প্রশ্ন: অলিম্পিকে খেলার স্বপ্ন নিয়েই কি শুটিং শুরু করেছিলেন?
আব্দুল্লাহ হেল বাকি: যখন শুটিং শুরু করি, ২০০২ সালে তখন আসিফ ভাই (আসিফ হোসেন খান) কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জিতলেন। তার পাওয়া সম্মানটা দেখেই শুটিং করার স্বপ্নটা জাগে। আর যখন শুটিং শুরু করলাম, আসলে ইনডিভিজুয়াল গেমস যারা করে, তাদের একটা স্বপ্নই থাকে অলিম্পিকে খেলা, আমারও একই স্বপ্ন ছিল।
প্রশ্ন: সে স্বপ্ন ওয়াইল্ড কার্ড দিয়ে পূরণ হলো বলে কি একটু আক্ষেপ আছে?
আব্দুল্লাহ হেল বাকি: কিছু দিন ধরে আমি যে স্কোর করছিলাম, মনে হচ্ছিল হয়ত কোটা প্লেস পেয়ে যাব। কিন্তু সবগুলো গেমসে খেলতে পারিনি। শেষ দিকের গেমসেও প্রত্যাশিত স্কোর হয়নি, এ কারণেই কোটা প্লেসও হয়নি। তবে যেভাবেই হোক, অলিম্পিকে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি; এটাই আমার জন্য অনেক আনন্দের; গর্বের।
প্রশ্ন: গেমসগুলোয় খেলা হয়নি কেন?
প্রশ্ন: আটটা গেমসে খেলতে না পারার কারণে কি আক্ষেপটা বেশি?
আব্দুল্লাহ হেল বাকি: আসলে ওয়াইল্ড কার্ড পেলে যোগ্যতা অর্জন করতে না পারার আফসোসটুকু থেকেই যায়। আমি এখানে অনুশীলনে যে স্কোরটা করছি; আমার বেস্ট স্কোর হচ্ছে ৬৩১.৭, মোটামুটি করলে ৬২৮-২৯ হয়, খুব খারাপ করলেও ৬২২ থেকে ৬২৫-এর মধ্যে থাকে। এখানে একটা পয়েন্ট হলো, আমি যদি দেশের বাইরে কোনো গেমসে ৬২৭ স্কোর করতে পারি, তাহলে ওই গেমসে আমি ফাইনালে খেলব। তো আমি যখন ফাইনাল খেলবো, তখন কোটা প্লেসের জন্য আসলেই ভালো একটা সম্ভাবনা থাকে।
অলিম্পিকে সরাসরি খেলে ২৯ জন। হয়কি, অনেকে শেষ দিকে জার্মানিতে অনেকে কোটা পেয়ে গেছে, এ কারণেই জার্মানির গেমসটা খেলা। কিন্তু প্রত্যাশিত স্কোরটা হয়নি। যদি আটটা গেমস করতাম, তাহলে যদি দুইটাতেও ফাইনালে যেতে পারতাম, ছয়টাতে খারাপ করলেও সুযোগ পাওয়া সম্ভব ছিল।
প্রশ্ন: অলিম্পিকের চাপ নেওয়ার কারণেই কি জার্মানিতে প্রত্যাশিত স্কোর হয়নি? নাকি অন্য কোনো কারণে?
প্রশ্ন: পিছিয়ে থাকার কারণগুলো...
আব্দুল্লাহ হেল বাকি: এটা আসলে বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন ওই আসরগুলোতে যে শুটাররা খেলেন, তারা প্রতিটি গেমস খেলে, তারা ওয়ার্ল্ড কাপে পদকজয়ী, এসব ভাবনায় হয়ত পিছিয়ে থাকি। যদি সবগুলো গেমস খেলতাম, তাহলে তাদের দেখতে দেখতে, তাদের সঙ্গে খেলতে খেলতে আমি কিছুটা হলেও অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারতাম।
প্রশ্ন: মানসিক শক্তি বাড়ানো নিয়ে বলছিলেন। শুটিংয়ে এ ব্যাপারগুলো কি একটু অন্যরকম।
প্রশ্ন: তাহলে কি মানসিকভাবে পিছিয়ে থাকার ঘাটতি নিয়ে রিও দে জেনেইরো যাচ্ছেন?
