘরোয়া ফুটবলে বড় দলগুলোর মধ্যে তাই ভাগ্যকে পাশে পাওয়ার আর্তি বেশি তার।
এবারও ‘সেরা তিনের’ লক্ষ্য
প্রিমিয়ার লিগের গত আট আসরে সর্বোচ্চ ৪টি শিরোপা জিতেছে মোহামেডানেরই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড। ৩টি শেখ জামাল জিতেছে; একটি শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। গত আট লিগে মোহামেডান ৫বার সেরা তিনে ছিল; একবারই ছিল সেরা চারের বাইরে। এবারও সেরা তিনে থাকার লক্ষ্য নিয়ে ছক কষছেন দলটির কোচ।
“লিগে ওপরের দিকে থাকতে আগ্রহী। মোহামেডান সবসময় শীর্ষে থাকার চেষ্টা করে; আমিও ওপরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করব। মোহামেডান কখনও নিচের সারিতে থাকতে পছন্দ করে না। তবে দলের যে অবস্থা, সেরা তিনে থাকতে পারলে আমি খুশি হব।”
স্বাধীনতার আগে ও পরে মিলিয়ে লিগের ১৯টি শিরোপা জিতেছে মোহামেডান। স্বাধীনতার আগে সাতটি, পরে ১২টি। এই বারোটির মধ্যে সবশেষটি ২০০২ সালে। এ ইতিহাস অধিনায়ক ইসমাইল বাঙ্গুরার নাও জানা থাকতে পারে কিন্তু কোচের মতো নিজের দলের বর্তমান অবস্থা, শক্তি-দুর্বলতা তার মোটেও অজানা নয়। তাই “আশা করি আমরা ভালো কিছু করতে পারব”, এতটুকুতে আটকে থাকছে তার চাওয়া।
জার্সির ‘মর্যাদায়’ আস্থা
ঢাকা ও চট্টগ্রাম আবাহনী, শেখ রাসেলের মতো ঘরোয়া ফুটবলের তারকা নেই মোহামেডান দলে। মিডফিল্ডার মাশুক মিয়া জনি, তৌহিদুল আলম সবুজ, ইউসুফ সিফাত ও ফরোয়ার্ড আমিনুর রহমান সজীব মোটামুটি পরিচিত মুখ। আক্রমণভাগে মূল ভরসা গিনির ফরোয়ার্ড ইসমাইল বাঙ্গুরা; গত স্বাধীনতা কাপে চার গোল করে আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন তিনি। রক্ষণে দলটির নির্ভরযোগ্য যোদ্ধা সেনেগালের ইয়াইয়া সি ও ক্যামেরুনের পওমি ল্যান্ড্রি।
বর্তমান দল নিয়ে ফেডারেশন কাপে গ্রুপ পর্ব পেরুতে পারেনি মোহামেডান। মৌসুম শুরুর টুর্নামেন্ট স্বাধীনতা কাপেও ছিল একই অবস্থা। তবে দল নিয়ে খুব একটা খুশি হতে না পারলেও তারুণ্যের শক্তি আর ঐতিহ্যের গর্ব দিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান জোসি।
“মোহামেডানের জার্সির মর্যাদা আছে, ওজন আছে। খেলোয়াড়রা যখন এখানে আসে, তখন তারা মোহামেডানের খেলোয়াড়। আগে কে কোন দলে ছিল, কিভাবে খেলেছে, সেটা কোনো ব্যাপার নয়। কেউ যখন এই দলে আসে, তখন সে মোহামেডানের মতোই খেলে। এটা একটা ঐতিহ্যবাহী দল। টিম ওয়ার্কই আমাদের মূল শক্তি।”
তারুণ্যের শক্তিতে মোহামেডানের বাজিমাত করার দৃশ্য গত স্বাধীনতা কাপেই দেখেছেন ফুটবলপ্রেমীরা। শেষ পর্যন্ত প্রতিযোগিতাটির শিরোপা জেতা চট্টগ্রাম আবাহনীকে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ৫-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল সিফাত-বাঙ্গুরাদের এই মোহামেডানই!
চার ভেন্যুতে হবে এবারের লিগ। খেলোয়াড়দের ভ্রমণ ক্লান্তি নিয়ে অনেক কোচ চিন্তিত হলেও জোসির এসব ভাবনা নেই। লিগ জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়াতে খুশি তিনি, “আমাদের আন্তর্জাতিক নিয়মের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে হবে। খেলা ঢাকার বাইরে যাবে এবং আমার কাছে এটা ভালো উদ্যোগ।”
দুই আবাহনী আর শেখ রাসেলকে সমীহ
বাস্তবতা বড় স্বপ্ন দেখার সাহস না দিলেও লিগ শিরোপা স্বপ্ন যে মোহামেডানের একেবারেই নেই, তা নয়। লিগ আর টুর্নামেন্টের ব্যবধান অনেক; এবার চার ভেন্যুতে ঘুরে ঘুরে খেলতে হবে সিফাত, বাঙ্গুরাদের। অভিজ্ঞতা এখানে সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে।
এছাড়া মোহামেডান যতই দুরাবস্থার মধ্যে দিয়ে যাক না কেন, সারা দেশে এখনও তাদের সমর্থক কারো চেয়ে কম নয়। ঢাকার বাইরে ফুটবল খেলতে গেলে গ্যালারি কানায় কানায় ভরে ওঠে। এবারের লিগেও সমর্থকদের পাশে পাবে ঘরোয়া ফুটবলের পরাশক্তিরা। সিফাত-সজীবরা স্বাভাবিকভাবে সমর্থনপুষ্ট হয়ে জ্বলে উঠতে চাইবেন; দলকে টেনে নিতে চাইবেন কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।
কোচ জোসিও লিগ শিরোপা স্বপ্ন সংগোপনে লালন করছেন। তবে দুই আবাহনী ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র যে স্বপ্ন পূরণের পথ আগলে দাঁড়াবে, সেটাও ভুলছেন না তিনি, “শিরোপার দাবিদার অনেকে আছে। দুই আবাহনী, শেখ রাসেল এই তিন দলই ভালো দল। তবে আমরাও চ্যাম্পিয়ন হতে পারি।”