আব্দুল্লাহ হেল বাকি: তা কিছুটা বলতে পারেন। তবে আমি আশাবাদী ঘাটতিটুকু পুষিয়ে নেওয়া যাবে। আসলে অলিম্পিকে এমন অনেক শুটার আছেন, যারা প্রতিটি টুর্নামেন্ট খেলেছেন। আমি সাত বছর ধরে সব মিলিয়ে ২৪টা ট্যুর করেছি। এটার কারণে খুবই স্বাভাবিক আমি একটু পিছিয়ে থাকব। তাছাড়া শুটিংয়ে লড়াইটা আসলে নিজের সঙ্গে নিজের। আমি চাইব সুযোগটা নিতে কিন্তু এটাকে অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
প্রশ্ন: কদিন আগে ব্রাজিলে ওয়ার্ল্ড কাপ খেলে এসেছেন। সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা তো আপনার জন্য সহজ হওয়ার কথা।
তবে আমি যেহেতু দ্বিতীয়বার যাচ্ছি, সেহেতু সেখানকার আবহওয়া, পরিবেশ, ভিলেজ টু রেঞ্জ, রেঞ্জের ভেতরে আবহ, এগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আগেরবার করে আনা ভিডিওটাই দেখি। ওটা দেখতে দেখতে অনুশীলন করি। এগুলো যে করতে হয়, এটা আমি আগেও জানতাম না। এখন যেহেতু জানি, তাই চেষ্টা করব যাতে তিন-চার দিনে মানিয়ে নেওয়া যায়।
প্রশ্ন: প্রথমবারের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
আব্দুল্লাহ হেল বাকি: অনেক রকমের সমস্যা হয়েছিল। সবচেয়ে বড় যে সমস্যা হয়েছিল, যখন আমি প্র্যাকটিসে যাব, তখন ঘুম পেতো। যখন প্র্যাকটিসে গেছি, তখন এখানে (বাংলাদেশে) ঘুমের সময়। নয় থেকে দশ ঘণ্টার ব্যবধান। এটা কাভার করতেই ৪-৫ দিন সময় লেগেছে। শুটিং তো এমনিতেই মানসিক খেলা, তো খেলার সময় ঝিমালে আমি কিছুই করতে পারব না। প্রথম সফরে বলতে গেলে আমি শুধু একদিন অনুশীলন করতে পেরেছি। ওই অভিজ্ঞতা এবার কাজে লাগবে।
প্রশ্ন: ব্রাজিলে আগেরবার ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে ৬২২.৮ স্কোর গড়ে ৩০তম হয়েছিলেন। এবার কি লক্ষ্য নিয়ে যাচ্ছেন?
অলিম্পিকে যারা খেলবে, তারা পৃথিবীর কোথাও না কোথাও পদকজয়ী। যে আটজন ফাইনালে খেলবে, তাদের মধ্যেই কেবল অদলবদল হয় কিন্তু এর বাইরে সে অর্থে কিছু হয় না। তবে ফাইনালে খেলার ব্যাপারে আমি আসলে খুবই আশাবাদী।
প্রশ্ন: কি কারণে এতটা আশাবাদী হয়ে উঠছেন?
আব্দুল্লাহ হেল বাকি: দেখুন, আমি যদি ৬২৭ স্কোর করতে পারি, তাহলেও সেখানে ফাইনালে খেলব। আমার কিছু কিছু জায়গায় ভুল আছে, যেটা আমি বুঝছি কিন্তু আপনাদের বোঝাতে পারব না। এ বছরই ব্রাজিলে ৬২২.৮ স্কোর করেছি। অথচ ব্রাজিলে রওনা দেওয়ার আগেই আমি প্রস্তুতিতে ৬২৮ স্কোর করেছি।
প্রশ্ন: রিও দে জেনেইরোর রেঞ্জে এবার মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন তো?
আব্দুল্লাহ হেল বাকি: আশা করি। যোগ্যতা অর্জন করতে না পারার কারণেই একটু কষ্ট আছে। জেদ আছে, বিশ্বকাপে যে স্কোর করতে পারিনি, সেটা অলিম্পিকে করার। বিশ্বকাপে যে ভুলগুলো করেছি, সেটা যেন অলিম্পিকে না হয়।